শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংক কর্মকর্তা, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালকসহ একাধিক পরিচয়ে ব্যাংকে নিয়োগ, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোসহ একাধিক চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে একটি চক্র হাতিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
সাবেক একজন ব্যাংক কর্মকর্তার নেতৃত্বে রাজধানীতে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী এই নিয়োগ সিন্ডিকেট। এই চক্রের মূল হোতা সেলিম আহামদ (৬০)। তিনি উত্তরা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
সেলিম নিজেকে কখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, কখনো ব্যাংক কর্মকর্তা, আবার কখনো জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো পরিচালক পরিচয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতেন। পরে সিন্ডিকেটের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লোক নিয়োগের নামে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেলিমসহ এই চক্রের আট সদস্য ধরা পড়েছে গোয়েন্দা জালে। সেলিম ছাড়া চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন- এনায়েত খান (৪১), কাওসার আলী (৩৮), কাজী হাবিব (৩২), জালাল উদ্দিন তালুকদার (৫২), মো. সাগর (৩৪), সুলতাল মাহমুদ (৩১) এবং
শুক্রবার রাজধানীর মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র, ১ টি কম্পিউটারসহ ৮ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সেলিমের নামে আগের ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩ টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও ৩ টি মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী। হাবিবের নামে চারটি এবং কাউসারের নামে দুইটি মামলা আছে।
সূত্র জানায়, তাদের হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটিং হিস্ট্রি পর্যালোচনা করে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষকসহ বিভিন্ন নিয়োগ, ব্যাংক এ চাকরি এবং বদলী-পদোন্নতিসহ নানা বিষয়ে প্রতারণার অনেক তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। এই চক্রের হাতে প্রতারিত হয়েছেন অনন্ত ১১ জন। তাদের মধ্যে প্রতারিত জাহিদ ৭ লাখ, সজিব খান ৬ লাখ, রবি ২ লাখ, শাহীন ৯০ হাজার, কনক মাস্টার ৭৪ হাজার, টুটুল ৭০ হাজার, লিটন ফিরোজ ৫০ হাজার, মতিন ৪৮ হাজার, খালেক ৪০ হাজার, হারুন ১০ হাজার এবং শওকত আলী ৯ লাখ টাকা খুইয়েছেন।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী শওকত আলী বলেন, একই ভবনে থাকার সুবাদে প্রতারক এনায়েত খানের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই সূত্রে এনায়েত আমার ছেলে এনামুল হোসেন এবং আমার ভায়রার ছেলে জাবেদ হোসেনকে সাউথইস্ট ব্যাংকে চাকরির প্রলোভন দেখায়। এনায়েত বলেন, চাকরি পেতে হলে সাউথস্ট ব্যাংকে গিয়ে ভাইবা (মৌখিক পরীক্ষ) দিতে হবে। কোনো লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। তার কথামতো ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট মতিঝিলে অবস্থিত সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে যায় এনামুল ও জাবেদ। এ সময় প্রতারক চক্রের অপর সদস্য কাজী হাবিব নিজেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পিওন পরিচয় দিয়ে কাওসার আলীকে সাউথইস্ট ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের (এনামুল ও জাবেদ) ব্যাংকের ভেতর নিয়ে যান। পরে একটি রুমে নিয়ে দুই-তিন জন মিলে তাদের ভাইবা নেন।
শওকত আলী বলেন, ভাইবা নেয়ার কিছুদিন পর এনায়েত খান আমাকে জানায়, দুইজনের জন্য দুইটি নিয়োগপত্র পেতে হলে সাউথইস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা ডোনেশন দিতে হবে। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর এনায়েতকে নয় লাখ টাকা দিই। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর আরও এক লাখ টাকা দিতে রাজি হই। কিন্তু টাকা নেয়ার পর তারা নিয়োগপত্র দিচ্ছিল না। টাকা ফেরত চাইলে তারা নানা টালবাহানা শুরু করে। পরে বিষয়টি ডিবি পুলিশকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, এনায়েত, হাবিব, জালাল, সাগর এবং সুলতান বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করে কাওসারের কাছে নিয়ে যায়। কাওসার অবসারপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতারণার নানা কৌশল তৈরি করে। এই চক্রের আরও কোনো সদস্য রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।