খাদিজা খাতুনঃ ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ‘কথাটির সাথে কারু দ্বিমত নেই। শিক্ষিত না হলে কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারবে না -এটা নিয়েও কারো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন থাকতে পারে আমরা কেমন শিক্ষা চাই? দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষা এগিয়ে যাচ্ছে,শিক্ষিতের হার বাড়ছে। কিন্তু সমাজের প্রতিটি স্তরেই অনেক পাওয়ার মধ্যেও কোথায় যেন সুক্ষ্ম না পাওয়ার হাহাকার। নানারকম জটিল সমীকরণে আমরা জীবনের সরলতা হারিয়ে ফেলছি। আমরা আমাদের ছেলেবেলার আনন্দগুলো আমাদের শিশুদের মাঝে খুঁজে পাই না। অন্য ভাবে বলা যায় সেই আনন্দগুলো আমরা তাদের দিতে পারছি না। জীবনের প্রতিটি স্তরই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটি স্তরে ঘাটতি নিয়ে আমরা অসাধারণ কিছু লাভের আশা করতে পারি না।
হঠাৎ করেই আমরা আমাদের বর্তমান প্রজন্মের অনেক আচরণেই থমকে যাচ্ছি। অনেকের মাঝে আমরা প্রকাশ্য হতাশাও দেখতে পাচ্ছি। আজ আমাদের প্রতিটি স্তরেই দেখতে পাচ্ছি মানবিকতার ঘাটতি। এখনকার পরিবারগুলো ছোট, সুযোগ সুবিধাও অনেক বেশি ভোগ করছে বর্তমানের শিশুরা। তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মতো আরও বেশি মানবিক হবার কথা। কিন্তু তা না হয়ে আমরা প্রায় সকলেই বলছি মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, টকশো,চায়ের টেবিল,ব্যাক্তিগত আলোচনা সবখানেই আমরা এই হতাশা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কেনো এই হতাশা?
শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদণ্ড তেমনি আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই আজকের শিশুদের মানবিক করে গড়ে তুলতে না পারলে তার মাশুল গুনতে হবে প্রতিটি ব্যাক্তি তথা পরিবার, সমাজ ও সর্বোপরি দেশ ও বিশ্বকে।
প্রতিটি পিতামাতা তার সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে অনেক আর্থিক সঞ্চয় করি।কিন্তু আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য কি কিছু সঞ্চয় করছি?না সঞ্চয়ের চিন্তা করছি?আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা অনেক স্ট্রাগল করে কাটিয়ে উঠলেও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা কাটিয়ে ওঠা দুরূহ। কারণ প্রথমটি নিজের আয়ত্তাধীন অন্যটি নিজের আয়ত্তের বাইরে। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ।
মানব জীবনের শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকেই। শিশু পারিবারিক শিক্ষার সাথে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে শুরু হয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূতিকাগার হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। পুঁথিগত শিক্ষায় যেমন একজন শিশুকে শিক্ষিত করে তুলতে হয় তেমনি মানবিক হবার জন্যও মানবিক শিক্ষার প্রয়োজন। যে শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে পরিস্ফুটিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে।যার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী। সুন্দর, মানব বান্ধব,ভীতিহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই শিক্ষা এবং অবশ্যই তা হতে হবে মানবিক শিক্ষা। তা না হলে দিনে দিনে বাড়বে বৃদ্ধাশ্রম, শিশুদের মনেও জন্ম নেবে হতাশা। জাতিকে হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পিতামাতার পরেই কান্ডারীর ভূমিকা নিতে হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের।যারা মানুষ গড়ার কারিগর। যেকোনো শিক্ষাই শুরু শিশুকাল থেকেই। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গুনগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তাই সকলের শ্লোগান হবে” স্বপ্ন মোদের অনধিক, গড়বো শিশু মানবিক।”