মো.জাহিদ হোসেন, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষপাড়া এলাকায় ছাত্রীদের একটি মেসে ভিডিও ধারণের অভিযোগে যথাযথ বিচার না পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই আন্দোলন চলমান অবস্থায় আরিফনগর ছাত্রীদের মেসে একই ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে শিক্ষার্থীর আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন।
প্রক্টরের ভূমিকায় শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন এবং বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীরা মুক্তমঞ্চে অবস্থান নেন পাশাপাশি তারা প্রক্টর অফিস ঘেরাও করে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। প্রক্টরের পদত্যাগ না হওয়া পৰ্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে গেলে ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, স্থানীয় সরকার বাড়ির মেস মালিকের ছেলে কৌশলে ভেন্টিলেটর দিয়ে বাথরুমের ভেতর মোবাইল ক্যামেরা স্থাপন করেন। এক পর্যায়ে তা দেখে ফেলেন চতুর্থ বর্ষের সোনিয়া (ছদ্মনাম) নামের এক ছাত্রী। ক্যামেরা দেখে তিনি চিৎকার করেন। বাইরে এসে মেসের অন্য মেয়েদের নিয়ে ক্যামেরা আসলো কীভাবে তা দেখতে মেয়েরা ছাদে যান। সেখানেই দেখতে পান মেস মালিকের ছেলে তুহিন সরকারকে। ছাত্রীরা দিশেহারা ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দ্রুত নিজ বিভাগের চেয়ারম্যানকে ঘটনাটি জানান। চেয়ারম্যান বিষয়টি প্রক্টরিয়াল বডিকে জানাতে বলেন। পরে গত ৮ মে, ২০২৪ (বুধবার) তারিখে প্রক্টরিয়াল বডিকে লিখিত অভিযোগ দেন ঐ ছাত্রী।
প্রক্টর অফিসে দেওয়া অভিযোগ পত্রে তিনি জানান, “আমি ঘোষপাড়ার হানিম সরকারের ছাত্রী মেসের পঞ্চম তলায় ছিলাম, গত ৭ মে,২০২৪ (মঙ্গলবার) তারিখে জরুরি প্রয়োজনে মেসে আসার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গোসলে ঢুকি। গোসলরত অবস্থায় বাথরুমের জানালায় আমি লাঠি জাতীয় কিছুর সাথে একটি ফোনের ক্যামেরার দিকটা বাধা অবস্থায় দেখতে পাই। তৎক্ষণাৎ আমি মেসে যারা ছিল তাদের সবাইকে একসাথে চিৎকার করে ডেকে খুঁজে খেতে বলি যে ছাদে কেউ আছে কিনা, যখন সবাই ছাদে পিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে তখন তারা উপলব্ধি করে কেউ লুকানোর চেষ্টা করছে, সিঁড়িঘরে ট্যাংকের পিছনে। যখন সবাই বুঝতে পারে এবং তাকে বের হয়ে আসতে বলে তখন সে কোনো শব্দ ছাড়া শুয়ে পড়ে, অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর সেখান থেকে বাড়িওয়ালার ছেলে তুহিন সরকার বের হয়ে আসে এবং পুরো বিষয়টিকে অস্বীকার করে। তখন তার পরিবারকে জানানো হলেও তারা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে, তারা চলে যাওয়ার পর পুনরায় খোঁজাখুজি করলে অনুরূপ একটি লাঠি দড়ি বাঁধাসহ ট্যাংকের পাশে খুঁজে পাওয়া যায়। বর্তমানে মেসে অবস্থানরত মেয়েরা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে রয়েছে এই ভয়ে যে, এই লোক এই ধরনের ভিডিওগ্রাফি কতদিন যাবত করছে? কত মেয়ের অপ্রীতিকর ভিডিও এর আগে করা হয়েছে। এই মেসে অবস্থানরত মেয়েরা সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পক্ষেপ গ্রহণ করতে অনুরোধ জানান মেসে অবস্থানরত মেয়ে শিক্ষার্থীরা।
এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। গত রোববার (১৯ মে, ২০২৪) সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপর্যুক্ত শাস্তির দাবিতে ভিসি কার্যালয়ে অবস্থান নেন। তারপরেও সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে বৃহস্পতিবার মুক্তমঞ্চে অবস্থান নেন। বৃহস্পতিবার সকালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে অভিযুক্ত মেসে থাকা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা শিক্ষার্থীদের মালামালসহ প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। রাত ৮টা পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে প্রক্টর অফিসে আন্দোলন চালিয়ে যান সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় শনিবার।