The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪

উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ইউজিসির ২০ সুপারিশ

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মানোন্নয়নে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, গবেষণার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশিন (ইউজিসি)। এ ছাড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে সমন্বিত উদ্যোগ ও বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিং নির্ধারণী সূচকের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশও করা হয়েছে।

সরকারের “স্ট্র্যাটেজিক প্লান ফর হায়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ: ২০১৮, ২০৩০”-এর অংশ হিসেবে ইউজিসি’র উদ্যোগে তিনটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

ইউজিসি তাদের ‘৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২০’-এ সুপারিশগুলো করে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে ইউজিসি থেকে সদ্যবিদায়ী ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘তিনটি ইনস্টিটিউশন করার যে সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলোর জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করছি আমরা। অটোনোমাস বডি না হলে এসব প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ের জন্য ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি ও গবেষকদের জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির সুপারিশ করা হয়েছে। কীভাবে গবেষকদের দেশে ধরে রাখা যায় সে সংক্রান্ত পলিসি তৈরি করা, কীভাবে গবেষকরা সুবিধা পেতে পারেন; এসব নিয়েও কাজ করবে ওই ইনস্টিটিউশন।’

ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়, উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধি ও সমুন্নত রাখতে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির অভিন্ন নীতিমালা করতে হবে।

তালিকার প্রথম সুপারিশে বলা হয়, ‘দেশে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মোট ১৫৭টি। ইউজিসির দায়িত্ব ও কর্তব্য আগের তুলনায় বেড়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারকি করা কমিশনের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনের আইনি ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাও অনুভূত হচ্ছে। কাজেই, আর্থিক বরাদ্দ ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ কমিশনকে আইনগতভাবে শক্তিশালী করা জরুরি।’

অন্যান্য সুপারিশ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কোলাবরেশন বাড়ানোতে হবে। এর জন্য চাহিদাভিত্তিক, উদ্দেশ্যমুখী ও ফোকাস নির্ভর প্রোগ্রাম চালুর মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারে।
উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত ও গবেষণাগারের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য আর্থিক বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি ফলাফলভিত্তিক কারিকুলাম প্রণয়ন করা যেতে পারে।
দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন সমুন্নত রেখে একটি ‘সমন্বিত আর্থিক নীতিমালা ও ম্যানুয়েল’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
দেশে উচ্চশিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ। যা যেকোনও বিচারেই অপ্রতুল। কাজেই, জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষায় খাতওয়ারি বরাদ্দ চিহ্নিত করে অর্থ সংস্থানের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
২০২২ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
অস্তিত্বহীন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাখা ক্যাম্পাসে’ ব্যাচেলর, মাস্টার্স, এমফিল— এমনকি পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তির খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। সাময়িক অনুমতিপত্র বা সনদপত্র নেওয়া ছাড়া বাংলাদেশে কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন বা পরিচালনাও অবৈধ। সীমিত পরিসরে স্বনামধন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তবে এদের তদারকির জন্য বিদ্যমান বিধিমালা ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৪’-এর সংশোধন প্রয়োজন।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলোচনা করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে বিশ্ববিদ্যালয়। যার ফলে পণ্যের উৎকর্ষ বাড়ানো ও তাতে বৈচিত্র্য আনা যাবে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণায় প্লেজিয়ারিজম বা চৌর্যবৃত্তির ঘটনা বাড়ছে। এ নিয়ে কোনও নীতিমালা না থাকায় গবেষণাপত্র চুরির বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা যাচ্ছে না। তাই প্লেজিয়ারিজম বিষয়ক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি আবশ্যক।
তদুপরি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণাকর্মের মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য সফটওয়্যার (যেমন: Turnitin) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং বাংলা গবেষণাপত্র ও পুস্তকের জন্যও এ ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উদ্যোগ নিতে পারে।
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সান্ধ্যকালীন/উইকেন্ড/এক্সিকিউটিভ প্রভৃতি কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের কোর্স বন্ধ হওয়া জরুরি। তবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী ইউজিসি’র পূর্বানুমোদনক্রমে ডিপ্লোমা, শর্ট কোর্স, ভোকেশনাল ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করা যেতে পারে।
দেশে উচ্চশিক্ষা স্তরে চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রিকে ‘প্রান্তিক ডিগ্রি হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকায় ডিগ্রি অর্জনের পর সরাসরি মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ না রেখে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া রাখা যেতে পারে। এ নিয়েও সরকার একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সকল প্রকার যৌন হয়রানি, ইভটিজিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বুলিং, র‍্যাগিং, মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মুক্তবুদ্ধি চর্চার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো জরুরি। কোনও শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে সংবিধান পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে না পারে, সেজন্য নীতিমালা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিতে পারে সরকার।
সশরীরে ও অনলাইনে উভয় ধারার সমন্বয়ে ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকল্পে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.

  1. প্রচ্ছদ
  2. ক্যাম্পাস
  3. উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ইউজিসির ২০ সুপারিশ

উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ইউজিসির ২০ সুপারিশ

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মানোন্নয়নে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, গবেষণার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশিন (ইউজিসি)। এ ছাড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে সমন্বিত উদ্যোগ ও বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিং নির্ধারণী সূচকের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশও করা হয়েছে।

সরকারের “স্ট্র্যাটেজিক প্লান ফর হায়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ: ২০১৮, ২০৩০”-এর অংশ হিসেবে ইউজিসি’র উদ্যোগে তিনটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

ইউজিসি তাদের ‘৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২০’-এ সুপারিশগুলো করে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে ইউজিসি থেকে সদ্যবিদায়ী ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘তিনটি ইনস্টিটিউশন করার যে সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলোর জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করছি আমরা। অটোনোমাস বডি না হলে এসব প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ের জন্য ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি ও গবেষকদের জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির সুপারিশ করা হয়েছে। কীভাবে গবেষকদের দেশে ধরে রাখা যায় সে সংক্রান্ত পলিসি তৈরি করা, কীভাবে গবেষকরা সুবিধা পেতে পারেন; এসব নিয়েও কাজ করবে ওই ইনস্টিটিউশন।’

ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়, উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধি ও সমুন্নত রাখতে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির অভিন্ন নীতিমালা করতে হবে।

তালিকার প্রথম সুপারিশে বলা হয়, ‘দেশে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মোট ১৫৭টি। ইউজিসির দায়িত্ব ও কর্তব্য আগের তুলনায় বেড়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারকি করা কমিশনের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনের আইনি ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাও অনুভূত হচ্ছে। কাজেই, আর্থিক বরাদ্দ ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ কমিশনকে আইনগতভাবে শক্তিশালী করা জরুরি।’

অন্যান্য সুপারিশ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কোলাবরেশন বাড়ানোতে হবে। এর জন্য চাহিদাভিত্তিক, উদ্দেশ্যমুখী ও ফোকাস নির্ভর প্রোগ্রাম চালুর মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারে।
উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত ও গবেষণাগারের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য আর্থিক বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি ফলাফলভিত্তিক কারিকুলাম প্রণয়ন করা যেতে পারে।
দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন সমুন্নত রেখে একটি ‘সমন্বিত আর্থিক নীতিমালা ও ম্যানুয়েল’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
দেশে উচ্চশিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ। যা যেকোনও বিচারেই অপ্রতুল। কাজেই, জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষায় খাতওয়ারি বরাদ্দ চিহ্নিত করে অর্থ সংস্থানের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
২০২২ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
অস্তিত্বহীন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাখা ক্যাম্পাসে’ ব্যাচেলর, মাস্টার্স, এমফিল— এমনকি পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তির খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। সাময়িক অনুমতিপত্র বা সনদপত্র নেওয়া ছাড়া বাংলাদেশে কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন বা পরিচালনাও অবৈধ। সীমিত পরিসরে স্বনামধন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তবে এদের তদারকির জন্য বিদ্যমান বিধিমালা ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৪'-এর সংশোধন প্রয়োজন।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলোচনা করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে বিশ্ববিদ্যালয়। যার ফলে পণ্যের উৎকর্ষ বাড়ানো ও তাতে বৈচিত্র্য আনা যাবে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণায় প্লেজিয়ারিজম বা চৌর্যবৃত্তির ঘটনা বাড়ছে। এ নিয়ে কোনও নীতিমালা না থাকায় গবেষণাপত্র চুরির বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা যাচ্ছে না। তাই প্লেজিয়ারিজম বিষয়ক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি আবশ্যক।
তদুপরি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণাকর্মের মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য সফটওয়্যার (যেমন: Turnitin) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং বাংলা গবেষণাপত্র ও পুস্তকের জন্যও এ ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উদ্যোগ নিতে পারে।
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সান্ধ্যকালীন/উইকেন্ড/এক্সিকিউটিভ প্রভৃতি কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের কোর্স বন্ধ হওয়া জরুরি। তবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী ইউজিসি’র পূর্বানুমোদনক্রমে ডিপ্লোমা, শর্ট কোর্স, ভোকেশনাল ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করা যেতে পারে।
দেশে উচ্চশিক্ষা স্তরে চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রিকে ‘প্রান্তিক ডিগ্রি হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকায় ডিগ্রি অর্জনের পর সরাসরি মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ না রেখে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া রাখা যেতে পারে। এ নিয়েও সরকার একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সকল প্রকার যৌন হয়রানি, ইভটিজিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বুলিং, র‍্যাগিং, মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মুক্তবুদ্ধি চর্চার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো জরুরি। কোনও শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে সংবিধান পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে না পারে, সেজন্য নীতিমালা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিতে পারে সরকার।
সশরীরে ও অনলাইনে উভয় ধারার সমন্বয়ে ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকল্পে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে।

পাঠকের পছন্দ

মন্তব্য করুন