The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

রাবিতে ৭০ বছরে ৪০ শতাংশ আবাসিকতাও নিশ্চিত হয়নি

রাবি প্রতিনিধি : গত ৬ জুলাই ৭১ বছরে পদার্পণ করেছে উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ও বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণভোমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। গেল ৭০ বছরে মাত্র ৩৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ আবাসিকতা নিশ্চিত করতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আবাসনের এমন চরম সংকটের কারণে অধিকাংশ ছাত্রকেই অনাবাসিক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকাগুলোতে মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। বাইরে থাকার ভোগান্তির বিষয়ে তাদের একাংশ জানান, অতিরিক্ত ভাড়া ও নিরাপত্তাহীনতা তাদের ভোগান্তির প্রধান কারণ।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, ‘উন্নয়নমূলক কাজগুলো দ্রুতগতিতে বাস্তবায়ন করলে তাদের আবাসন সুবিধা কিছুটা নিশ্চিত হবে। একইসাথে আর্থিকভাবে তারা উপকৃত হবে। শতভাগ আবাসিকতার নিশ্চয়ন চায় শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গার কোনো অভাব নেই। আছে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব।’

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছে ২৬ হাজার ৩৭০ জন। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৭৭ জন ছাত্র ও ৯ হাজার ২৯৩ জন ছাত্রী আছে। আবাসন নিরসনে ছেলেদের জন্য ১১টি ও মেয়েদের জন্য ৬টি হল রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে ৫ হাজার ৪৬৯ জন ছেলে শিক্ষার্থী ও ৪ হাজার ২০৪ জন মেয়ে শিক্ষার্থী অবস্থা করছে। বাকি ১৬ হাজার ৬৯৭ জন শিক্ষার্থী আবাসিকতা পাইনি।

শিক্ষার্থীরা জানান, অনেকে আবাসিক হিসেবে হলে থাকলেও অনেক শিক্ষার্থীকেই গণরুমে থাকতে হয়। কয়েকটি গণরুমে গাদাগাদি করে থাকেন প্রায় দেড় হাজার ছাত্রী। এর মধ্যে মন্নুজান হলের চারটি গণরুমে দুই শতাধিক, তাপসী রাবেয়া হলের দুটি গণরুমে ২৮০ জন, খালেদা জিয়া হলের দুটিতে প্রায় ২০০, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একটিতে ২১০, বেগম রোকেয়া হলে পাঁচটিতে প্রায় ২৫০ ও রহমতুন্নেছা হলের কয়েকটি গণরুমে প্রায় ২৫০ জন ছাত্রী থাকেন। এদিকে মতিহার হলের একটি গণরুমে ৫০ জন ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলের দুইটিতে প্রায় ৪০ জন ছাত্র থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদের জন্য ১০ তলাবিশিষ্ট শহীদ এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান হল ও ছাত্রীদের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল নির্মিত হচ্ছে। হল দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানে দুই হাজার শিক্ষার্থী থাকতে পারবেন। যদিও তা মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় খুবই নগণ্য তবুও নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন হলে তারা উপকৃত হবেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যারা মেসে থাকেন তারা অধিকাংশই মেস বা বাড়িওয়ালাদের কাছে অমানবিক আচরণের শিকার হন। মেসে না থেকে উপায় নাই বলে মেস-বাসাওয়ালারা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে রাখছেন চড়া ভাড়া। অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়াসহ শিক্ষার্থীদের বাড়ছে মানসিক চাপ, হতাশা ও দুশ্চিন্তা। এই বয়সেও পরিবারের বোঝা হওয়ার কথা ভেবে আঁতকে উঠছেন অনেকে।

এদিকে এসব মেসে নেই কোনো নিরাপত্তা বলয়। গত ১১ মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর সংলগ্ন গেইটে শিক্ষার্থী ও বাজার কমিটির সাথে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাঁধে। সহিংস হয়ে ওঠে দুই পক্ষ। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা তান্ডব চালায় আশেপাশের মেসগুলোতে। আতঙ্কে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাইরে বের হতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে বেশি পীড়াদায়ক ছিল খাবার সংকট। অধিকাংশ মেসে রান্না বন্ধ হয়ে যায়। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে অভিভাবকদের। শুধু এই ঘটনাই না; আগেও এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এখানে।
শতভাগ আবাসিকতার ব্যবস্থা থাকলে এ সমস্ত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না বলে দাবি করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মো. আসলাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অধ্যায় হলো হল জীবন। কিন্তু আফসোস দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও হলে থাকার সুযোগ হচ্ছে না। হাজার-হাজার টাকা খরচ করে অনিরাপত্তার মধ্যে বাইরে থাকতে হচ্ছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের তুলনায় হলে সিট সংখ্যা একদমই সীমিত। যেগুলো আছে তাতেও আবার বিভিন্ন কোটা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৬৯৭ একর জমিনের উপর শতভাগ আবাসিকতার ব্যবস্থা করতে পারলেও রাবি কেন পারলো না আমার বুঝে আসে না। রাবি প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব ঘুচালেই এ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম বলেন, আবাসন সংকটের কারণে আমি ক্যাম্পাসের বাইরের এক মেসে থাকি। আবাসনের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থাকলে আমার হলে থাকার ইচ্ছ ছিল। কিন্তু তৃতীয় বর্ষে উঠেও আমি হলে সিট পাইনি। হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবে ৭০ বছরেও অর্ধশতাংশ আবিসকতার নিশ্চিত করতে পারেনি, শতভাগ তো কল্পনাতীত ব্যাপার।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সকল শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিকতা করে দেওয়াটাই আমাদের লক্ষ্য। শতভাগ আবাসিকতা হলে সবচেয়ে ভালো হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স হিসেবে আমাদের আরো হল হওয়ার দরকার ছিল। বিশেষ কিছু কারণে হয়তো সেটা সম্ভাব হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীকে এখনো ক্যাম্পাসের বাইরের কোনো মেসে থাকতে হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে। আর যাতে কোনো শিক্ষার্থীকে অনিরাপত্তায় ভুগতে না হয় তার জন্য আমরা সরকারকে জানিয়েছি যাতে আগামীতে আরো দুইটি হল প্রতিষ্ঠা করা যায়। তাহলে দ্রুতই আবাসিন সংকট নিরসন হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা নতুন করে দশ তালাবিশিষ্ট দুইটা হল প্রতিষ্ঠা করতেছি। যার ফলে অনেকটা আবাসন সংকট কমিয়ে আনবে। আমরা চাই আমাদের সকল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের ভিতরে আবাসিকভাবে অবস্থান করুক। তবে এখানে সরকার, ইউজিসি ও সংশ্লিষ্ট সকলের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.