পবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের সাথে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুজিবুর রহমানের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় দেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত নয়নাভিরাম একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে স্থায়ীভাবে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং এই পর্যটন কেন্দ্র রক্ষায় করণীয় ও গুরুত্ব সম্পর্কে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়।
দীর্ঘ এ আলোচনায় স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য নিরাপত্তা, বাল্যবিবাহ রোধ, দ্বীপ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। একই সাথে চিহ্নিত সমস্যা সমূহের সমাধান এবং আগামীর পরিবেশ নিরাপত্তায় শিক্ষার্থী ও তরুন সমাজ কিভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে তা আলোচনা করা হয়। সভায় স্থানীয় প্রশাসন ও নেতৃবৃন্দ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় এ ধরণের কর্মতৎপরতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সভায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আবু তারেক সহ খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য যে, গত ১০ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত শেষ বর্ষের ইন কান্ট্রি ট্যুরে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা সেন্টমার্টিনে অবস্থান কালে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া জানানো হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক অপসারণ। উক্ত সভায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। এ সিদ্ধান্তটি কর্যকর হলে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য অনেকাংশেই রক্ষা পাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়াও জীবনযাপনে সেন্টমার্টিন দ্বীপে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছে স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন। যার মধ্যে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ না থাকা, দক্ষ চিকিৎসকের অভাব এবং শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যতম। সেন্টমার্টিনের পানি বেশীরভাগই লবণাক্ত হওয়ায় তা পান করার অনুপযোগী। তাই এ লবনাক্ত পানিকে বিশুদ্ধ করে খাবার উপযোগী পানি হিসেবে সরবরাহ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়েছে, এতে করে দ্বীপের মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত হবে। তাছাড়া বেশীরভাগ সময়ই এ দ্বীপে বসবাসরত মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকতে হয়। দ্বীপের মানুষের জন্য ২০ শয্যাবিশিষ্ট একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে একইসাথে শিশুদের সুশিক্ষায় বেড়ে উঠার জন্য সরকারি বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তাও উক্ত আলোচনায় উঠে আসে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিন সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সম্পদ। আমাদের এই পর্যটন শিল্প ও দ্বীপের জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হলে প্রত্যেকেরই যার যার জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
এছাড়াও সেন্টমার্টিন দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ দ্বীপ এবং দেশের সম্পদ উল্লেখ করে তিনি সেন্টমার্টিনকে পর্যটন উপযোগী করে গড়ে তুলার ও সংস্কারের দাবি জানান। আলোচনায় তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে দ্বীপের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করার আহ্বান জানান।
সভায় পবিপ্রবি’র সহযোগী অধ্যাপক আবু তারেক বলেন, যেহেতু আমাদের শিক্ষার্থীরা খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে দক্ষতা অর্জন করছে, সেহেতু সেন্টমার্টিনের জনমানুষের স্বাস্থ্য সচেতনায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে এই দ্বীপের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে সচেতন করতে শিক্ষার্থীদের পাঠানোর আশা ব্যক্ত করেন তিনি।