২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালেয়ের ক্লাস শুরু হয়ে যাচ্ছে। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি পাশাপাশি ভর্তি প্রস্তুতি বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ভর্তিচ্ছুদের বড় একটি অংশ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সবার শেষে হত। এতে করে শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করত। তবে এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম সবার আগে শেষ হচ্ছে। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের কারণে অনেকের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, সেশনজট কমাতেই তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। করোনার কারণে এমনিতেই শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় সব বিশ্ববিদ্যারয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকলে বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হবে তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তি আবেদন শুরু হবে আগামী ২২ মে থেকে। ৯ জুন পর্যন্ত অনলাইনে প্রাথমিক আবেদন আবেদন করা যাবে। এরপর যাচাই-বাছাই ও ভর্তি শেষে ৩ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে। অন্যদিকে দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। এর মধ্যে ২২টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ৩ সেপ্টেম্বর। এছাড়া ৮টি কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৪ সেপ্টেম্বর। সে হিসেবে পাবলিকের পরীক্ষা শুরুর আগেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হচ্ছে।
মৃনাল কান্তি দেব নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ভর্তি বাতিল করবে। এতে করে একটি সিট খালি থাকবে। সেই শূন্য আসনে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে অস্বচ্ছল বা চান্স না পাওয়া কোনো শিক্ষার্থী। এজন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা উচিত।
মোছা. ছাবেকুন নাহার নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, করোনার কারণে এমনিতেই আমরা অনেক হতাশার মধ্যে আছি। তার উপর জুলাইয়ের ৩ তারিখ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর কথা শুনে হতাশা আরো বেরে গেছে। জাতীয়তে ভর্তি হতে বেশ ভালোই টাকা খরচ হয়। এক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর কেউ যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায় তাহলে সে ভর্তি বাতিল করে চলে যাবে। ফলে ওই শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সবার শেষে করা দরকার।
লামিয়া আকতার বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হবে ৩ জুলাই থেকে। আর অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সেপ্টেম্বরে। ফলে জাতীয়তে আবেদন ও ভর্তি হতে গিয়ে অনেকেই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে গেলে আমাদের বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়। সাথে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বাতিল করতেও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। কেননা ভর্তির সময় সব সার্টিফিকেট জমা রাখতে হয়। এসব ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সবার শেষে হওয়া দরকার।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, গত কয়েকবছর ধরে আমাদের ভর্তি কার্যক্রম সবার আগেই শেষ করা হচ্ছে। এতে করে আমাদের সেশনজট অনেক কমে গেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখন সেশনজট মুক্ত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পাবলিকে চান্স পেলে অনেকে ভর্তি বাতিল করে চলে যায়। তখন আসন ফাঁকা থাকা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর মাত্র দুই শতাংশ শিক্ষার্থী অন্যত্র চলে যায়। বাকি ৯৮ শতাংশই কোনো না কোনো ভাবে আমাদের সাথে যুক্ত থাকে। ফলে তেমন আসন ফাঁকা থাকছে না।