মোঃ তানজিদ হাসানঃ প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা আমরা জীবাশ্ম জ্বালানী ক্রয়ে ব্যয় করি। এই ব্যয় আমাদের শুধুমাত্র আমাদের ফরেইন রিজার্ভ কমিয়ে দিচ্ছে তা নয়, বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিবেশী কিংবা উন্নত দেশের কাছে আমাদের নির্ভরতা। কিন্তু আমরা কি পারি না এই নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের উদ্ভাবন শক্তি কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভর হতে? আমরা কি পারি না আগামীর প্রজন্মের জন্য আরেকটু সুন্দর পৃথিবী রেখে দিতে?
জীবাশ্ম জ্বালানী বলতে আমরা বুঝি কয়লা, তেল, গ্যাস ইত্যাদি। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই জীবাশ্ম জ্বালানীর চাহিদা মেটাতে আমরা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানী করে থাকি। আর বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ থাকলেও আগামী কয়েক দশক পরই এর ঘাটতি দেখা যাবে। আমরা কি আদৌ ভাবছি আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা কি রেখে যাব?
তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক যে নেতিবাচক প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি তার বড় একটি কারণ এই জীবাশ্ম জ্বালানী। গবেষণায় দেখা গেছে, জীবাশ্ম জ্বালানী পুড়িয়ে আমাদের বায়ুতে সর্বোচ্চ পরিমাণ কার্বণ নিঃসরণ করা হয়।
এক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে নবায়নযোগ্য শক্তি যা পরিবেশবান্ধব এবং কখনো ফুরিয়ে যাবেনা। এই শক্তির বিভিন্ন উৎস ব্যবহার করে আমরা যেমন স্বনির্ভরতা পেতে পারি, বায়ু দূষণ কমাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারি। এখন প্রশ্ন হলো, নবায়নযোগ্য শক্তি আমরা কিভাবে নিশ্চিত করতে পারি কিংবা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি আসলে কতটুকু উপযুক্ত?
নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো যেমন: সূর্যের আলো, বাতাস, তরঙ্গ, জোয়ার কিংবা ভূ-তাপ আমরা সরাসরি প্রকৃতি থেকেই পাই। মজার ব্যাপার হলো, এই পৃথিবী যতদিন আছে এই উৎসগুলো বিদ্যামান থাকবে। বর্তমানে ফিনল্যান্ড এ সবচেয়ে বেশী নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশেও আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে এই নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবস্থা করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ সোলার প্যানেল ব্যবহার করে আমরা সরাসরি সূর্যের আলো নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি কিংবা গ্রামীণ পরিবেশে বায়োমাস এর মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে পারি। তবে এই সম্ভাবনা বড় পরিসরে কাজে লাগাতে প্রয়োজন প্রান্তীয় জনগোষ্ঠী থেকে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস।
স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে প্রয়োজন নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন। সরকারি, বেসরকারি কিংবা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এই সম্ভাবনা নিয়ে মানুষকে জানাতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন কিংবা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যম কে এই নিয়ে আরো বেশী বেশী প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। আশা করি, এভাবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ‘’মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-২০৪১” এর সাথে তাল মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।