পুতুল নাচের ন্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের সুতার টান অন্য কোথাও থেকে আসছে কিনা সেটা জনগণ জানতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, আমরা এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে আছি এবং জনগণ যেন একটা প্যারাডক্সের মধ্যে আছে। শুনলাম সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছে, তার কয়েকদিন পর শুনলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসে ঘুরাফেরা করছে। আবার শুনলাম তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত গ্রেপ্তার হয়েছে। তার দুই-তিন দিন পরে শুনলাম তিনি গ্রেপ্তার হননি। জনগণের সঙ্গে এই প্রতারণা কীসের জন্য? জনগণের সামনে এই লুকোচুরি কীসের জন্য? এটাতো জনগণ জানতে চায়।
তিনি বলেন, জনগণের ভোট, জনগণের ম্যান্ডেট, যারা মাইকিং করে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছে নিজেদের মত করে ভোট দেয়ার জন্য জনগণকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়নি। শেখ হাসিনার আমলে যে সব মন্ত্রীরা অপরাধ করেছে, অবিচার করেছে তাদের ধরা না ধরা, গ্রেপ্তার হওয়া না হওয়া এইটা নিয়ে এই ধরনের লুকোচুরি কেন খেলছেন? জনগণ কি প্রশ্ন করতে পারেনা? জনগণ কি জানেনা কোনো না কোনো জায়গা থেকে পুতুল খেলার নাচের মত আপনাদের সুতোর টান দিচ্ছে। সেই সুতোর টানে আপনারা নাচানাচি করছেন। এটাতো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনও কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম জড়াতে পারেনি। এ মামলাতো ছিল শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। তারপরও কেন তার বিরুদ্ধে মামলা এখনো প্রত্যাহার হচ্ছে না? এর কারণ কি দেশবাসী জানতে চায়? আপনাদের অন্তরের ভাষা আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। ছাত্র জনতার তুমুল আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সবাই সমর্থন দিয়েছি। এই সমর্থনের পরেও তারা যদি আলো ছায়ার মধ্যে ধুলতে থাকে তাহলে তো সামনের দিকে একটা বিপদজনক বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে।
বিএনপির এ সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলী একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন। চৌধুরী আলম জনপ্রতিনিধি ছিলেন। সালাউদ্দিন আহমেদ স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি মন্ত্রী ছিলেন তাকেও ৬২ দিন আটকে রেখে ইন্ডিয়াতে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা কি আবার সেই আমলের পুনরাবৃত্তি করবো? আমরা কি সেই দুঃসহ, দুর্বিষহ পরিস্থিতি আবার আনবো? আইনের শাসনের বদলে যুবলীগের শাসন চলবে। আওয়ামী লীগের শাসন চলবে। আমাদের এত আত্মত্যাগ ১৫-১৬ বছর ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং বিএনপি নেতাকর্মীরা অকাতরে জীবন দিয়েছে। তাদেরকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে এসে তার স্ত্রীর সামনে, মায়ের সামনে, বাবার সামনে থেকে হত্যা করা হয়েছে। কারো কারো লাশ পাওয়া গেছে তিন-চারদিন পর তুরাগ নদীতে, শীতলক্ষা নদীতে। এই ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের ভাগ্যের লিখন। এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে শেখ হাসিনার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ আর র্যাব। সেই শাসন কি আবার ফিরে আসবে। সেই শাসন আর ফিরে আসতে পারেনা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদল নেতা ওমর ফারুক কাওসার, ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদ আওয়াল প্রমুখ।