রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় সংঘর্ষের ঘটনার ৩দিন পর বিক্ষোভ মিছিল স্থগিত হওয়ায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে চলছে দূরপাল্লার বাস। ফলে অনেকটাই ভোগান্তি কমেছে দূরপাল্লার যাত্রীসহ যানবাহন শ্রমিকদের।
মঙ্গলবার (১৪মার্চ) সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে রাজশাহী -ঢাকা মহাসড়কে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। কোথাও নেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা নেই বিক্ষোভ মিছিল বা আন্দোলন। গতকাল থেকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দিয়ে অটোরিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহনও চলাচল করলেও আজ সকাল থেকে দূরপাল্লার বাসগুলোও চলাচল করতে দেখা যায়। এতে ভোগান্তি কমেছে যাত্রীসহ যানবাহন শ্রমিকদের। যান চলাচল যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে জন্য বিনোদপুর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাস নজরে রাখছেন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
গত শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক বন্ধ থাকার ফলে বন্ধ ছিলো দূরপাল্লার যান চলাচল। তবে বিকল্প পথে চালু ছিলো এ যানচলাচল। নাটোরের দিক থেকে আসা যানবাহন শহরে প্রবেশ করতে বুধপাড়া ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করছিলো। আর বাজারের দিক থেকে কাটাখালীর দিকে আসা ছোট যানবাহন ফুলতলা বালুরঘাট হয় যাচ্ছিলো। এছাড়া বাসগুলো সিরইল বাস স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে ভদ্রা মোড় দিয়ে নতুন বাইপাস হয় নাটোরের দিকে যেতে দেখা যায়।
আজ থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ায় বাইপাস দিয়ে যেতে হচ্ছে না এসব যানবাহনগুলো। দূরপাল্লার বাসগুলোসহ সকল যানবাহন রাবি ক্যাম্পাসের মূল ফটক ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের সামনে দিয়েই তাদের গন্তব্যে স্থলে যাচ্ছে।
এর আগে গতরাত (১২ মার্চ) রাত ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের রেললাইন আগুন জালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলো শিক্ষার্থীরা। ফলে রাজশাহী রেল স্টেশনের সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাড়া বাকি সব জেলার সাথে রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিলো প্রায় চার ঘন্টা। পরে রাত ২টায় আবার রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে গত (১২ মার্চ) দুপুর ১২টায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অগ্নিসংযোগ, ইট ও গাছের গুঁড়ি রেখে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে তারা সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সরে গিয়ে চারুকলা অনুষদসংলগ্ন রেললাইনে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা ব্যানার, টায়ার, পাখির অবয়ব (ডামি) পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বাসের ভাড়া নিয়ে বাক- বিতণ্ডার জেরে শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর বাজারে স্থানীয়-শিক্ষার্থী ঘটনার সূত্রপাত হয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে স্থানীয়রা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বর্তমানে মহাসড়কের দুপাশ থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
স্থানীয় ব্যক্তিদের হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদুনে গ্যাসের শেলে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে এখনো ২০জন শিক্ষার্থ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন এক শিক্ষার্থী। তিনজন শিক্ষার্থীর চোখে অস্ত্রোপচারের জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে আজ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে মোহাম্মাদ নামের একটি বাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন এক ছাত্র। যাত্রাপথে ভাড়া নিয়ে তার সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার ও হেলপারের বাগবিতণ্ডা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে বাস থেকে কাউন্টারে এসে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।