The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪

নিটারিয়ান এবং বাংলার ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ

বাংলার ইতিহাস হাজার বছরের। বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখ এবং পহেলা বৈশাখ দিয়েই বাংলা বছর শুরু হয়। বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি অনুষদের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাভারের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ (নিটার) এর শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখ নিয়ে লিখেছেন। চলুন পড়ে আসা যাক!

পয়লা বৈশাখের যতো কিছু

পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শুভ নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সার্বজনীন উৎসব।

ইতিহাস: হিন্দু সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বারটি মাস অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এই সৌর পঞ্জিকার শুরহত গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন বাংলা শুভ নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আর্তব উৎসব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। তখন এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ। প্রযুক্তির প্রয়োগের যুগ শুরু না হওয়ায় কৃষকদের ঋতুর উপরই নির্ভর করতে হত। ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। আকবরের সময় কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাঠের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে। আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়নি।

বাংলাদেশে বাংলা শুভ নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উদযাপন: নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিয় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং মোটমুটি সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোন খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানারকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। এর মধ্যে থাকে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা কিংবা কুস্তির। বাংলাদেশে এরকম কুস্তির সবচেয়ে বড় আসরটি হয় ১২ বৈশাখ, চট্টগ্রাম-এর লালদিঘী ময়দান-এ। এটি জব্বারের বলি খেলা নামে পরিচিত।

ছায়ানটের বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট-এর গানের মাধ্যমে নতুন বছরের সূর্যকে আহবান। পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মিলত কন্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহবান জানান। স্থানটির পরিচিতি বটমূল হলেও প্রকৃত পক্ষে যে গাছের ছায়ায় মঞ্চ তৈরি হয় সেটি বট গাছ নয, অশ্বত্থ গাছ । ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্থানি শাসকগোষ্ঠির নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা।

মঙ্গল শোভাযাত্রা: ঢাকার বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রার জন্য বানানো হয় রং-বেরঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিলিপি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখের উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ।

বউমেলা: ঈশা খাঁর সোনারগাঁয় ব্যতিক্রমী এক মেলা বসে, যার নাম ‘বউমেলা’। জয়রামপুর গ্রামের মানুষের ধারণা, প্রায় ১০০ বছর ধরে পয়লা বৈশাখে শুরু হওয়া এই মেলা পাঁচ দিনব্যাপী চলে। প্রাচীন একটি বটবৃক্ষের নিচে এই মেলা বসে, যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পুজো হিসেবে এখানে সমবেত হয়। বিশেষ করে কুমারী, নববধূ, এমনকি জননীরা পর্যন্ত তাঁদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এই মেলায় এসে পূজা-অর্চনা করেন।

ঘোড়ামেলা: এ ছাড়া সোনারগাঁ থানার পেরাব গ্রামের পাশে আরেকটি মেলার আয়োজন করা হয়। এটির নাম ঘোড়ামেলা। লোকমুখে প্রচলিত জামিনী সাধক নামের এক ব্যক্তি ঘোড়ায় করে এসে নববর্ষের এই দিনে সবাইকে প্রসাদ দিতেন এবং তিনি মারা যাওয়ার পর ওই স্থানেই তাঁর স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হয়। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে স্মৃতিস্তম্ভে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একটি করে মাটির ঘোড়া রাখে এবং এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। এ কারণে লোকমুখে প্রচলিত মেলাটির নাম ঘোড়ামেলা।

পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের বর্ষবরণ: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান তিনটি ক্ষুদ্রজাতিস্বত্তা রয়েছে যাদের প্রত্যেকেরই বছরের নতুন দিনে উৎসব আছে। ত্রিপুরাদের বৈশুখ, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব। বর্তমানে তিনটি জাতিস্বত্ত্বা একত্রে এই উৎসবটি পালন করে। যৌথ এই উৎসবের নাম বৈসাবি। উৎসবের নানা দিক রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো মার্মাদের পানি উৎসব।

মোঃ আরাফাত হোসেন রাফি, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটার।

সংস্কৃতির প্রতিফলন : পহেলা বৈশাখের বৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসব 

বাংলা নববর্ষ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় ও সার্বজনীন উৎসব। বাংলাদেশে বসবাসকারী সকল ধর্মের মানুষের এ এক মিলন উৎসব। বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখ, এই বৈশাখ মাসের প্রথম দিন যাপিত হয় বলে বাংলা নববর্ষের অপর নাম ‘পহেলা বৈশাখ’। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের বাঙালিরা এই দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সুখময় ও সমৃদ্ধকর হয়। বাংলা নববর্ষের ইতিহাস এখনাে সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও পণ্ডিত মনে করেন মুঘল সমাট আকবর চন্দ্র হিজরি সনের সঙ্গে ভারতবর্ষের সৌর সনের সমন্বয় করে ১৫৫৬ সাল বা ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন চালু করেন। বাংলা সন চালু হওয়ার পর নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়। নবাব এবং জমিদারেরা খাজনা আদায়ের উদ্দেশ্যে চালু করেন ‘পুণ্যাহ’। জমিদারি না থাকায় এখন তা লুপ্ত। পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল হালখাতা। এদিনে গ্রাহকেরা দোকানিদের বাকির টাকা মিটিয়ে দিতেন। তবে বর্তমানে বাংলা নববর্ষের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলাে বৈশাখী মেলা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৈশাখী মেলা উদযাপিত হয়। ঢাকার রমনার বটমূলে বসে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলা। এখানে লাখাে মানুষের সমাবেশ ঘটে। মঙ্গল শােভাযাত্রার মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পুরাে এলাকাজুড়ে বহুবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে যে মেলা হয় তাতে বিশেষভাবে স্থান পায় কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, গম্ভীরা গান, পুতুল নাচ, নাগরদোলাসহ নানা আনন্দ আয়ােজন। বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসীরাও তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে বর্ষবরণ করে। তাদের এই উৎসবকে বলে ‘বৈসাবি’। বাংলা নববর্ষে পান্তা ও ইলিশ মাছ খাওয়া শহরবাসী বাঙালিদের ফ্যাশনের বিষয় হয়ে উঠেছে । বস্তুত বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব। এদিনে বাঙালি নিজস্ব সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। শুধু বছরের প্রথম দিন নয়, সারা বছর ধরে যদি বাঙালি এই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট হয় তবে বাঙালি সংস্কৃতি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতিতে পরিণত হবে। আর বাংলা নববর্ষ হবে সেই সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রধান উৎসব।

নাফিস ইরাম, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটার।

বাংলা নববর্ষ: বৈশাখের বাতাসে বাঙালি সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন

পহেলা বৈশাখ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পালিত উৎসব যা সমস্ত বাঙালির জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে । পহেলা বৈশাখ বাংলা সালের প্রথম দিন, যা বাংলা নববর্ষের শুরু হিসাবে মন্থন করা হয়। প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল (বৈশাখ মাসের প্রথম দিন) উদযাপিত হয়। এটি বাংলা সালের নতুন আগমন ও বার্ষিকীকরণ উপলক্ষে পালন করা হয়। পহেলা বৈশাখে মানুষরা নতুন আশা, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের কামনা করে এবং বিভিন্ন ধরণের উৎসব এবং অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। এটি পৌরাণিক ও ঐতিহাসিকভাবে বাংলা সংস্কৃতির গৌরবময় অংশ হিসাবে গণ্য । বাংলা নববর্ষ বাংলা সংস্কৃতির পরিচয় অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরে। এর মাধ্যমে বাঙালি জাতির ইতিহাস , সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক পরিচয় প্রকাশ পায়। পহেলা বৈশাখে বাঙালিরা নতুন শুরু, উৎসাহ, শুভেচ্ছা, এবং সমৃদ্ধির আশা নিয়ে নিজেদের পুনরায় উদ্বুদ্ধ করে। বাঙালিরা নতুন কাপড়, রঙের খেলা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পুরোনো বছরের দুঃখ কষ্টকে ভুলে আসন্ন নতুন দিনগুলোর মঙ্গল কামনায় বরণ করে নেয় নতুন বছরকে।

বাঙালিয়ানার ঐতিহ্যে পহেলা বৈশাখ শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, বরং এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং জীবনধারার একটি সম্মিলিত প্রকাশ। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের সামাজিক মূল্যবোধ, আত্মপরিচিতি, এবং সম্প্রীতির গভীরতা গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। পহেলা বৈশাখের সকাল শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী প্রভাত ফেরি এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়। এই শোভাযাত্রাগুলি মানবতার ঐক্য, সম্প্রীতি এবং শান্তির বার্তা বহন করে। এই দিনে পুরুষেরা পাঞ্জাবি এবং ধুতি পরে এবং নারীরা লাল-সাদা শাড়ি , মুক্তা , কাঠ বা সোনার গহনা পরে থাকেন। হিন্দু সম্প্রদায় শাড়ির সাথে মিল রেখে শাঁখা পলা ইত্যাদি পরে। এই পারম্পরিক পোশাক বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক বহন করে। পহেলা বৈশাখের আরেকটি অংশ হলো বিশেষ খাবার এবং মিষ্টান্ন। পান্তা-ইলিশ, ভর্তা বিভিন্ন রকমের, এবং মিষ্টান্ন যেমন পায়েস, রসগোল্লা ইত্যাদি এই দিনের খাবারের তালিকায় শীর্ষে থাকে।

ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘হালখাতা’ বা নতুন হিসাবের বই খোলার প্রথা একটি বিশেষ আর্থিক অনুষ্ঠানের দিন হিসেবে পালিত হয়। হালখাতা মূলত নতুন হিসাব বই খোলার এবং পুরনো হিসাব সমাপ্তির অনুষ্ঠান, যা সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য আকর্ষণের লক্ষ্যে করা হয়। এই দিনে, ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান এবং ব্যবসার প্রতিষ্ঠানকে আলপনা, ফুল এবং বেলুন দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। নতুন খাতা খোলা হয় এবং গ্রাহকদের মিষ্টি ও উপহার দিয়ে বরণ করা হয়। গ্রাহকেরা নতুন খাতায় তাদের নাম লিখিয়ে, পুরনো হিসাব পরিষ্কার করে নতুন বছরের শুভ সূচনা করেন। হালখাতার এই প্রথা ব্যবসায়ী ও গ্রাহকের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি করে এবং আর্থিক সততা ও সৌজন্যের মূল্যবোধকে সমৃদ্ধ করে।

সামিহা জান্নাত, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটার।

আদি পরিচয় পহেলা বৈশাখ

বাঙালিয়ানার আদি পরিচয় পহেলা বৈশাখ। প্রতিবছর এই বিশেষ দিনটিকে নিয়ে কেন্দ্র করে বাঙালির মনে থাকে এক অদম্য উচ্ছ্বাস।

ছোটবেলা আমি পহেলা বৈশাখ কাটাতাম এক অন্য আঙ্গিকে। প্রতিবছর স্কুলে অনুষ্ঠান হতো। সেখানে অংশগ্রহণ, মেলায় যাওয়া, মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাওয়া, বন্ধু এবং পরিবারের সাথে পান্তা ইলিশ খাওয়া, ঘোরাফেরা এভাবেই দিন কাটত। মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাওয়া ছিল পহেলা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই শোভাযাত্রায় নানা ধরনের প্রতিমা, মানুষের সমাহার থাকে বরাবরের মতোই অনন্য। আমি সাধারণ বন্ধুদের সাথে শোভাযাত্রায় যাই। বিকালে পরিবারের সাথে বেড়াতে যেতাম। আমাদের এলাকায় বৈশাখী মেলা বসে। সেখানে নানা ধরনের খেলনা, নাগরদোলা ইত্যাদি দেখা যায়। নানা ধরনের দেশি খাবার,পিঠা ইত্যাদির আসর বসে। পহেলা বৈশাখে আমরা সবাই নিজের ব্যস্ততা ভুলে গিয়ে আনন্দে মেতে উঠি। আশা করি এবারও তার ভিন্ন হবে না।

বাঙালির ঐতিহ্য হাজার বছরের। আমাদের শিকড় আমাদের শেখায় আতিথেয়তা, সৌহার্দ্য, ভালোবাসা, সম্মান এবং পারিবারিক মূল্যবোধ। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ যেন আমাদের নিজেদের অস্তিত্বকে মনে করিয়ে দেয়। দেশ-বিদেশের সকল বাঙালিকে একটি শুভ বছর এবং পহেলা বৈশাখের শুভকামনা জানাই।

এম.এম মোহতাসীম শাহারিয়ার, ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটার।

পহেলা বৈশাখ : বাংলা সংস্কৃতির উৎসব

পহেলা বৈশাখ বাংলা সংস্কৃতির একটি অপরিসীম উৎসব, যা বঙ্গবঙ্গীয় সমাজের জীবনে অবিচ্ছিন্ন অংশ। এই উৎসবের আয়োজন বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, যার অনুষ্ঠান আমাদের সাংস্কৃতিক এবং ধার্মিক ঐতিহ্যে অভিনব গতি দেয়। পহেলা বৈশাখ উৎসবে মানুষেরা নতুন আশা, সংকল্প, উদ্যাপন, ও সম্মানের সাথে এক নতুন বছরে প্রবেশ করে।

পহেলা বৈশাখে শহর ও গ্রামের উদ্যোগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। লোকেরা রঙিন প্রহরে নতুন বছরের স্বাগত জানায়, এবং হাজার হাজার লোক পথ বাঁধে বাংলার প্রাণ্ত থেকে থাকে। প্রধান ধার্মিক আয়োজন হিসেবে পহেলা বৈশাখে লোকেরা রাস্তা, গলি, ও প্রধান স্থানে পুজা করে, সংগীত ও নৃত্যের অনুষ্ঠান করে।

পহেলা বৈশাখ একটি মেলা ও খাদ্য উৎসবের সময়ও। লোকেরা বাজারে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে এসে উৎসবের ভিন্ন ভিন্ন আচরণ সম্পর্কে মজা করে। খাবারের বিশেষ গরম পোলাও, মিষ্টি, ফুচকা, চটপটি, পানি পুরি ইত্যাদি মেলার প্রধান আকর্ষণ হয়।

সার্বিক দৃষ্টিতে, পহেলা বৈশাখ একটি উৎসবের এবং উদ্যোগের সময়। এটি বাংলা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ও একতা স্বরূপ কে প্রকাশ করে, এবং মানুষের মধ্যে আত্মীয়তা ও সম্মানের ভাবনা সৃষ্টি করে।

সানজিদ হোসেন, ডিপার্টমেন্ট অফ ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটার। 

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.

  1. প্রচ্ছদ
  2. ক্যাম্পাস
  3. নিটারিয়ান এবং বাংলার ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ

নিটারিয়ান এবং বাংলার ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ

বাংলার ইতিহাস হাজার বছরের। বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখ এবং পহেলা বৈশাখ দিয়েই বাংলা বছর শুরু হয়। বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি অনুষদের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাভারের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ (নিটার) এর শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখ নিয়ে লিখেছেন। চলুন পড়ে আসা যাক!

পয়লা বৈশাখের যতো কিছু

পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শুভ নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সার্বজনীন উৎসব।

ইতিহাস: হিন্দু সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বারটি মাস অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এই সৌর পঞ্জিকার শুরহত গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন বাংলা শুভ নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আর্তব উৎসব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। তখন এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ। প্রযুক্তির প্রয়োগের যুগ শুরু না হওয়ায় কৃষকদের ঋতুর উপরই নির্ভর করতে হত। ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। আকবরের সময় কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাঠের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে। আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়নি।

বাংলাদেশে বাংলা শুভ নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উদযাপন: নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিয় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং মোটমুটি সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোন খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানারকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। এর মধ্যে থাকে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা কিংবা কুস্তির। বাংলাদেশে এরকম কুস্তির সবচেয়ে বড় আসরটি হয় ১২ বৈশাখ, চট্টগ্রাম-এর লালদিঘী ময়দান-এ। এটি জব্বারের বলি খেলা নামে পরিচিত।

ছায়ানটের বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট-এর গানের মাধ্যমে নতুন বছরের সূর্যকে আহবান। পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মিলত কন্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহবান জানান। স্থানটির পরিচিতি বটমূল হলেও প্রকৃত পক্ষে যে গাছের ছায়ায় মঞ্চ তৈরি হয় সেটি বট গাছ নয, অশ্বত্থ গাছ । ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্থানি শাসকগোষ্ঠির নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা।

মঙ্গল শোভাযাত্রা: ঢাকার বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রার জন্য বানানো হয় রং-বেরঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিলিপি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখের উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ।

বউমেলা: ঈশা খাঁর সোনারগাঁয় ব্যতিক্রমী এক মেলা বসে, যার নাম ‘বউমেলা’। জয়রামপুর গ্রামের মানুষের ধারণা, প্রায় ১০০ বছর ধরে পয়লা বৈশাখে শুরু হওয়া এই মেলা পাঁচ দিনব্যাপী চলে। প্রাচীন একটি বটবৃক্ষের নিচে এই মেলা বসে, যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পুজো হিসেবে এখানে সমবেত হয়। বিশেষ করে কুমারী, নববধূ, এমনকি জননীরা পর্যন্ত তাঁদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এই মেলায় এসে পূজা-অর্চনা করেন।

ঘোড়ামেলা: এ ছাড়া সোনারগাঁ থানার পেরাব গ্রামের পাশে আরেকটি মেলার আয়োজন করা হয়। এটির নাম ঘোড়ামেলা। লোকমুখে প্রচলিত জামিনী সাধক নামের এক ব্যক্তি ঘোড়ায় করে এসে নববর্ষের এই দিনে সবাইকে প্রসাদ দিতেন এবং তিনি মারা যাওয়ার পর ওই স্থানেই তাঁর স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হয়। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে স্মৃতিস্তম্ভে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একটি করে মাটির ঘোড়া রাখে এবং এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। এ কারণে লোকমুখে প্রচলিত মেলাটির নাম ঘোড়ামেলা।

পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের বর্ষবরণ: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান তিনটি ক্ষুদ্রজাতিস্বত্তা রয়েছে যাদের প্রত্যেকেরই বছরের নতুন দিনে উৎসব আছে। ত্রিপুরাদের বৈশুখ, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব। বর্তমানে তিনটি জাতিস্বত্ত্বা একত্রে এই উৎসবটি পালন করে। যৌথ এই উৎসবের নাম বৈসাবি। উৎসবের নানা দিক রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো মার্মাদের পানি উৎসব।

মোঃ আরাফাত হোসেন রাফি, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটার।

সংস্কৃতির প্রতিফলন : পহেলা বৈশাখের বৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসব 

বাংলা নববর্ষ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় ও সার্বজনীন উৎসব। বাংলাদেশে বসবাসকারী সকল ধর্মের মানুষের এ এক মিলন উৎসব। বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখ, এই বৈশাখ মাসের প্রথম দিন যাপিত হয় বলে বাংলা নববর্ষের অপর নাম ‘পহেলা বৈশাখ’। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের বাঙালিরা এই দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সুখময় ও সমৃদ্ধকর হয়। বাংলা নববর্ষের ইতিহাস এখনাে সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও পণ্ডিত মনে করেন মুঘল সমাট আকবর চন্দ্র হিজরি সনের সঙ্গে ভারতবর্ষের সৌর সনের সমন্বয় করে ১৫৫৬ সাল বা ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন চালু করেন। বাংলা সন চালু হওয়ার পর নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়। নবাব এবং জমিদারেরা খাজনা আদায়ের উদ্দেশ্যে চালু করেন ‘পুণ্যাহ’। জমিদারি না থাকায় এখন তা লুপ্ত। পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল হালখাতা। এদিনে গ্রাহকেরা দোকানিদের বাকির টাকা মিটিয়ে দিতেন। তবে বর্তমানে বাংলা নববর্ষের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলাে বৈশাখী মেলা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৈশাখী মেলা উদযাপিত হয়। ঢাকার রমনার বটমূলে বসে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলা। এখানে লাখাে মানুষের সমাবেশ ঘটে। মঙ্গল শােভাযাত্রার মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পুরাে এলাকাজুড়ে বহুবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে যে মেলা হয় তাতে বিশেষভাবে স্থান পায় কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, গম্ভীরা গান, পুতুল নাচ, নাগরদোলাসহ নানা আনন্দ আয়ােজন। বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসীরাও তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে বর্ষবরণ করে। তাদের এই উৎসবকে বলে ‘বৈসাবি’। বাংলা নববর্ষে পান্তা ও ইলিশ মাছ খাওয়া শহরবাসী বাঙালিদের ফ্যাশনের বিষয় হয়ে উঠেছে । বস্তুত বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব। এদিনে বাঙালি নিজস্ব সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। শুধু বছরের প্রথম দিন নয়, সারা বছর ধরে যদি বাঙালি এই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট হয় তবে বাঙালি সংস্কৃতি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতিতে পরিণত হবে। আর বাংলা নববর্ষ হবে সেই সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রধান উৎসব।

নাফিস ইরাম, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটার।

বাংলা নববর্ষ: বৈশাখের বাতাসে বাঙালি সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন

পহেলা বৈশাখ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পালিত উৎসব যা সমস্ত বাঙালির জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে । পহেলা বৈশাখ বাংলা সালের প্রথম দিন, যা বাংলা নববর্ষের শুরু হিসাবে মন্থন করা হয়। প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল (বৈশাখ মাসের প্রথম দিন) উদযাপিত হয়। এটি বাংলা সালের নতুন আগমন ও বার্ষিকীকরণ উপলক্ষে পালন করা হয়। পহেলা বৈশাখে মানুষরা নতুন আশা, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের কামনা করে এবং বিভিন্ন ধরণের উৎসব এবং অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। এটি পৌরাণিক ও ঐতিহাসিকভাবে বাংলা সংস্কৃতির গৌরবময় অংশ হিসাবে গণ্য । বাংলা নববর্ষ বাংলা সংস্কৃতির পরিচয় অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরে। এর মাধ্যমে বাঙালি জাতির ইতিহাস , সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক পরিচয় প্রকাশ পায়। পহেলা বৈশাখে বাঙালিরা নতুন শুরু, উৎসাহ, শুভেচ্ছা, এবং সমৃদ্ধির আশা নিয়ে নিজেদের পুনরায় উদ্বুদ্ধ করে। বাঙালিরা নতুন কাপড়, রঙের খেলা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পুরোনো বছরের দুঃখ কষ্টকে ভুলে আসন্ন নতুন দিনগুলোর মঙ্গল কামনায় বরণ করে নেয় নতুন বছরকে।

বাঙালিয়ানার ঐতিহ্যে পহেলা বৈশাখ শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, বরং এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং জীবনধারার একটি সম্মিলিত প্রকাশ। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের সামাজিক মূল্যবোধ, আত্মপরিচিতি, এবং সম্প্রীতির গভীরতা গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। পহেলা বৈশাখের সকাল শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী প্রভাত ফেরি এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়। এই শোভাযাত্রাগুলি মানবতার ঐক্য, সম্প্রীতি এবং শান্তির বার্তা বহন করে। এই দিনে পুরুষেরা পাঞ্জাবি এবং ধুতি পরে এবং নারীরা লাল-সাদা শাড়ি , মুক্তা , কাঠ বা সোনার গহনা পরে থাকেন। হিন্দু সম্প্রদায় শাড়ির সাথে মিল রেখে শাঁখা পলা ইত্যাদি পরে। এই পারম্পরিক পোশাক বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক বহন করে। পহেলা বৈশাখের আরেকটি অংশ হলো বিশেষ খাবার এবং মিষ্টান্ন। পান্তা-ইলিশ, ভর্তা বিভিন্ন রকমের, এবং মিষ্টান্ন যেমন পায়েস, রসগোল্লা ইত্যাদি এই দিনের খাবারের তালিকায় শীর্ষে থাকে।

ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে 'হালখাতা' বা নতুন হিসাবের বই খোলার প্রথা একটি বিশেষ আর্থিক অনুষ্ঠানের দিন হিসেবে পালিত হয়। হালখাতা মূলত নতুন হিসাব বই খোলার এবং পুরনো হিসাব সমাপ্তির অনুষ্ঠান, যা সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য আকর্ষণের লক্ষ্যে করা হয়। এই দিনে, ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান এবং ব্যবসার প্রতিষ্ঠানকে আলপনা, ফুল এবং বেলুন দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। নতুন খাতা খোলা হয় এবং গ্রাহকদের মিষ্টি ও উপহার দিয়ে বরণ করা হয়। গ্রাহকেরা নতুন খাতায় তাদের নাম লিখিয়ে, পুরনো হিসাব পরিষ্কার করে নতুন বছরের শুভ সূচনা করেন। হালখাতার এই প্রথা ব্যবসায়ী ও গ্রাহকের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি করে এবং আর্থিক সততা ও সৌজন্যের মূল্যবোধকে সমৃদ্ধ করে।

সামিহা জান্নাত, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটার।

আদি পরিচয় পহেলা বৈশাখ

বাঙালিয়ানার আদি পরিচয় পহেলা বৈশাখ। প্রতিবছর এই বিশেষ দিনটিকে নিয়ে কেন্দ্র করে বাঙালির মনে থাকে এক অদম্য উচ্ছ্বাস।

ছোটবেলা আমি পহেলা বৈশাখ কাটাতাম এক অন্য আঙ্গিকে। প্রতিবছর স্কুলে অনুষ্ঠান হতো। সেখানে অংশগ্রহণ, মেলায় যাওয়া, মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাওয়া, বন্ধু এবং পরিবারের সাথে পান্তা ইলিশ খাওয়া, ঘোরাফেরা এভাবেই দিন কাটত। মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাওয়া ছিল পহেলা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই শোভাযাত্রায় নানা ধরনের প্রতিমা, মানুষের সমাহার থাকে বরাবরের মতোই অনন্য। আমি সাধারণ বন্ধুদের সাথে শোভাযাত্রায় যাই। বিকালে পরিবারের সাথে বেড়াতে যেতাম। আমাদের এলাকায় বৈশাখী মেলা বসে। সেখানে নানা ধরনের খেলনা, নাগরদোলা ইত্যাদি দেখা যায়। নানা ধরনের দেশি খাবার,পিঠা ইত্যাদির আসর বসে। পহেলা বৈশাখে আমরা সবাই নিজের ব্যস্ততা ভুলে গিয়ে আনন্দে মেতে উঠি। আশা করি এবারও তার ভিন্ন হবে না।

বাঙালির ঐতিহ্য হাজার বছরের। আমাদের শিকড় আমাদের শেখায় আতিথেয়তা, সৌহার্দ্য, ভালোবাসা, সম্মান এবং পারিবারিক মূল্যবোধ। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ যেন আমাদের নিজেদের অস্তিত্বকে মনে করিয়ে দেয়। দেশ-বিদেশের সকল বাঙালিকে একটি শুভ বছর এবং পহেলা বৈশাখের শুভকামনা জানাই।

এম.এম মোহতাসীম শাহারিয়ার, ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটার।

পহেলা বৈশাখ : বাংলা সংস্কৃতির উৎসব

পহেলা বৈশাখ বাংলা সংস্কৃতির একটি অপরিসীম উৎসব, যা বঙ্গবঙ্গীয় সমাজের জীবনে অবিচ্ছিন্ন অংশ। এই উৎসবের আয়োজন বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, যার অনুষ্ঠান আমাদের সাংস্কৃতিক এবং ধার্মিক ঐতিহ্যে অভিনব গতি দেয়। পহেলা বৈশাখ উৎসবে মানুষেরা নতুন আশা, সংকল্প, উদ্যাপন, ও সম্মানের সাথে এক নতুন বছরে প্রবেশ করে।

পহেলা বৈশাখে শহর ও গ্রামের উদ্যোগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। লোকেরা রঙিন প্রহরে নতুন বছরের স্বাগত জানায়, এবং হাজার হাজার লোক পথ বাঁধে বাংলার প্রাণ্ত থেকে থাকে। প্রধান ধার্মিক আয়োজন হিসেবে পহেলা বৈশাখে লোকেরা রাস্তা, গলি, ও প্রধান স্থানে পুজা করে, সংগীত ও নৃত্যের অনুষ্ঠান করে।

পহেলা বৈশাখ একটি মেলা ও খাদ্য উৎসবের সময়ও। লোকেরা বাজারে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে এসে উৎসবের ভিন্ন ভিন্ন আচরণ সম্পর্কে মজা করে। খাবারের বিশেষ গরম পোলাও, মিষ্টি, ফুচকা, চটপটি, পানি পুরি ইত্যাদি মেলার প্রধান আকর্ষণ হয়।

সার্বিক দৃষ্টিতে, পহেলা বৈশাখ একটি উৎসবের এবং উদ্যোগের সময়। এটি বাংলা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ও একতা স্বরূপ কে প্রকাশ করে, এবং মানুষের মধ্যে আত্মীয়তা ও সম্মানের ভাবনা সৃষ্টি করে।

সানজিদ হোসেন, ডিপার্টমেন্ট অফ ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটার। 

পাঠকের পছন্দ

মন্তব্য করুন