যবিপ্রবি প্রতিনিধি: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি ও দৈনিক বাংলাদেশ পোস্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জহুরুল ইসলামকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে আজ বুধবার বেলা ১২.৩০ ঘটিকায় যশোর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যবৃন্দ। এসময় উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও সাংবাদিকতার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবী জানান তারা।
গত সোমবার (২২ মে ২০২৩) দুপুর আনুমানিক ২ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি ও ডেইলি বাংলাদেশ পোস্ট এবং ডেইলি ক্যাম্পাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জহুরুল ইসলাম ডিপার্টমেন্টের কাজ শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবন থেকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে যাওয়ার সময় হলের প্রধান ফটকে তাকে অবরুদ্ধ করেন শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। ঘটনার এক পর্যায়ে সাংবাদিক জহুরুলকে হলের গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফ আল মাহমুদ ও ছাত্রলীগ কর্মী বেলাল হোসেন। এর আগে গত ২০ মার্চ, ২০২৩ রাত আনুমানিক ১০ টায় ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহেল রানা গভীর রাতে নিজস্ব ৩০৬ কক্ষে ডেকে দৈনিক দেশ রূপান্তর ও ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমানকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। গত ফেব্রুয়ারী মাসে শেখ হাসিনা ছাত্রী হলে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক সমিতির সদস্য দিশা প্রিয়া মিষ্টিকে ফেসবুক লাইভে হেনস্তা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গত বছরে (১৬ অক্টোবর ২০২২) বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাতে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালের অনুসারীদের মধ্যে সংগঠিত ঘটনার সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিক সমিতির সদস্য শিহাব উদ্দিন সরকারকে মারধর করে তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এসময় অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগকর্মী শিহাবকে পরিকল্পিত ভাবে আক্রমণ করে মারধর করে। এতে শিহাব গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে তাকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের উপর ছাত্রলীগকর্মী কর্তৃক পরিকল্পিত হামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের সামিল। এসব ঘটনায় পূর্বে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও তদন্ত প্রতিবেদন আজও প্রকাশিত হয়নি।
মানববন্ধনে যবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোসাব্বির হোসাইন বলেন, ইতিপূর্বে যবিপ্রবির সাংবাদিক সমিতির সদস্যদেরকে বিভিন্ন সময় শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে পেশাগত দায়িত্ব¡ পালনকালে সাংবাদিক শিহাব উদ্দিন সরকারকে ছাত্রলীগের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী হামলা চালায়। পরবর্তীতে চলতি বছরে সাংবাদিক দিশা প্রিয়া মিষ্টিকে ফেসবুক লাইভে এনে ছাত্রলীগ কর্মীরা হেনস্তা ও হুমকি-ধামকি প্রদান করে। চলতি বছরের ২০ মার্চ যবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সজীবুর রহমানকে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। সর্বশেষ গত ২২ যবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি ও দ্যা বাংলাদেশ পোস্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জহুরুল ইসলামকে ছাত্রলীগ কর্মী আসিফ আল মাহমুদ ও বেলাল হোসেনের দ্বারা শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থার শিকার হন। উক্ত সকল ঘটনার বিচার দাবি করছি। অবিলম্বে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি তাদেরকে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।
যবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসাইন বলেন, বিচার বহির্ভূত হওয়ার কারনে অনিয়ন্ত্রিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বারংবার সাংবাদিকদের উপর হামলা করছে। মুক্ত ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এই বিতর্কিত ও বিচ্ছিন্নবাদী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এধরনের অরাজকতা এবং মুক্ত ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা বাঁধা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এর আগে একাধিক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে এবার তার পুনরাবৃত্তি হলে কঠোর থেকে কঠোরতার আন্দোলন করা হবে।
যবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসাইনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য প্রদান করেন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোসাব্বির হোসাইন, সহ-সভাপতি জহুরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ সম্পাদক ওয়াশিম আকরাম, প্রচার, প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক এটিএম মাহফুজ, কার্যনির্বাহী সদস্য নির্মল কুমার, রুহুল আমিন, সদস্য শেখ সাদী, মোতালেব হোসেন, শিহাব উদ্দিন সরকার, মোস্তফা গালিব, জুবায়ের হাসান, সাবেক সহ সভাপতি কৃষ্ণ বালা প্রমুখ।
এবিষয়ে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে প্রভোস্ট বডি মিটিং করে ৩ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ২ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেলেই নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।