The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক টুকরো কৃষ্ণচূড়ার স্বর্গ

সাকিবুল ইসলাম, জবি প্রতিনিধি: আকাশে জ্যৈষ্ঠের গনগনে সূর্য। কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস। প্রকৃতি যখন প্রখর রৌদ্রে পুড়ছে, কৃষ্ণচূড়া ফুল তখন সৌন্দর্যের বার্তা নিয়ে এসেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্যাম্পাসে। গ্রীষ্মের এই নিষ্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরেছে আপন মহিমায়। ক্যাম্পাস আসা শিক্ষার্থীদের সময়কে রাঙ্গিয়ে দিতেই হয়তো প্রকৃতির এ আয়োজন।

ক্যাম্পাসের বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, প্রশাসনিক ভবনের পাশে ডালপালা ছড়ানো বিশাল আকৃতির কৃষ্ণচূড়াগুলো সৃষ্টি করেছে রক্তিম বর্ণের এক মোহনীয়তা। ছোট্ট এ ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়াগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। ক্যাম্পাসে যেন লাল রঙে কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি, যে কারো চোখে এনে দেয় শিল্পের দ্যোতনা।

কবিগুরু রবি ঠাকুরের ভাষায়,
‘গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে
তোমার উত্তরী কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরি’

কাগজে-কলমে বসন্ত ঋতুরাজ হলেও মূলত পুষ্প উৎসবের ঋতু গ্রীষ্মকালকেও বলা যায়। এ মৌসুমে গাছে গাছে বাহারি রংয়ের যে উম্মাদনা, তা অন্য ঋতুতে প্রায় অনুপস্থিত। সত্যি, গ্রীষ্মের পুষ্পবীথির রং এতই আবেদনময়ী যে চোখ ফেরানো যায় না। গ্রীষ্মের পুষ্প তালিকায় প্রথম স্থান কৃষ্ণচূডার। ফুলটির রং এতই তীব্র যে অনেক দূর থেকে চোখে পড়ে, হঠাৎ দূর থেকে মনে হবে কৃষ্ণচূড়া শোভিত নির্মল পরিবেশে মাঝে মাঝে মনে হবে কৃষ্ণচূড়া গাছে যেন আগুন লেগেছে।

এ যেন মনে করিয়ে দেয় কবি শামসুর রাহমানের সেই অগ্নি ঝড়া কবিতা,

‘আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে
কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়-ফুল নয়, ওরা শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর। একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রঙ।’

সকালে গাছের নিচে কৃষ্ণচূড়ার ঝরে পড়া রক্তলাল পাপড়ি তৈরি করে এক পুষ্প শয্যা। সকাল থেকে সন্ধ্যা এসব গাছের নিচেই আড্ডায় মাতেন শিক্ষার্থীরা।

গবেষণা বলছে, কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত। এর আদি নিবাস আফ্রিকার মাদাগাস্কার। ১৮২৪ সালে সেখান থেকে প্রথম মুরিটাস, পরে ইংল্যান্ড এবং শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার ঘটে। এখন জন্মে আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে।

ধারণা করা হয়, কৃষ্ণচূড়া ভারত উপমহাদেশে এসেছে তিন থেকে চারশ’ বছর আগে। বহুকাল ধরে আছে বাংলাদেশে। তবে ফুলের নাম কী করে কৃষ্ণচূড়া হলো সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায় না। তবে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অবতার কৃষ্ণের নামে ফুলটির নামকরণ করা হয়েছে। একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে, কৃষ্ণের মাথায় চুলের চূড়া বাঁধার ধরনটির সঙ্গে ফুলটির বেশ মিল। সেখান থেকেই কৃষ্ণচূড়া। আবার উদ্ভিদবিজ্ঞানী, নিসর্গপ্রেমী কিংবা কবি সাহিত্যিকরাও এই নামকরণ করে থাকতে পারে।

কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর। যদিও তা কম লোকই জানেন, কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খোঁজে পাওয়া দায়। কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে অভ্যস্ত হলেও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া লাল, হলুদ ও সাদা রঙ্গেরও হয়ে থাকে।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী সন্ধি কুন্ডু বলেন, এই সময়টায় কৃষ্ণচূড়া ক্যাম্পাসে দেখা যায়,সবুজের মাঝে লাল সাথে কিছুটা হলুদের ছোঁয়া বিষয়টা আসলেই অনেক ভালো লাগে। এই ভালো লাগাটা আরো বেশি কাজ করে যখন দেখা যায় আাকাশে মেঘ করেছে আর বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিটা যেন ফুলের আর প্রকৃতির সৌন্দর্যটাকে অন্য একটা মাত্রায় নিয়ে যায়, যা যে কারো মন ভালো করে দিতে বাধ্য।

ক্যাম্পাসের ইসলামিক স্ট্যাডিস বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আফরোজা বলেন, গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যেও আনন্দ দেয় চোখ ধাঁধানো লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লাল কৃষ্ণচূড়া, এ যেন ফুল-পাতার এক নৈসর্গিক রাজ্য । বৃক্ষরাজির মধ্যে অনন্য আকর্ষণ এই কৃষ্ণচূড়া গাছ। এ যেন কৃষ্ণচূড়ার ক্যাম্পাস। গাছের নিচে কৃষ্ণচূড়ার ঝরে পড়া রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া তৈরি করে এক পুষ্প শয্যা, এর রক্ত বর্ণ রূপ, সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে বার বার।

জবির সাবেক শিক্ষার্থী ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিউটন হাওলাদার বলেন, আমাদের সময়ে কাটানো সময় গুলোতে যে বন্ধুরা ছিল তারা নেই। কিন্তু তাদের স্মৃতির সাথে জড়িত কৃষ্ণচূড়া গুলোই তাদের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.