মোঃ আমিনুর রহমানঃ পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পর আবাসনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। বেদখল হল উদ্ধারে জটিলতা থাকায় এবং বর্তমান ক্যাম্পাসে জায়গা না থাকায় ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের ঘোষণা আসে সে সময়।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায় সরকার।
অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, চিকিৎসা কেন্দ্র, সুইমিংপুল, লেক নির্মাণসহ উন্নতমানের ক্যাম্পাস তৈরির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেঘরিয়ার পশ্চিমদি মৌজায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক।
এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে কিন্তু সবে মাত্র হয়েছে সীমান প্রাচীর। শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে স্বপ্ন বুনতে আসে এখানে। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আবাসন সুবিধা না থাকায় তাদের যেতে হয় এক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। অধিকাংশ ছেলে -মেয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের। পুরান ঢাকা ব্যবসায়ীক এলাকা হওয়ায় এখানে একটু মাথা গুজতে গুনতে হয় ভালো অংকের টাকা। নিজের সেই খরচ যোগাতে হয় শিক্ষার্থীর নিজেকেই। কেউ টিউশন কেউ বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে কেউবা আবার পার্ট টাইম কোনো কাজ করে সেই খরচা চালিয়ে থাকে।
যা অনেক ক্ষেত্রে তাদের পড়াশোনার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যদি আবাসন সুবিধা থাকতো, অন্তত তারা এই নিশ্চতা পেতো যে , থাকার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে আমাকে লড়াই করতে হবে না। অনেকে মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়ে। অনেকে এই চাপ সহ্য করতে না পেরে নানা রকম মাদক, আইন বিরোধী কর্ম কান্ডে লিপ্ত হয়। এই আশা নিয়ে অনেকে ভর্তি হয়েছিলো নতুন ক্যাম্পাসে ১ টি বছর হলেও পড়াশোনা করবার সুযোগ পাবে। ঠিকাদারদের কাজের ধীরগতি, অন্যান্য জটিলতায় নতুন ক্যাম্পাস যেনো এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। কতো বছর লাগবে তার করা যাচ্ছে না অনুমান। অন্যদিকে বাজার মূল্যের গতি যেনো লাগাম বিহীন ঘোড়ার মতো ছুটেই চলেছে। নূন থেকে তেল, চাল থেকে ডাল। শিক্ষার্থীদের একমাত্র সম্বল ডিমের দাম বেড়েছে দ্বিগুন। পড়াশোনাতো পরের কথা টিকে থাকতেই করতে হচ্ছে যুদ্ধ। কিন্তু কোথাও যেনো কারো কোনো দায় নেই। এই অবহেলার যেনো কোনো সীমা নেই। যদিও সরকার এই পরিস্থিতিতে, তাদের এই সংগ্রাম করে বেচে থাকার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সুবিধা বঞ্চিত হলেও দেশ ও জাতীর সেবায় তারা অনেক এগিয়ে।
দেশের বিভিন্ন স্তরে তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। নতুন ক্যাম্পাসের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষার্থীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়/