সানজিদা ইসলাম: “আমি স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়তাম। টাহার (টাকা) অভাবে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেইছে, মানুষে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবি হয়, মুই এগুলো হওয়ার স্বপ্ন দেহি না। কারণ আমার জন্ম এই পল্লীর ভেতরে। আমি আমার মায়ের পেশা গ্রহণ করতে চাই না। আমি চাই, এই অন্ধকার গলি থেকে বের হয়ে এমন কিছু হরতে, যাতে আমি আমার মা আর বোনরে নিয়ে ঠিকমতো দুইডা ভাত খাইতে পারি।”
কথাগুলো আকাশের দিয়ে তাকিয়ে কান্নাভেঁজা কণ্ঠে বলছিলেন পনের বছর বয়সী রুমী (ছদ্মনাম) নামের এক শিশু। তার জন্ম, বেড়ে ওঠা এখানে, এই পতিতাপল্লীতে।
অন্ধকার এই গলির মতো এখানের প্রতিটা মানুষের জীবনের গল্পটাও শুধুই অন্ধকার।
পতিতাপল্লীতে জন্ম নেওয়া শাকিলা, সাইফান , তামান্না’দের (ছদ্মনাম) নিয়ে সমাজের অনেকেই নানারকম বাজে মন্তব্য করেন। সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এই শিশুরা মূলধারায় ফিরতে তো পারেই না, বরং অপরাধ জগতে পা দিয়ে হারিয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় ফুলের মতো জীবনগুলো।
পতিতাপল্লীর যৌন কর্মীদের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুদের কাছে অজানাই রয়ে যায় পিতার আসল পরিচয়। আর এটাই যেন তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ।পতিতাপল্লীতে জন্ম নেওয়া আরেক শিশু তামান্না (ছদ্মনাম)। রুমীর মতো তারও লেখাপড়ার চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি অর্থ সংকটে। মায়ের পেশা অনুসরণ করে সে করতে চায় না যৌন কাজ। তবে মায়ের পেশা থেকে নিজের জন্মের কারণে মানুষের কটু কথা শুনতে হয় অনেক। তামান্না বলেন “মুই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম। কিন্তু টাহার অভাবে লেখাপড়া এখন বন্ধ। মোরা এই অন্ধকার গলি ছাইড়া ভালো কিছু করতে চাই। আমাগো এট্টু সুযোগ দেওয়া উচিত।মোর জন্ম পতিতাপল্লীতে, এই কথা মানে শুনলে মিশতে চায় না, গালাগালি দেয়। মাঝে মাঝে মনে হয় এখানে জন্ম নেওয়াই মনে হয় পাপ , পরিচয় গোপন করে রেখে চলতে হয়।”
যৌনপল্লীর শিশুদের সঙ্গে মিশতে মানা, খেতে মানা, কথা বলতে মানা। এসব কথা শুনেই বেড়ে উঠছে তারা। শুধু তাই নয় নিজেদের পল্লীর মধ্যেও টেনেহিঁচড়ে চলছে তাদের জীবন। দিনে সামান্য ইনকাম। ছোট একটি ঝুপড়ি ঘর। সেই ঘরেই থাকা, খাওয়া, সন্তানদের পরিচর্যা। সঙ্গে মায়েদের যৌন ব্যবসা। এখানে শিশুদের বেড়ে পরিবেশ নেই।
অলি-গলিতে নাচানাচি ও চিৎকার চেঁচামেচি। ঘরে জায়গা না পাওয়ায় রাস্তায়, ফুটপাতে কিংবা মাসির ঘরে দিনাতিপাত করে যৌনকর্মী মায়ের অবুঝ শিশুরা। এই শিশুদেরকে আমাদের দেশ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সমাজের মানুষ তাদেরকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় না। শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হলেও মা যৌনকর্মীর পরিচয় জানতে পারলে কটু কথার কারণে লেখা বন্ধ হয়ে মেয়ে যুক্ত হয় মায়ের পেশায়। ছেলে সন্তানরা যুক্ত হয় শিশুশ্রমে।
যখন অন্য দশটা শিশু দেখছে স্কুলে পড়ার স্বপ্ন তখন তারা দেখে অন্ধকার গলির অপরাধ।
বলছিলাম বাগেরহাট শহরের পেঁয়াজ পট্টিতে অবস্থিত যৌনপল্লীর কথা। এখানে রয়েছে এরকম ৩৭ জন যৌনকর্মী। তাদের সঙ্গে আছে যৌনপল্লীতে জন্ম নেওয়া সন্তানেরা, যার মধ্য ১১ জন ছেলে এবং ৬ জন মেয়ে। যারা অন্ধকার গলির মধ্যেই বেড়ে উঠছে। আবার অনেকেই মায়ের পরিচয় গোপন রাখতে চলে গেছে পল্লীর বাইরে।
” বর্তমানে খদ্দের কম হওয়ায়, আয় কমে গেছে। সে জন্য যৌনকর্মীদের পাশাপাশি, সন্তানরাও অনেকটা অনহারে দিন কাটাচ্ছে। যৌনকর্মীর সন্তান হওয়ায় নিদিষ্ট গন্ডির বাইরে যেতে পারে না। যৌন পল্লীর নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে বের হলে পরিচয় দিতে হয় অন্য কারো।সন্তানদের পরিচয় দেওয়া হয় তাকে নিয়ম করে মাসোহারা দিতে হয়”, এমনটাই জানালেন বাগেরহাট শহরে অবস্থিত যৌনপল্লীর সদ্দার সুখী বেগম (ছদ্মনাম)।
তিনি আরও বলেন “মোরা আসলে তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা পাই না। গর্ভবতী হলে মোগো সরকার থেকে কার্ড করে দেয়। আমাগো শিশুরা পল্লীর বাইরে যেতে পারে না। গেলে তাদেরকে ছোট চোখে দেখা হয়। স্কুলে ভর্তি হরতে গেলে পরিচয় গোপন করতে হয়। এমনি রিলিফের কার্ড ও পাই না। পল্লীর ভেতরে এনজিও থেকে করে দেওয়া একটা বাচ্চা রাখার স্থান আছে , তারা ঠিকমতো আমাদের বাচ্চা রাখে না , বাইরের বাচ্চাদের রাখে। চিকিৎসাসহ দাফন কাফন করতে গেলে পরিচয় গোপন রেখে করতে হয়। স্কুল কলেজে ভর্তি হরতে গেলে পিতার নামের জায়গায় নিয়মিত খদ্দের নাম দেওয়া হয়, তাদের টাকা দেওয়া লাগে, মোরা এখানে কেউ ইচ্ছে করে এখানে আসেনি, প্রত্যেকেই কোনো না কোনো চক্রান্তে পড়ে এসেছি। আমরা জন্মনিবন্ধন করতে গেলে করতে পারি না, লোকদের দিয়ে করালে লোকদের ৭০০- ১৭০০ টাকা দেওয়া লাগে।আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা চাই”
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, শিশু অধিকার সনদের চারটি মূলনীতির একটি হচ্ছে বৈষম্যহীনতা। এতে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ,ভাষা, বিকলঙ্গতা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্যান্য মতামত, জাতীয় সামাজিক বা নৃতাত্ত্বিক এবং সম্পত্তি, জন্ম বা অন্যান্য অবস্থান যাই হোক না কেন সবাইকে সমানভাবে মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে এর অর্থ হলো সকল শিশুর, সকল পরিস্থিতিতে, সবসময়ে, সবখানে তাদের পরিপূর্ণ বিকাশের অধিকার রয়েছে।
যৌনপল্লীতে জন্ম নেওয়া এই শিশুরা সত্যিকার অর্থে সবখানে কতটুকু পরিপূর্ণ অধিকার কিংবা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে? পরিপূর্ণ বিকাশের অভাবেই স্বপ্নসারথিদের আলোগুলো নিভে যাবে। নাকি হয়ে উঠবে আগামী দিনের ওই অন্ধকার জগতের যৌনপল্লীর যৌনকর্মী।এখানের শিশুদের দিনরাত সংগ্রাম করে জোগার হয় দু’মুঠো খাবার। জানা নেই তাদের অধিরকারের কথা। সমাজে কেউ তাদের দাম দেয় না, সম্মান তো দূরের কথা। পেশার কারণে পরিবারও ওদের গ্রহণ করে না। প্রতি পদে পদে বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়। এখানের বেড়ে ওঠা শিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
জন্মের পর থেকে নানা প্রতিকূলতার মাঝে প্রকৃতির নিয়মেই ওদের একটু একটু করে বেড়ে ওঠা।বর্তমান আইন অনুযায়ী স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে অনলাইন জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যখন ওদের স্কুলে যাওয়ার বয়স, মা তার শত কষ্টের মধ্যেও ভর্তি করাতে যান স্কুলে। কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে আটকে যায় ওদের স্কুলের খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করা। কারণ ওদের নেই কোনো পিতৃ পরিচয়।বাবার পরিচয় না থাকায় জন্মনিবন্ধনে ও জাতীয় পরিচয়পত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে। অস্থায়ী অভিভাবক দ্বারা শিশুদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হলেও ভবিষ্যতে ওয়ারিশ জটিলতার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। আবার মা বর্তমানে পল্লীর এলাকার ভোটার না থাকায় করতে পারছেনা সন্তানের জন্মনিবন্ধন।
এই পল্লীর যৌনকর্মী এবং দুই সন্তানের মা বিউটি বেগম (ছদ্মনাম) বলেন “আমি নির্যাতনের শিকার হয়ে এখানে এসেছি। আমাকে আমার খালু বিক্রি করে দেছে এখন আমি অন্ধকার গলির বাসিন্দা। কিন্তু আমাদের সন্তানেরা যেন এ পেশায় না আসে। তাই আমরা আমাদের সন্তানসন্ততি নিয়ে সমাজের অন্য মানুষের মত বাঁচার জন্য সরকারের কাছে সকল সুযোগ সুবিধা চাই। কাস্টমার খুব কম আসে। প্রতিদিন আমরা গড়ে ২০০-৫০০ টাকা আয় করি। তাই দিয়ে করতে ঘর ভাড়া, খাওয়া দাওয়া, বৃদ্ধ মায়ের দেখাশুনা, সাজসজ্জায় অনেক রকম ব্যয়। কাস্টমার না ধরলে একদিনও চলে না। ঘরে কাস্টমার নিলে বাচ্চার পড়ার জায়গা দিতে পারি না। কিন্তু বাচ্চা তো মানুষ করতে হবে। আমি চাই না মায়ের মতো, আমার বাচ্চা দু্ইটা এ পথে আসুক। কষ্ট করে হলেও আমি তাদের মানুষ করবো। আমার মেয়ে দুইজন লেখা পড়া করতো, তাও প্রায় বন্ধের পথে। কী করব আমার নিজের পেটের ভাতই ঠিক মতে হয় না, লেখাপড়া খরচ চালাবো কেমনে?”
পতিতাপল্লীর শিশুদের নিয়ে কথা হয় বাগেরহাট জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আসাদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। হোক সে দরিদ্র, ধনী কিংবা পতিতাপল্লীর শিশু, সকল শিশুরই সমান অধিকার আছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও এই সকল পিছিয়ে পড়া শিশুদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে, কারণ আমরা সবাই স্বাধীন দেশের নাগরিক। আর আমার বাগেরহাট জেলা শিশু একাডমি কার্যালয়ে যে সকল সুযোগ-সুবিধা আছে তা এই সব পিছিয়ে পড়া শিশুর পাশাপাশি সকল শিশুই পাবে।”
তিনি আরও বলেন, যৌনপল্লীতে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাদের মৌলিক অধিকার। তাহলেই যৌনপল্লীতে বেড়ে ওঠা শিশুরা হয়ে উঠবে আগামী দিনের বাংলাদেশের কর্ণধার ”
স্থানীয় শিক্ষাবিদ সুযশ কান্তি মন্ডল বলেন, “যৌনপল্লীতে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। সমাজ পতিতাপল্লীর মায়েদের খারাপ মনে করে। তাই তাদের প্রিয় সন্তানকে বুকে নিয়ে অভাবের কড়াল গ্রাস সহ্য করে বেঁচে থাকতে হয়। এদেরকে অন্য চোখে দেখা যাবে না কারণ তারাও মানুষ, আর সমাজে যে পাঁচটা শিশু আছে তাদের মতই দেখতে হবে। কারণ, আমরা যদি এদেরকে বৈষম্য স্বীকার করি তাহলে কারা দিবে এদের ন্যায্য অধিকার। অধিকার যদি না দিতে পারি, তাহলে অন্ধকার গলিতে জন্ম নেওয়াই কি অপরাধ ছিল তাদের। আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি তারা এত পেশা থাকতে কেন এ পেশাটি গ্রহণ করল। পতিতাপল্লীর যৌনকর্মীদের অন্ধকার গলিতে আসার পেছনের গল্প জানার কি কখনো চেষ্টা করেছি। যদি জানতাম তাহলে আর কখনোই গালাগালি দিতাম না বৈষম্য করতাম না শিশুদের ও নারীদের।কোলে বুকে টেনে নিতাম ওই সকল শিশুদের। আমাদের সরকারি-বেসরকারি এবং নিজ উদ্যোগে শিশুদের জন্য কিছু করতে হবে কারণ এই শিশু উঠতে পারে আগামী দিনের বাংলাদেশের নেতৃত্ব। তাদেরকে ভালোভাবে সমাজে বসবাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। লেখাপড়ার অধিকার থাকলেও কেনো লেখাপড়ার বন্ধ তাদের, সে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাদের মৌলিক অধিকারগুলো”
যৌনপল্লীর প্রতিটি নারীর যৌনকর্মীর হওয়ার পেছনের গল্প খুবই করুন। সমাজ তাদের মায়েদের খারাপ মনে করে। তাই তাদের প্রিয় সন্তানকে বুকে নিয়ে অভাবের কড়াল গ্রাস সহ্য করে বেঁচে থাকতে হয়। আমরা যদি এদেরকে বৈষম্য করি, তাহলে কারা দেবে এদের ন্যায্য অধিকার। চরম বাস্তবতার শিকার হয় এসব শিশুদের। তাদের অভিভাবকরা চান সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে। স্বাভাবিক আর দশজন শিশুর মতো তাদের শিশুরা পাক বাচাঁর অধিকার; সেটি নিশ্চিত করার দাবি তাদের। অধিকার যদি না দিতে পারি, তাহলে অন্ধকার গলিতে জন্ম নেওয়াই কী অপরাধ! যৌনপল্লীতে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসতে এবং নিশ্চিত করতে হবে তাদের মৌলিক অধিকার তাহলেই যৌনপল্লীতে বেড়ে ওঠা শিশুরা হয়ে উঠবে আগামীদিনের বাংলাদেশের কর্নধার।
এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক এম রবিউল ইসলাম বলেন, “আমাদের যেসব শিশুরা যৌন পল্লীতে বড় হচ্ছে বা যৌন কর্মীর গর্ভে যে সব শিশুরা জন্ম গ্রহন করছে তারা মৌলিক চাহিদা বা মৌলিক প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যৌনপল্লীতে ছোট ছোট ঘর। সেখানে বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে অন্য কোথাও রেখে দিতে হয়। তাদের বাসস্থানের অভাব, পুষ্টির অভাব, শিক্ষার অভাব, তারা যে পরিবেশে বড় হচ্ছে তাদের প্রয়োজনীয় মানুষিক বিকাশ হতে পারে না, বেড়ে উঠার জন্য যে পরিবেশ দরকার তা আসলে যৌন পল্লীতে নাই। যা শিশু অধিকারের বড় ধরনের লঙ্ঘন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে শিশু অধিকার বিষয়ে কমিটি রয়েছে। উক্ত কমিটি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছে।যা দেশের সকল শিশুর অধিকার, শিশু আইন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।তবে যৌনপল্লীর শিশুদের নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আলাদাভাবে কাজ করা হয়নি। রাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুই সমান।আইনের চোখে যে শিশুটা জন্ম গ্রহন করেছে জন্মগত ভাবে কিছু অধিকার নিয়ে জন্ম নেয় তার নাম মানবাধিকার। যৌনপল্লীতে জন্ম নেওয়া শিশুদের যে মানবাধিকার রয়েছে সে মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সরকারের সে দায়িত্ব অবশ্যই নিতে হবে। সরকার যেহেতু যৌনপল্লীগুলো রেখেছে সেখানে শিশু অধিকার কি হচ্ছে তা অবশ্যই মনিটরিং করতে হবে,প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।তাদের জন্য সেফ হোম,স্কুল তৈরি করতে হবে।এসকল শিশুদের নিয়ে কাজ হচ্ছে তা যথেষ্ট না।এখানের ছেলে শিশুরা একটু বড় হয়ে মাদক,ছিনতাই,চুরিতে জড়িয়ে যায় ,আর মেয়ে শিশুরা তাদের মায়ের পেশা চলে যাচ্ছে। এদেরকে যৌনপল্লী থেকে বের করে যদি শিক্ষা , প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে স্বাভাবিক মানুষের মতো বেড়ে উঠত। কারণ, প্রতিটি শিশুর ভিতর কোনো না কোনো প্রতিভা লুকিয়ে আছে। যৌনপল্লীর শিশুদের যে মানবাধিকার রয়েছে তা সরকারের নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভবিষ্যতে যৌনপল্লীর শিশুদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং আমরা সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে সরকারের কাছে তুলে ধরব।”
যৌনপল্লীর শিশুদের স্বপ্ন পূরণের পথে মাথা উঁচিয়ে বিভেদের দেয়াল, জীবনে রং যেখানে ক্রমশ ফিকে হয়ে আসে, সেই পতিতালয়ে জন্ম ওদের, তবুও আর দশটা শিশুর মতো ওরা লিখতে চায় সাফল্যের গল্প। নিজের জীবন অন্ধকার তলিয়ে গেলেও মায়ের চাওয়া আলোকিত হোক সন্তানের জীবন।অভিশপ্ত জীবনের ছায়া থেকে দূরে থাকুক প্রিয় সন্তান। স্বপ্নকে কোনো শিকলে বাধাঁ যায় না, তবে সামাজিক বিভেদ ছেয়ে ফেলা যায়। তবু অন্ধকার পেরিয়ে আলোর পথে যাত্রী হতে চায় তারা।