ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে কয়েক দশক ধরে চলে আসা ‘গেস্টরুম নির্যাতনের’ সংস্কৃতি বন্ধের দাবি উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদে। ওই দাবির সঙ্গে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনই একাত্মতা জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ঘ ইউনিট বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও পরিবেশ পরিষদে আলোচনা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন সামনে রেখে আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষে পরিবেশ পরিষদের সভা হয়। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামালসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদস্থ ব্যক্তি ও ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা অংশ নেন।
সভা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সভায় গণরুম-গেস্টরুম নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, আবাসন সংকটের কারণে গণরুম-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে ছাত্ররাজনীতিতেও অনেক নেতিবাচক উপাদান তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন হলে শিক্ষার্থী হিসেবেই থাকতে পারেন, পছন্দ অনুযায়ী ছাত্রসংগঠন বেছে নিতে পারেন, শিক্ষার্থী হিসেবে হলে সব রকম সুযোগ-সুবিধা ও সামাজিক-রাজনৈতিক অধিকার পান, এসব বিষয়ে প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি৷’
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে অননুমোদিত অতিরিক্ত ভ্রাম্যমাণ দোকান বন্ধ, ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে বহিরাগত যানবাহন চলাচল বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ‘ঘ’ ইউনিটের বিষয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।
সাদ্দাম হোসেন জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদ বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে বাংলাভাষী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষকেও যেন সম্পৃক্ত করে মহান শহীদ দিবস পালন করা হয়, পরিবেশ পরিষদে তাঁরা সেই দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৪৮ সালের যে দিনটিতে ভাষার দাবির আন্দোলন করতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, সেই ১১ মার্চকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
সভায় অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ পরিষদের সভায় আমরা হলগুলোতে চলা গেস্টরুম প্রথা বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছি। সভায় সব সংগঠনই এ ক্ষেত্রে একমত হয়েছে। গেস্টরুমে নির্যাতন কোনো সভ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি হতে পারে না। উপাচার্য বলেছেন, তিনিও এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত নন।’
সভায় অংশ নেওয়া এক ছাত্রনেতা জানান, ঘ ইউনিট বাতিলের বিষয়ে সভায় উপাচার্য বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি, শ্রম ও সময় লাঘবের জন্য ঘ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। এটি বাদ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২০ শতাংশ কাজ কমে আসবে। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে ভর্তি-প্রক্রিয়াসহ সব মিলিয়ে অতিরিক্ত যে এক মাস সময় লাগে, তা–ও বাঁচবে।
পরিবেশ পরিষদের সভা শেষে বিকেলে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর। সেখানেও ওপরের বিষয়গুলোই জানানো হয়।
পরিবেশ পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রশাসনের মিথস্ক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে সভা ডেকে পরিবেশ পরিষদে ছাত্রনেতাদের বক্তব্য শোনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।