জাবি প্রতিনিধিঃ বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।বর্সবরণ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত সবুজ শ্যামল ক্যাম্পাসটির চারুকলা বিভাগে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখ উৎযাপন কমিটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার সাজ-সজ্জা কমিটির আহ্বায়ক চারুকলা বিভাগের সভাপতি ফারহানা তাবাসসুম। শোভাযাত্রাটির মূলে অংশে থাকবে শান্তির প্রতীক ‘পায়রা’ ও বাংলা ঐতিহ্য মৃৎশিল্পের নিদর্শন হিসেবে দু’টি টেপা পুতুল।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের সামনে চারুকলার বিভাগের সামনে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। ভবনে ও এর আশপাশ ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা আঁকছেন ছোটবড় নানা আকৃতির পেঁচা, বাঘ, হাতি, ঘোড়ার আদলে মুখোশ। কাগজ, বাঁশ, বেতসহ নানা ক্রাফটসে রঙ-তুলির আঁচড়ে নিমেষেই ফুঁটিয়ে তুলছেন রঙিন সব অবয়ব, যেন বাঙালীর সাদাকালো-বেদনাবিধুর সংগ্রামী জীবনে শান্তি সমৃদ্ধির রঙিন জীবনের প্রত্যাশা। পুরাতন কলা ভাবনের সামনেই বিশালাকার পায়রার কাঠামো তৈরিতে ব্যস্ত কয়েকজন।
নববর্ষ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপাচার্যের শুভেচ্ছা বিনিময়, মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং সংগীত পরিবেশন ছাড়াসহ স্ব স্ব অনুষদ, বিভাগ, হল ও অফিস পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে।
বুধবার (১২ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১লা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) সকাল সোয়া আটটা থেকে সকাল সোয়া নয়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম নিজ বাসভবনে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের সাথে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
এরপর সকাল পৌনে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, অফিস, হল, জাবি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি, ছাত্র-ছাত্রী এবং মহিলা ক্লাব ও ক্যাম্পাসবাসীর অংশগ্রহণে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ভবন থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরুতে জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গান পরিবেশিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, হল ও অফিস নিজ নিজ উদ্যোগে ১লা বৈশাখ উদ্যাপনের কর্মসূচি পালন করবে।
এছাড়াও বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, মুখোশ পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করা যাবে না, তবে মুখোশ হাতে নেয়া যাবে। সেদিন কোনো রং ছিটানো যাবে না। কেউ রং ছিটালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ দিন দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মটর সাইকেল ব্যতিত ক্যাম্পাসে মটর সাইকেল প্রবেশ/চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বহিরাগতদের গাড়ি প্রবেশ/চলাচল সীমিত রাখা হবে এবং কেন্দ্রীয় মসজিদের পশ্চিমে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হবে।
ঢাকা শহরে অবস্থানরত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসা যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করা হবে। বাস প্রচলিত রুটে ছেড়ে আসবে।
এদিকে পহেলা বৈষাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম রেজা বলেন, এবারের প্রতিপাদ্য ‘বরিষ-ধরা মাঝে শান্তির বারি’র সাথে মিল রেখে আমরা শান্তির প্রতীক ‘পায়রা’ তৈরি করেছি। শোলাশিল্পের মাধ্যমে পায়রাটি তৈরি করা হয়েছে। আমাদের ঐতিহ্য মৃৎশিল্পের নিদর্শন হিসেবে দু’টি টেপা পুতুল তৈরি করা হয়েছে। সেই সাথে পেঁচা, বাঘ, হাতি, ঘোড়ার আদলে মুখোশ তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এবার চারুকলা বিভাগ থেকে আলাদা কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো করা হবে।