ডেস্ক রিপোর্ট: স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে তা ফেরাতে কাজ করছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের অবৈধ সম্পদ জব্দ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঢাকা। দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত এবং লন্ডনে উপহার পাওয়া দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য গোপন করায় চাপের মুখে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছে যুক্তরাজ্যের সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রবিবার এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশ কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন- লন্ডনে টিউলিপের যে কোটি কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে তা বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থে কেনা। বাংলাদেশ এরই মধ্যে টিউলিপ, তার খালা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যাপক দুর্নীতির তদন্তে বহু দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
টিউলিপ সিদ্দিক দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি)। তিনি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। টিউলিপ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন সদস্য এবং সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গে তার নাম উঠে আসার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছে দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
প্রায় এক মাস আগে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তবে তিনি এখনও সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয়সহ বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।
সিটি মিনিস্টার পদ থেকে পদত্যাগের আগে লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের বাড়ি ও ফ্লাটসহ বেশ কয়েকটি সম্পত্তির কথা প্রকাশ্যে আসে। এর মধ্যে একটি ফ্লাট তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন তার খালা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী। তবে অভিযোগ ওঠে এই ফ্লাট প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে কেনা। টিউলিপ মূলত দূর্নীতির অর্থের ভাগ হিসেবে এটি পেয়েছেন।
বাংলাদেশে রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে টিউলিপ সিদ্দিক, তার খালা স্বৈরাচার শেখ হাসিনাসহ তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে, যা তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। লন্ডনে টিউলিপের মালিকানাধীন ৭ লাখ পাউন্ড মূল্যের ফ্ল্যাট সেই দুর্নীতির অর্থে কেনা হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে তদন্তে।
শেখ হাসিনা ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের পর গত ৫ আগস্ট বিতাড়িত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন এবং বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন। তার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন, গ্রেফতার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল। একই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের ধারণা, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থের মাধ্যমে লন্ডনে বিলাসবহুল সম্পত্তি কেনা হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট ছাড়াও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের উত্তর লন্ডনে সাড়ে ৬ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি ফ্ল্যাটসহ ১৫ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডের আরেকটি সম্পত্তি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।