আশরাফুজ্জামান সরকার, গাইবান্ধাঃ গাইবান্ধায় কৃষকের রঙিন স্বপ্ন দোলা দিচ্ছে সরিষার ফুলের বাতাসে ৷ দেখে মনে হবে হলুদ রঙের শাড়ি পরে যেন কোন বিয়ের হলুদ সন্ধ্যা চলছে । পলাশবাড়ী উপজেলার দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে এমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে অহরহ।
পলাশবাড়ীর ৯ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সরিষার হলদে ফুলের ফসলে মাঠের পর মাঠ ছেঁয়ে গেছে । মাঠের দিকে তাকালে দিগন্তজুড়ে যেন হলুদ গালিচা বিছানো হয়েছে। চলতি মৌসুমে সরিষা চাষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা এবারও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত বছরে প্রায় ১৪৮৫ হেঃ জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে এবার ১৭৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে । কম খরচে অধিক লাভ, তাই সরিষা চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নলেয়া নদীর অববাহিকা সংলগ্ন জমির দিকে তাকালে মনে হয় ফসলের মাঠ যেন সেজেছে গাঁয়ে হলুদের সাজে। মাঠজুড়ে সরিষা ফুল দেখে মনে হবে এ যেন হলুদ রাজার দেশ। মৌমাছির মধু সংগ্রহের গুঞ্জনে মুখরিত অবারিত ফসলের মাঠ। সরিষার ফুলে বাতাসের দোলায় দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।
সরিষা চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। সরিষা চাষে সময় লাগে কম, খরচও কম, লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এতে করে কৃষকরা লাভবানের পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মিটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৯ ইউনিয়নে পতিত জমিতে বাড়তি লাভের আশায় সরিষা চাষ করেন তারা। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে অল্প সময়ে একই জমিতে দুটি ফসলের চাষে লাভবান হওয়া যায়। জমিতে সরিষা রোপণ করা থেকে পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ। সরিষার দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে ইরি বোরো চাষে খরচ করা যায় পাশাপাশি তাদের ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটানোও সম্ভব।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুইগ্রামের কৃষক মিতু মিয়া, আফরু, হাসেন আলী ও আজিজার বলেন, আমরা দুই বিঘা করে জমিতে সরিষা চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে দুই হাজার টাকা করে ব্যয় হয়েছে। আমবাড়ী উদয়সাগর গ্রামের শামিম আহমেদ বলেন প্রায় ৬ বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদ করেছি। সরিষার ক্ষেতে গেলে প্রাণটা ভরে যায়।
উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের মালিয়ানদহ গ্রামের সরিষাচাষি মানিক প্রধান চাষ করেছেন ২ বিঘা, কৃষক মুকুল মিয়া ৩ বিঘা, মাহবুবুর রহমান করেছেন ৪ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ।
তারা বলেন, আশা করছি ভালো ফলন হবে। এছাড়া বর্তমানে সয়াবিন তেলের দাম বেশি। তাই বিকল্প হিসেবে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারব। তা ছাড়া সয়াবিন তেলের চেয়ে সরিষার তেলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শর্মিলা শারমিন বলেন, তেল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা কৃষকদের সরিষা চাষ করতে প্রণোদনা দিচ্ছি ও কৃষকদের লাভের জন্য দুই ফসলি থেকে তিন ফসলি জমি তৈরি করতে উৎসাহিত করছি। এই লক্ষ্য নিয়েই ভোজ্য তেল বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি জানান, গত বছর আমার ব্লকে সরিষা ১৩৮ হেঃ হলেও এবারে ২৮৬ হেঃ জমিতে প্রায় দ্বিগুন সরিষা উৎপাদন হয়েছে।