গরমের সময় খুবই কমন একটি রোগের নাম হিট স্ট্রোক। অতিরিক্ত গরমে বেশিক্ষণ থাকা বা পরিশ্রম করলে এই সমস্যা হয়ে থাকে। অনেক সময় ধীরে ধীরে এটি ঘটে থাকে, যদিও হঠাৎ করে ঘটার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে ফলে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
হিট স্ট্রোক নিয়ে আজকের কলাম লিখেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী চিকিৎসক- ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন, এমবিবিএস(ঢাবি), এমএসসি(যুক্তরাজ্য), সিসিডি(বারডেম), ফেলোশিপ ইন ডায়াবেটিস (সিএমসি হাসপাতাল- ভারত)।
হিট স্ট্রোক কি?
হিট স্ট্রোক হচ্ছে যখন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়ার্স বা তার চেয়ে বেশি হয় এবং একইসাথে মস্তিষ্কে কিছু সমস্যা-যেমন অবচেতন হওয়া, অর্ধচেতন হওয়া কিংবা অজ্ঞান হওয়া। কারও এই অবস্থা সৃষ্টি হলে তাকে আমরা হিট স্ট্রোক বলি।
হিট স্ট্রোক এর ঝুঁকি বেশী কাদের?
সাধারণত দীর্ঘ সময় বাইরে কিংবা গরম পরিবেশে যারা কাজ করে থাকেন যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক,খেতমজুর ইত্যাদি, তাদের মধ্যে হিট স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। কেউ দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে আছে-তারও হিট স্ট্রোক হতে পারে। এতে মাথাঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন অনেকেই। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে মৃত্যুও হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বাচ্চা, বয়স্ক ও যারা ওবেসিটিতে ভুগছে তারা হিট স্ট্রোকে সহজেই আক্রান্ত হয়।
হিট স্ট্রোক কিভাবে হয়?
একটানা রোদে থাকলে গরমে ঘামের সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যায়। আমাদের শরীরের ভেতরে নানা রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে সব সময় তাপ সৃষ্টি হতে থাকে। ঘামের সাহায্যে সেই তাপ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়ায় ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হয়। ঘামের সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যাওয়াতে লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে শরীরকে করে তোলে অবসন্ন ও পরিশ্রন্ত। যখন আমাদের শরীর বেশি গরম হয়ে যায় তখন এক পর্যায়ে দেখা যায় আর শরীর থেকে ঘাম বের হচ্ছে না।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ কি কি?
হিট স্ট্রোক হওয়ার আগে শরীরের কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন:-
-তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়;
-মাথা ব্যথা হয়
-দুর্বল লাগে
-ঝিমুনি
-বমি বমি ভাব হয়।
-এছাড়াও চামড়ার রং লালচে হয়ে যায়।
-অনেক সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে -খিঁচুনি হতে পারে।
-হৃদপিন্ডের গতি বেড়ে যায়।
হিট স্ট্রোক হলে করণীয় কী?
যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ফলে বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ১০০ জন হিট স্ট্রোক রোগীর মধ্যে ৩০ জন রোগী মারা যাচ্ছে। কারও হিট স্ট্রোক হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। তবে হিট স্ট্রোক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির আগে রোগীর জন্য প্রাথমিকভাবে যা করণীয় তা হচ্ছে:
-রোগীকে অপেক্ষাকৃত শীতল কোনো স্থানে নিয়ে যেতে হবে
-ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বা বাতাস করতে হবে।
-ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে।
-মুখে যদি রোগী খেতে পারে সেক্ষেত্রে প্রচুর পানি বা খাবার স্যালাইন পান করাতে হবে।
-কাঁধে-বগলে অথবা কুঁচকিতে বরফ দিতে হবে
তারপর যতদ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
-হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসক স্যালাইন দেয়াসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
হিট স্ট্রোক থেকে প্রতিরোধের উপায়: গরমের দিনে কিছু নিয়ম মেনে চললে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচা যায়-
● ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, হালকা রঙের সুতির কাপড় হলে ভালো
● যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন
● রোদে বাইরে যাওয়ার সময় টুপি, ক্যাপ অথবা ছাতা ব্যবহার করুন
● প্রচুর পরিমাণে পানি বা খাবার স্যালাইন অথবা ফলের রস পান করতে হবে
● রোদে দীর্ঘ সময় ঘোরাঘুরি করবেন না।
● গ্রীষ্মকালে তীব্র শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও হাসপাতালে ভর্তি করে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া গেলে বেশির ভাগ হিট স্ট্রোকের রোগীই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।