ইবি প্রতিনিধি : সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে সারাদেশে সংঘটিত কোটা বিরোধী আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করতে শুরু করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সেই সাথে কোটা সংস্কার ও বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে একমত প্রকাশ করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ জাহিদ মন্তব্য করেন, চাকুরিপ্রার্থী শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা, নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, নারী ইত্যাদি মিলিয়ে চাকুরিতে সর্বোচ্চ ১০% কোটা থাকতে পারে, এর বেশি নয়।
উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলাম তার ফেসবুক ওয়ালে বলেন, স্মার্ট রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে প্রশাসনিক সংস্কারের মতো কোটা ব্যবস্থায় সংস্কার আনা অতীব জরুরী।
শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভিডিও শেয়ার করে মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক রুহুল আমিন পোস্ট করেন, এ দেশের বুকে আবারো আঠারো আসুক নেমে!! সকল বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক!!
ফিন্যান্স এবং ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক মিঠুন বৈরাগী তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে কোটা পদ্ধতি অথবা কোটা সংস্কার (সর্বোচ্চ ১০%) করা অতীব জরূরী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। তিনি বলেন, ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতির জন্য আমি নিজেও ভুক্তভোগী ছিলাম।
প্রভাষক মিথুন বৈরাগীর পোস্টে সহমত পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন মন্তব্য করেন, এখন যেহেতু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান চাকরির পরীক্ষায় প্রায় পাওয়ায় যায়না। সেক্ষেত্রে ১০% থাকাই শ্রেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসানুল হক তার পোস্টে বলেন, লক্ষ কোটি বেকার যুবকের স্বপ্নকে বাঁচতে দিন। মেধাবীরাই দেশকে সবচেয়ে ভালো সেবা দিতে পারবে। এদেরকে বঞ্চিত করে কী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব? আপনার কি মনে হয়?
ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক রেহেনুমা তানজিন মেধা তার ফেসবুক ওয়ালে বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর চাকুরীতে মেধার পরিবর্তে কোটা ব্যবহার সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। যারা ভবিষ্যতে দেশের কান্ডারী হবে তাদের যথাযথ যোগ্যতা ও আত্মসম্মান না থাকলে দেশ কিভাবে চলবে তা সহজেই অনুমেয়। ২০১৮ সালে সরাসরি কোটা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। তখন দাবি আদায় হলেও আবার একই কারণে ছেলেমেয়েদের রাস্তায় নামতে দেখা সত্যি দু:খজনক। বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়তে প্রতিবন্ধী কোটা ব্যতিত সকল ক্ষেত্রে সকল কোটা বাতিল হোক।
ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ইয়ামিন মাসুম বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে কটুক্তি করবেন না। আশা করি মহামান্য আদালত এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ আপনাদের মতামতকে বিবেচনা করবেন। আমি ছাত্রদের অভিভাবক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে কোটা প্রথা বাতিল নয় তবে কোটা সংস্কারের পক্ষে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমিয়ে ১০% এবং অন্যান্য কোটা ৫% রাখা যেতে পারে। হোক পরিবর্তন।
ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শিবলী ফতেহ আলী চৌধুরী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, গণতান্ত্রিক দেশের যেকোনো ধরনের আন্দোলন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে যায়না। আমিও গণমানুষের চাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমার মতে, কোটা যদি সরকার রাখতেই চায়, তাহুএ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সহ সব ধরনের কোটা মিলে তা অবশ্যই মোট পদের ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়।
কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে মেধাবী ও যোগ্যদের দিয়ে। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সফল হোক, বৈষম্য নিপাত যাক।
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু হেনা মোস্তফা জামাল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিস্তারিত পোস্টে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমুহ ২ টি কারনে অচল এক কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন আর অন্যটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশন স্কীম নিয়ে। এই ২ টিই হচ্ছে অপরিকল্পিত ও তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্তের কারনে। সরকারী চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলনের মুখে সরকার ১ম শ্রেনীর চাকুরীতে কোটা সম্পূর্ন বাতিল করে দেন। এটা একটু সময় নিয়ে জনজরিপ করে সকলের অধিকার বা সংবিধানের আলোকে করা উচিত ছিল। আর এই কোটা ক্রটিপূর্ন এই কারনে যে মোট পদের বড় অংশ চলে যায় কোটায় , কারো কারো হিসেবে সেটা ৭০%। এটা কিভাবে সম্ভব! মোট চাকুরির সর্বোচ্চ ১৫% কোটা হতে পারে আমার মতে সেটা ১০% হওয়া উচিত। এই ১০% এর মধ্যে যারা কোটা পাবার যোগ্য তাদের মধ্যে দিতে হবে । যেমন ধরুন মোট আসন ১০০ টি , এর মধ্যে ১০ টি থাকবে কোটায় , এই ১০ টির ৩০% মানে ৩ টি এক কোটায় , ২০% মানে ২ টি আর এক কোটায় থকতে পারে। আর একটি বিষয় একজন মুক্তিযোদ্ধার মেধাবী , প্রতিষ্ঠিত ও যোগ্য সন্তান হিসেবে বলতে চাই, কোনভাবেই এই কোটা আন্দোলনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেন অসন্মান করা না হয়।
ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তার ফেসবুক ওয়ালে বলেন, রাষ্ট্রের উচিত মেধাবীদের মূল্যয়নের মাধ্যমে বুদ্ধিদীপ্ত জাতি গঠনে অধিকতর মনোযোগী হওয়া।
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা তার পোস্টে বলেন, আমার ব্যক্তিগত মত ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরিতে কোন ধরণের কোটা থাকা উচিত নয়, এক্ষেত্রে পরিপূর্ণ মেধার অধিকার থাকা উচিত। কোটা একধরনের সুবিধা, সুবিধারও মাত্রাজ্ঞান থাকতে হবে। জাতির সূর্যসন্তান, নমস্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত পদের (সকল শ্রেণির চাকরিতে) অতিরিক্ত ১০% বা যুক্তিসঙ্গত পদ সংরক্ষিত রাখা যেতে পারে। অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩য় বা ৪র্থ শ্রেণির চাকরির কোটা রাখা যায়। কারণ ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে সকলের সমান সুযোগ উন্মুক্ত।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ আজাদ, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বাকি বিল্লাহ, বিবিএ অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মানে কোটা সংস্কারের পক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেন।