The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের গণগ্রেপ্তার সমর্থন করেন না সারজিস

এবার নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদের গণগ্রেপ্তার তিনি কখনোই সমর্থন করেন না।

সোমবার রাতে এ নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন সারজিস। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘একটা বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই।

বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ৷ যেহেতু অন্য ক্ষেত্র নিয়ে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া নেই তাই সেসব রিলেট না করার জন্য আহ্বান করছি ৷ ১ জুলাইয়ের পূর্বে এবং তারপর ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন চলমান ছিল সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল ৷ এই আন্দোলন মেইনলি ১৫ তারিখ পর্যন্ত হলের ছেলেমেয়েরাই নিয়ে গেছে।’

তিনি লিখেছেন, ‘যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা খুব ভালো করে জানেন, এখানে হলে থাকতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হতো। তাদের প্রগ্রাম, গেস্টরুম করতে হতো। গণরুমে থাকতে হতো ৷ সে জন্য হলে যারা থাকত তাদের অধিকাংশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই এসব করত।

এবার আরেক প্রসঙ্গে আসি। হলের যে ছাত্রলীগের কমিটি হতো এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কমিটিতে থাকত কিছু কারণে-যেমন : ১. ভালো একটা রুম বা সিট যেন পাওয়া যায়; ২. যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায়; ৩. অন্যরা যেন তার ওপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয় ৷ বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করত, অনেকে ভিন্ন মতের লোকদের ওপর অত্যাচার করত, অনেকে ক্যান্ডিডেট হতো, অনেকে একটু ফাপর নিয়ে চলত।’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক এই প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওই ৮০ শতাংশ স্টুডেন্ট ৷ তারা যেমন পোস্টেড ছিল, তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ প্রভাব রাখা ফেস ছিল ৷ তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই আদার্স নন-পোস্টেড সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং এ কারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি। এই পোস্টেড ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে নন-পোস্টেডরাও এক হয়ে বের হওয়ার সাহস করত না।

ওই গার্টস আর বোল্ডনেস এই ছেলেগুলাই শো করতে পারে ৷ হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এই পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিল বলেই ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিল এবং আন্দোলনটাকে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি। ১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনে না আসলে ৫ আগস্ট কখনো হতো কি না সে বিষয়ে ঢের সন্দেহ আছে।’
সারজিস লিখেছেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে হলের এই পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলব কিনা। উত্তর-ফেলব না। যারা ১ জুলাই থেকে আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে তারা তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।সত্য এটাই যে, এই আন্দোলন সফল না হলে এই ছেলেগুলোকে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো। বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেওয়া হতো।’

‘যে সিস্টেমের কারণে তাদেরকে বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে, পোস্ট নিতে হয়েছে; সেই সিস্টেমের জন্য দায়ী হলে আপনাদের সবাইকে দায়ী হতে হবে। কারণ আপনারা চুপ ছিলেন। হলে, ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন ওদের সাথে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাধা দেননি৷ ওরা যদি সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয় তবে আপনিও নিজের গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন। বরং যখনই সুযোগ হয়েছে ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। আর তখনো আপনি নিরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন।’

‘এই ৮০ শতাংশ ছেলের কেউ যদি পূর্বে কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার শাস্তি হোক, কেউ যদি পরে কোনো অন্যায়ে জড়িত হয় তবে তদন্ত সাপেক্ষে তারও শাস্তি হোক। কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণহারে গ্রেপ্তার হবে এটা কখনোই সমর্থন করি না। এটা হতে পারে না। যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সকল বাধা উপেক্ষা করে আমার সাথে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে তারা আমার ভাই। আমি তাদের পক্ষে থাকব। সত্য সত্যই। কে কী বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.