আফরোজা আক্তার: দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাড়লেও চিকিৎসা সেবা রয়ে গেছে প্রায় আগের মতোই। অন্যদিকে অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে যে ফি চাইছে, তা সরকারি হাসপাতালের তিনগুণ। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসদের চেম্বারে রোগীদের কাছ থেকে ফি আদায়ে বার বার একটি নীতিমালা তৈরির পদক্ষেপ নেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতেই হচ্ছে।
কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের মোট খরচের যদি ১০ শতাংশ বা তার বেশি স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় হয়, তাহলে সে পরিবার বা ব্যক্তি আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এটা বাংলাদেশে ২৫ শতাংশ। প্রতি বছর দেশে চিকিৎসাব্যয় বহন করতে গিয়ে ৮৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে, যা মোট জনসংখ্যার সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি। স্বাস্থ্যসেবার প্রায় ৬৫ শতাংশ চিকিৎসা বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত প্রদান করছে। সরকারি হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় শয্যাসংকট, জনবলের অপ্রতুলতার কারণে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছে। একদিকে যেমন বিলাসবহুল হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, তেমনই রয়েছে নিম্নমানের ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনেক বেসরকারি হাসপাতাল সেবার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। একই রোগে একেক হাসপাতালে একেকজন চিকিৎসক নেন ভিন্ন রকমের চিকিৎসা ফি। ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে চিকিৎসা ফি গিয়ে পৌঁছেছে ২ হাজার টাকা বা এরও বেশি। ফলে নিম্নআয়ের মানুষদের চিকিৎসা পেতে খরচ হয়ে যাচ্ছে আয়ের একটা বড় অংশ। চিকিৎসার নামে চালিয়ে যাচ্ছে মনোপলি ব্যবসা। অনেক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিজস্ব ভবন নেই। রয়েছে নোংরা পরিবেশ ও চরম অব্যবস্থাপনা। হচ্ছে ভুল অপারেশন। আইসিইউ নেই, কিন্তু আইসিইউয়ের নল মুখে লাগিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রোগীর কাছ থেকে। সিজারিয়ানের প্রয়োজন নেই, তারপরও করানো হচ্ছে সিজারিয়ান।
সাধারণ মানুষের মানসম্মত চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসা ব্যয় লাঘব করতে হলে দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। জনগণের সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকুক- এ প্রত্যাশা আমাদের।
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।