দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে আসা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে আজ পাঁচটি অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
অভিযান ০১: নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারী এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু সদস্যদের বিরুদ্ধে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন, স্মার্ট এনআইডি কার্ড প্রিন্টসহ জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত অন্যান্য সেবার নামে ঘুস লেনদেন করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ আগারগাঁওস্থ নির্বাচন কমিশন ভবনে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যগণ ছদ্মবেশে সেবাগ্রহীতা সেজে তথ্য সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশন অফিসের আশেপাশের কম্পিউটার দোকানদার এবং ভ্রাম্যমান দালাল চক্র কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে কাজ করিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সত্যতা পায়। এ সময় দুইজন দালালকে হাতেনাতে ধরা হয় এবং নিয়মবহির্ভূত কাজের সাথে জড়িত উক্ত অফিসের দুইজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অভিযানকালে জানা যায়, অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন হতে একটি তদন্ত করা হয়েছে, যাতে কমিশন ও প্রকল্পের কয়েকজন কর্মচারীর জড়িত থাকার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। দুদক টিম এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অভিযান ২: নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগে গোপালগঞ্জ জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের শুরুতে গোপনে রোগী সেজে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের ভিডিও ধারণসহ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অতঃপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সেবাগ্রহীতা ও মিডিয়াসহ আউটডোর টিকিট কাউন্টারে তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করে টিকিট বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও পরিদর্শনকালে টিমের নিকট উক্ত হাসপাতালে (১) টিকিট কাউন্টারে অতিরিক্ত ফি আদায়, (২) বিনা অনুমতিতে ডাক্তারগণের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, (৩) দীর্ঘ ৮-১০ বছর ধরে এমআরই, সিটি স্ক্যান মেশিন অচল থাকায় জনদুর্ভোগ, (৪) স্টোর রেজিস্ট্রার হালনাগাদ না রাখার সুযোগে বিভিন্ন অনিয়ম, (৫) পুলিশ কেস সংক্রান্ত মেডিকেল সনদ নিয়ে বাণিজ্য, (৬) স্টোরে রক্ষিত কম্বল রোগীদের বিতরণ না করা, (৭) ইসিজি মেশিন এবং ট্রলি ব্যবহারকারীদের থেকে অর্থ আদায় করা, প্রভৃতির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ -এর তত্ত্বাবধায়ক অভিযানে উদ্ঘাটিত তথ্যের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে দুদক টিমকে অবহিত করেন। অভিযানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনাপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অভিযান ৩: সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড -এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে বিধি বহির্ভূতভাবে ওভারটাইম বাবদ অর্থ প্রদান করে রাষ্টীয় অর্থের অপচয় করার অভিযোগ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, সিলেট হতে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে উক্ত কার্যালয়ের নভেম্বর-২০২৪ মাসের কর্মচারীদের বেতন বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ১৯৫ জন কর্মচারী কর্মরত থাকলেও প্রকতৃপক্ষে বেতন ও অধিকাল ভাতা ২২২ জন কর্মচারীর অনুকূলে প্রদান করা হয়েছে। জুলাই-২০২৪ হতে নভেম্বর-২০২৪ পর্যন্ত কর্মচারীদের বেতন বাবদ মোট ২,৩৫,১১,৫২৬/-টাকা প্রদান করা হয়েছে এবং অধিকাল ভাতা বাবদ মোট ২,৭১,৮৬,৬২১/-টাকা প্রদান করা হয়েছে। পরিলক্ষিত হয়, মূল বেতনের চেয়ে অধিকাল ভাতার পরিমাণ অনেক বেশি। অধিকন্তু অধিকাল ভাতা প্রদানের কোন রেজিস্ট্রার পাওয়া যায়নি। এছাড়া টিম জানতে পারে, ২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড তাদের কর্মচারীদের অধিকাল ভাতা বাবদ মোট ২,১০,৫৭,৯৮১/- টাকা অতিরিক্ত প্রদান করার ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বিধায় অডিট আপত্তি প্রদান করা হয়েছে, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। অভিযানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনাপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অভিযান ৪: বিআরটিএ, রংপুর-এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ড্রাইভিং লাইসেন্স, লার্নার কার্ড, ফিটনেস সনদ ও অন্যান্য সেবা প্রদানে ঘুস গ্রহণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুর কর্তৃক অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে এনফোর্সমেন্ট টিম ছদ্মবেশে সেবাগ্রহীতাদের নিকট থেকে অভিযোগের বিষয়ে তথ্যাবলি সংগ্রহ করে। অভিযানকালে দুইজন দালালকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে দুদক টিম। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর মাধ্যমে দালালদের অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া অভিযান পরিচালনাকালে বিআরটিএ, রংপুর হতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র/তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে রেকর্ডপত্র/তথ্যাদি যাচাইয়ের আলোকে কমিশনে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
অভিযান ৫: উপজেলা পোস্ট অফিস, তানোর, রাজশাহী –এর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গ্রাহকের সঞ্চয়ের টাকা প্রদান না করে আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রাজশাহী কর্তৃক উপজেলা পোস্ট অফিস, তানোর, রাজশাহীতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। টিম উপজেলা পোস্ট অফিস, তানোর, রাজশাহী অফিসে বর্তমানে কর্মরত পোস্টমাস্টার এবং কয়েকজন গ্রাহকের সাথে কথা বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক পোস্টমাস্টার কর্তৃক গ্রাহকের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে মর্মে জানতে পারে। অভিযোগের বিষয়ে চলমান তদন্তের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনাপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।