দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। নানা গৌরবোজ্জ্বল অতীত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ৭০ বছরে পদার্পণ করেছে আজ)।
দীর্ঘ ৬৯ বছরের পথ চলায় নিজস্ব আলোয় আলোকিত এ বিদ্যাপীঠ। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গৌরব ও ঐতিহ্য বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পরিসর। ১৯৫৩ সালে রোপণ করা বীজটি বতর্মানে বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।
শহীদ ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতি বিজড়িত দেশের শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠের রয়েছে গৌরব-ঐতিহ্যের সুদীর্ঘ ইতিহাস। ব্রিটিশ আমলে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। এই কলেজে আইন বিভাগসহ পোস্ট গ্রাজুয়েশন শ্রেণি চালু করা হলেও কিছুদিন পরেই সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তখনই রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ১৯৪৭ সালের দিকে রাজশাহীতে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়।
১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা। পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়। এভাবে একের পর এক আন্দালনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়। এই আন্দোলনে একাত্ম হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখ্শ।
অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস হয়। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইতরাৎ হোসেন জুবেরীকে সঙ্গে নিয়ে মাদার বখ্শ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এর পর শুরু হয় রাবির পথচলা।
বর্তমানে ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ১১৭৭ জন শিক্ষক ও ২০০০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৩৩০ জন (বিদেশি শিক্ষার্থী ৫৮ জন)। এর মধ্যে ছাত্র ২৫ হাজার ৫৭৯ জন ও ছাত্রী ১২ হাজার ৫৫১ জন। বর্তমানে ১২ অনুষদের অধীনে বিভাগ রয়েছে ৫৯টি। বেড়েছে অবকাঠামো। ১২টি একাডেমিক ভবনসহ বর্তমানে রাবির ছাত্রদের থাকার জন্য আবাসিক হল রয়েছে মোট ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ৬টি। এছাড়া গবেষক ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক ডরমেটরি।
সুদীর্ঘ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিয়ে অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন। দীর্ঘ এ সময়ে রাবি তৈরি করেছে ভাষা বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, ইতিহাসবিদ আব্দুল করিম, তাত্ত্বিক ও সমালোচক বদরুদ্দীন উমর, চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, মাসুম রেজা ও ক্রিকেটার আল আমিন হোসেনদের মতো অসংখ্য গুণীজনকে।
দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রাক্তণ সব শিক্ষার্থী, গবেষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণিল সাজসজ্জা থাকলেও সিলেটসহ দেশের অন্য জেলায় বন্যার্তদের কষ্টের কথা বিবেচনায় এবার জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন বাতিল করেছেন উপাচার্য। তবে বেশ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে প্রশাসন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন চত্বরে বুধবার (৬ জুলাই) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটি শুরু হবে। পরে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন অতিথিরা। উদ্বোধন শেষে বৃক্ষরোপণ এবং আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হবে।
পরে বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এক আলোচনা সভা হবে। এ সভায় আলোচক থাকবেন ষাটের দশকের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গণিতবিদ সুব্রত কুমার মজুমদার এবং বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কবি চৌধুরী জুলফিকার মতিন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।