The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

ওয়ান হেলথের পৃথিবীতে সবার জন্য চাই নিরাপদ খাদ্য

মোতালেব হোসাইন, যবিপ্রবিঃ নিরাপদ খাদ্য বর্তমান সময়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্য খাওয়া জরুরি নয়, জরুরী নিরাপদ খাদ্য খাওয়া। অনিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণই নয় দেহে রোগ বাসা বাঁধারও অন্যতম কারণ। উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে নিরাপদ খাদ্য পৌছানোর জন্য প্রত্যেকেরই বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন থেকে শুরু করে খাদ্য গ্রহণ পর্যন্ত নানাভাবে খাদ্য দূষিত হয়ে থাকে। মানুষ এ খাবার গ্রহণ করছে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছে।

অর্থনীতিতে, নিরাপদ খাদ্য ও উপযুক্ত পরিবেশ যে কোন ধরনের উন্নয়নের মাত্রা বৃদ্ধি করে ফলে এগুলো এড়িয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জন আদৌ সম্ভব নয়। তাই নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই নিরাপদ খাদ্যকে ভোক্তার অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর ব্যাত্যয় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণীত হয় এবং ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণীত হয়। কিন্তু এর সুষ্ঠু প্রয়োগ না হওয়া ও আমাদের সচেতনতার অভাবে অনিরাপদ খাদ্যের বেড়াজালে পড়তে হচ্ছে আমাদের।

নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সর্বস্তরের তথা তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতা বাড়ানো অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। নিরাপদ খাদ্য শুধু মাত্র মানুষের উপর নির্ভর করে না নির্ভর করে উৎপাদিত খাদ্যের উপর ও। ভক্ষণ যোগ্য উৎপাদিত ও পালিত প্রতিটি খাদ্য বস্তু হতে হবে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ। উৎপাদিত ও পালিত প্রতিটি খাদ্যবস্তুর সুস্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের। কারণ তারা যদি সুস্থ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় তবেই আমরা সুস্থ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার মতো নিরাপদ খাদ্য পাবো। উৎপাদিত ও পালিত খাদ্য বস্তু সুস্থ ও নিরাপদ হলেই আমরা নিরাপদে থাকতে পারবো এ নিভর্রশীলতার বিষয়টি কেই ওয়ান হেলথের পৃথিবী বলে বুঝানো হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আমরা যে মুরগি পালন করি সেই মুরগির মাংস খেয়ে আমারা নিজেদের আমিষের চাহিদা পূরণ করি।

আমাদের পালিত মুরগি কে যদি বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল সমৃদ্ধ ভারী ধাতব পদার্থ সীসা সহ বিভিন্ন রকমের অনিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে তাকে পালন করা হয় তাহলে কিন্তু তার থেকে আমরা যে মাংস ও ডিম পাব তা কিন্ত অনিরাপদ হিসেবে পাবো। এখন এই অনিরাপদ মাংস খেয়ে আমরা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার পাব না। বিষাক্ত মাংস ও ডিম একটা সময় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে তার জন্য আমাদের প্রথমে মুরগির স্বাস্থ্য কে নিরাপদ রাখতে হবে তবেই আমরা নিরাপদ খাদ্য পাব এজন্যই ওয়ান হেলথ এর পৃথিবী উল্লেখ করে সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্যের কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত আরো কিছু বিষয়ের উপর বিভিন্ন ধাপে উল্লেখ করে সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কিভাবে সর্বস্তরে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

>> প্রথমত খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশ্বব্যাপী চিন্তা করতে হবে-
প্রতিবছর বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করে বিভিন্ন রকমের অসুস্থতার শিকার হচ্ছে। প্রাণহানি,জটিল অসুস্থতা, অর্থনৈতিক ধ্বস সহ বিভিন্ন রকমের অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাই নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি শুধু ব্যক্তিগত চিন্তার বিষয় নয়, বিশ্বব্যাপী চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সরকার,খাদ্য উৎপাদনকারী,ভোক্তা সবাইকেই এখন এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে হবে।

>> উৎপাদনের শুরু থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য নিরাপদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে-

ফসল উৎপাদন করার সময় কোনরকম বিষাক্ত রকমের পদার্থ ব্যবহার থেকে উৎপাদনকারীদের বেঁচে থাকতে হবে এবং এ বিষয়ে সর্বাত্মক সচেতন হতে হবে।কৃষকরা কীটনাশক বর্জিত আধুনিক স্বাস্থ্যসম্মত কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করবে। কৃষকরা টেকসই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসম্মত ফসল উৎপাদন নয় পাশাপাশি পরিবার সংরক্ষণ ও ভূমিকা রাখবে। উৎপাদিত ফসল প্রক্রিয়াকরণের জন্য আধুনিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সকল প্রকার দূষিত পদার্থ অপসারণ করে প্যাকেজিং এবং সংরক্ষণের উপযুক্ত করবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সকল প্রকার খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ধাপগুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে। পরিবহন এবং ষ্টোরেজ ধাপেও সঠিক গুরুত্ব দিতে হবে।কোন অবস্থাতেই পরিবহনের সময় খাদ্য দূষিত হতে দেওয়া যাবে না।সঠিক উপায় খাদ্যকে করে রাখতে হবে এবং সঠিকভাবে নিরাপদ উপায়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

>> ভোক্তাদের সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে-

ভোক্তাদের সঠিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে করে সবাই নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হয়। ভোক্তাদের সচেতনতা অনেকাংশেই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখতে পারে। মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খাওয়া যাবেনা, খাদ্য খেয়ে যথাযথ প্রক্রিয়াকরণ এর মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে এ বিষয়ে ভোক্তাদের সচেতন করা জরুরী। খাবার গ্রহণের বিষয়ে তাদের সচেতন করতে হবে বিষাক্ত ও নিরাপদ খাদ্য থেকে বেঁচে থাকার পরামর্শ দিতে হবে।

>> প্রযুক্তি ব্যবহার হতে পারে নিরাপদ খাদ্যের হাতিয়ার- 

প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত ট্রেসিয়ের অনুমিতি দেওয়া। উন্নতমানের প্যাকেজিং সিস্টেম চালু করা। খাবারের গুণগতমান পর্যবেক্ষণ করার আধুনিক যন্ত্র সহ নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে প্রযুক্তি ব্যবহার করে।গবেষণার মাধ্যমে এ বিষয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করার চেষ্টা করতে হবে।

ওয়ান হেলথ এর পৃথিবীতে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য একটি সম্মিলিত অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা কোন বিকল্প বিষয় নয় এটি একটি প্রয়োজনীয়তা। এর জন্য প্রয়োজন সরকারের প্রতিশ্রুতি,খাদ্য উৎপাদনকারীদের পরিশ্রম, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির সতর্কতা এবং ভোক্তাদের সচেতনতা। টেকসই কৃষি প্রযুক্তি অনুশীলন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার মাধ্যমে, আমরা এমন একটি ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারি যেখানে প্রতিটি টেবিলের প্রতিটি খাবার শুধু সুস্বাদু নয় হবে নিরাপদ ।উৎপাদিত এবং পালিত প্রতিটি খাদ্যবস্তুর নেওয়া হবে যত্ন তাদেরকেও ভাবা হবে আমাদের স্বাস্থ্যেরই একটি অংশ।

আমরা যেহেতু আমাদের বিশ্বের অগণিত স্বাদের খাদ্য গ্রহণ করি, সেহেতু আসুন আমরা সম্মিলিতভাবে এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে কাজ করি যেখানে খাদ্যের আনন্দ নিরাপত্তার নিশ্চয়তার সাথে থাকবে এমন একটি ব্যাবস্থা যেখানে তারা কী খায় তার উৎস সম্পর্কে কাউকে চিন্তা করতে হবে না, কারণ নিরাপদ খাদ্য শুধু একটি পছন্দ নয়; এটি একটি মৌলিক অধিকার। নিরাপদ খাদ্য হোক সবার অঙ্গীকার।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.