জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিতে আসা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
রোববার বেলা ১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দেওয়ার সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সহায়তায় তাকে আটক করে প্রশাসন। আটক হওয়া ছাত্রলীগ কর্মীর নাম শরীফুল ইসলাম সোহান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৯ ব্যাচের এবং আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২ টা থেকে সোহানের পরীক্ষা শুরু হয়। এ খবর শুনে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা হলে গিয়ে তার পরীক্ষা আটকানোর কথা বললে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান তাকে পরীক্ষা শেষ করার সুযোগ দিতে বলেন। তবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে পরীক্ষার মধ্যেই ধরে ফেলেন। পরে প্রক্টরের উপস্থিতিতে তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
দর্শন বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সাকিব হাসান বলেন, ‘আমরা খবর পাই ৪৯ ব্যাচের ছাত্রলীগ কর্মী সোহান ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা দিতে এসেছে। বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগের হামলাকারীদের যে লিস্ট করা হয়েছিল সেখানে তার নাম ও ছবি আছে। আমরা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিভাগে যাই এবং বিভাগের চেয়ারম্যান স্যারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলি। প্রত্যক্ষভাবে হামলায় জড়িত থাকার পরেও সে কীভাবে পরীক্ষায় বসতে পারে এর যৌক্তিকতা জিজ্ঞাসা করি। পরবর্তী প্রক্টর স্যার আসে এবং তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আমাদের প্রশ্ন হলো পরীক্ষার দেওয়ার সাথে অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কিত। এতে হলের প্রভোস্ট, বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষর লাগে। তারা কীভাবে এরকম একজন চিহ্নিত হামলাকারীকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? হামলাকারীর তো জেলখানায় থাকার কথা। তার পরিচয় শিক্ষকদের কাছে স্পষ্ট হওয়ার পরেও তাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে অপরাধীরা ছাড়ও পেয়ে যাচ্ছে।’
এ সময় উপস্থিত শাখা ছাত্রদলের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম এই প্রশাসন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পার হয়ে যাওয়ায় পরেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার গণঅভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা থেকে আমরা একে একে হামলাকারীদের আইনের হাতে তুলে দিচ্ছি। ছাত্রদলে অনুপ্রবেশকারী একটা অংশও অপরাধীদের শেল্টার দিচ্ছে। আমরা চাই, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি সবার যেন জিরো টলারেন্স থাকে।’
শিক্ষকদের ইন্ধনের বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মো. জামাল উদ্দীন বলেন ‘কে পরীক্ষা দিতে পারবে, কে দিতে পারবে না এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয় নি। ছাত্রলীগ কর্মীদের পরীক্ষায় দেওয়া না দেওয়া বিষয়েও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয় নি। এছাড়া আমি ব্যাক্তিগতভাবে সবাইকে চিনি না যে কারা কারা হামলার সঙ্গে জড়িত। তাই এমনটি হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘গত জুলাই মাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা অভিযুক্তদের যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি, সেই প্রতিবেদনে সোহানের নাম আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও দাবির প্রেক্ষিতে আমরা তাকে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি। তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছি।’
এর আগে, গত ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সময় শরিফুল ইসলাম সোহান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়।