৩০ নাকি ৩৫ ?
বয়স নয় দক্ষতা বাড়াতে হবে
সেশন জট কমাতে হবে
পরীক্ষা পদ্ধতিতে আনতে হবে বদল
শিক্ষাব্যবস্থাকে করতে হবে জীবনমুখী
সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য একজন আবেদনকারীর বয়স সর্বোচ্চ কত হতে পারে এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যাদের বয়স তুলনামূলক বেশি তারা চায় সরকারি চাকরীতে প্রবেশের সীমা ৩৫ হোক আবার যারা অল্প বয়সে পড়াশোনা শেষ করেছে তাদের চাওয়া ৩০ ই থাকুক।
এদিকে আমরা দেখি ,অনেক দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর থেকে ৪৫ বছর। এরমধ্যে ১৬২টি দেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর। কোনো কোনো দেশে এটি উন্মুক্ত। প্রতিবেশী অšতত ৮ দেশে এই বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪৫ বছর। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। আফগানিস্তানে বয়সসীমা ৩৫ বছর। আর মালদ্বীপে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরির আবেদন করা যায়।
শ্রীলঙ্কায় স্নাতক পাস করা বেকাররা সরকারের যেকোনো কর্মসূচির অধীনে ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারেন। আগে এই বয়সসীমা ছিল ৩৫ বছর। তবে সরকারি চাকরির সব ক্যাটাগরির জন্য এই বয়সসীমা প্রযোজ্য নয়।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর। পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যায়। তবে কোটার ক্ষেত্রে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারেন চাকরি প্রার্থীরা। তবে দেশটির বেলুচিস্তন রাজ্য সরকার বয়সসীমা ৪৩ বছর করেছে। আফগানিস্তানে বয়সসীমা ৩৫ বছর। আর মালদ্বীপে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়স পর্যšত সরকারি চাকরির আবেদন করা যায় । এটি মূলত সেশন জটের ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্টীর জন্য করা হয়েছিল।
সর্বশেষ, ১৯৯১ সালে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়। এরপর ২০১১ সালে অবসর গ্রহণের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ২০১১ সালে ছিল ৭০ বছর। তা এখন বেড়ে ৭৪ বছরের কাছাকাছি হয়েছে। এই যুক্তিতে চাকরির অবসরের বয়সও নতুন করে বাড়াতে চান অনেকে।
আবার উল্টো যুক্তিও আছে। অনেকে বলছেন, একটা সময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় চরম সেশন জট ছিল। তখন শিক্ষা জীবন শেষ হতে অনেক সময় লাগতো। ফলে অনেকেই পড়াশোনা শেষ কওে চাকরির আবেদনের বয়সসীমার একেবারে শেষ প্রাšেত চলে যেতেন। তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশন জট প্রায় নেই বললেই চলে। একজন শিক্ষার্থী নিদির্ষ্ট সময়ের মধ্যেই পড়াশোনা শেষ করে বের হতে পারেন। সুতরাং বয়স বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। সর্বশেষ, ১৯৯১ সালে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়। এরপর ২০১১ সালে অবসর গ্রহণের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ২০১১ সালে ছিল ৭০ বছর। তা এখন বেড়ে ৭৪ বছরের কাছাকাছি হয়েছে। এই যুক্তিতে
চাকরির অবসরের বয়সও নতুন করে বাড়াতে চান অনেকে।
এর কারন হলো, অনেকে মনে করেন , সরকারি চাকরি এ দেশে মর্যাদার, গর্বের। সরকারি চাকরি এ দেশে লোভনীয়।
সরকারি চাকরি মানে নিশ্চিন্ত একটা জীবন পার করে দেওয়া। সরকারি চাকরির কোনো খারাপ দিক নেই।
সরকারি চাকরির আগাগোড়া সব ভালো।
৩৫ কোন সমাধান হতে পারে না । কারণ, তরুণদের চাকরির সংকটের প্রধান কারণ কর্মসংস্থানের ঘাটতি ও চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার অভাব চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা নয়। ২০১৯ সালে বেসরকারি সংস্থা র্ব্যাক, বিআইজিডি ও র্ব্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাজরিপ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতায় অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের তরুণেরা। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করেও তাঁরা কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার চাকরির নিয়োগের সময়ে এই ব্যাপারটি দেখা যায়। তাই তরুণদের দক্ষ ও যোগ্য করে তোলার জন্য বাজারের চাহিদার দিকে নজর রেখে নানা ধরনের প্ির শক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ এখন একটি দারুন সময় পার করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় বয়স ২৭ বছর (গড় আয়ু নয়), ১৯৯০ সালে সেটি ছিল ১৭। জন্মহার নিয়ন্ত্রণ এবং আয়ু বৃদ্ধির ফলে বয়সের গড় বেড়েছে বলা যায়। এই বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তরুণদের নিয়োগ পরীক্ষার মধ্যেই ব্যস্থ রাখা ঠিক হবে না । বিসিএস পরীক্ষার আরেকটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি হচ্ছে। সেটি পিএসসি যেন আমলেই নিচ্ছে না। চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন মুখস্থনির্ভর হবে কেন? তরুণেরা চাকরির পরীক্ষার উপযোগী হয়ে ওঠার জন্য বসে বসে কি শুধু তথ্য মুখস্থ করবে?
আমার কথা সেটাই মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে এবং একটি গ্রহনযোগ্য সমাধান আমাদের সকলের কাম্য ।
লেখক : মো: নাঈমুর রহমান, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়