শামীমা আক্তারঃ সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় বেতের ব্যবহার একদম নেই বললেই চলে। আজকাল আর শিক্ষকরা বেত বা স্কেল নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করেন না। আমি আমার বাবা-মা ও শিক্ষকদের কাছে গল্প শুনতাম, তাদের সময় স্কুলে শিক্ষকরা নাকি বেত বা লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করত। সেই ভয়ে অনেক শিক্ষার্থীই ছাড়তো শিক্ষাঙ্গন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়, আমি শিক্ষকদের দেখতাম বেত নিয়ে ক্লাসে আসতে এবং একটু উনিশ-বিশ হলেই বেত চালাতে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে পরবর্তী জীবনে আর ঘুণাক্ষরেও বেত ও ক্লাসে মারধর দেখিনি। সময় পাল্টেছে, সরকারের এই নীতি সত্যিই প্রশংসনীয়।
তবে এর ঠিক উল্টো চিত্র মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায়। সেখানে আজও, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পিশাচের মত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। কিছু দিন পরপরই পত্রপত্রিকায় ভেসে আসে এসব পৈশাচিক সংবাদ, অমুক মাদ্রাসায় হুজুরের বেতের আঘাতে প্রাণ গেল অমুক শিশুর। কিছুদিন আগের নিউজ, মাদ্রাসায় শিক্ষকের ২০০টি বেত্রাঘাতে প্রাণ হারিয়েছে এক শিশু। কোনো এক অজানা রহস্যে অভিভাবরাও এসব বিষয়ে নিশ্চুপ থাকতেই পছন্দ করেন। হয়তো ভাবেন, হুজুরের মার যেখানে যেখানে পড়বে শরীরের সেটুকু জান্নাতে যাবে। হুজুরের মাইরেও সওয়াব আছে! যা একটি জাল হাদিস ও বানোয়াট কথা। হাদিসে এর কোন সত্যতা নেই।
সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের এমন অতি আবেগী ভাষা না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু সরকার, দেশের উচ্চ পর্যায়ের এত বড় বড় মাথা, তারা কীভাবে এসব বিষয়ে নিশ্চুপ থাকেন! তারা সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার মতো মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায়ও কেন আইন করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন রোধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না! নাকি মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিশুদের শরীর ও মন লোহার তৈরি! তাদের মানসিক বিকাশের দরকার নেই! তারা দেশের কিছুই না, তাদের সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা নিয়ে সকারের চিন্তার দরকার নেই! যদি তারাও দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অংশ হয়ে থাকে তবে তাদের শিক্ষাব্যবস্থায়ও সময়োপযোগী পরিবর্তন এনে শিশুর মনন বিকাশে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের দায়িত্ব। অথবা সরকার সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা ও মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা দুটোর সমন্বয়ে বাস্তব জ্ঞান ও ধর্মীয় জ্ঞানের মিশেলে একটি অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে পারে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সরকারের আমলেই এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
হ্যাঁ, পরিবর্তন আসেনি কারণ আমরা, দেশের মানুষরা, তথাকথিত হুজুরদেরকেই ইসলামের কাণ্ডারি মনে করি। তাদের মারধর, শিশু বলাৎকার সবেতেই সওয়াব! তাই কোনো সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দিলেই সরকারকে কাফের, মুরতাদ, ইহুদীদের ষড়যন্ত্র ইত্যাদি বলে হুংকার দিবেন কিছু লেবাসধারী, আর আমরা, সাধারণ মানুষও, তাদের পিছে ছুটবো সরকারের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে। সরকারের উচিত এই সকল অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা এবং তা যথাযথ তদারকি করা তবেই সুস্থ সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং কোমলমতি শিশুরা আর নির্যাতিত হবে না।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।