The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

মাতৃস্নেহ কেড়ে নেয়ার বিচার চায় ২ বছরের শিশু প্রত্যয়

ইবি প্রতিনিধি : গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিজ শ্বশুরবাড়ি থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিন ঊর্মি (২৩)’কে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার দীর্ঘ ৯ মাস পেরোলেও যথোপযুক্ত বিচার না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের পাদদেশে মানববন্ধনে নামেন ঊর্মির ২ বছরের শিশু আবনাব প্রত্যয়’সহ তার পরিবার ও বিভাগের শিক্ষক, সহপাঠী সহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২১ মে) ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন থেকে বিচারের দাবিতে র‍্যালি বের হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ম্যুরাল প্রাঙ্গনে সমবেত হয়।

জানা যায়, প্রথমে হত্যাকাণ্ডের মামলা গ্রহণ করা হলেও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এর সাদৃশ্য না থাকায় ঊর্মির মৃত্যুটি আত্মহত্যা বলে পুনরায় রিপোর্ট করে পুলিশ। এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে ঊর্মির পরিবার মহামান্য আদালতের দ্বারস্ত হলে পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআই তে হস্তান্তর করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে ঊর্মি হত্যার সাথে জড়িতদের বিচার চেয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয়া বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের সাথে আজকে নিশাত তাসনিম ফুটফুটে শিশু প্রত্যয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে এর সামনে দাড়িয়ে তার মায়ের হত্যার বিচারের দাবিতে আমাদের সাথে শামিল হয়েছে। আমরা মনে করি এ দাবিতে ঊর্মির সন্তান প্রত্যয় আমাদের শক্তি।

মানববন্ধনে ঊর্মির সহাপাঠীরা বলেন, যারা বিবাদী তাদেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তারা এখন জামিনে বেরিয়ে এসেছে এবং এই বিচারকার্যকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য মামলার নানাবিধ প্রমাণ যা ছিল সব নষ্ট করার জন্য পায়তারা করছে। আশ্চর্যের বিষয় হল বিচারিক প্রক্রিয়ায় একটা হত্যাকান্ডের যে সমস্ত আলামত ছিল তাতে শুরুর দিকে এটিকে হত্যাকান্ড ও হত্যামামলা হিসেবে নিয়েছিলো পুলিশ। কিন্তু পুলিশের দেয়া রিপোর্টের সাথে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের কোনো মিল নাই।

তারা বলেন, মহামান্য আদালত নিশাত ঊর্মির হত্যার যে মামলাটি চলমান সেই মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য পিআইবিকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা এটাও জানতে পেরেছি পিবিআই বিস্ময় প্রকাশ করেছে যে প্রাথমিক ঘটনার বিবরণের সাথে মেডিকেল বোর্ডের ময়নাতদন্তের কোনো মিল নাই। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার এই যেখানে হত্যাকান্ডের মামলা নেয়া হয়েছে সেই জায়গায় পুলিশ কি করে পরবর্তীতে একটা ইউডি মামলা প্রতিবেদন দাখিল করে এবং বাদীকে একটা আত্মহত্যা মামলা হিসেবে আর্জি দেওয়ার জন্য কি করে চাপ প্রয়োগ করে।

মানববন্ধনের দাবি করা হয়, ঊর্মির হত্যার সাথে যারা জড়িত তার স্বামী প্রিন্স’সহ তার শুশুর, শাশুড়ী এবং পরোক্ষভাবে মদদ দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার হতে হবে। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে অনেক বিচার বিলম্বিত হয়েছে আর নয় ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ তাদের মেধাবী শিক্ষার্থী হত্যার বিচার চায়। আমরা সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের শিক্ষার্থী হত্যার বিচার চাই এবং এই ঘটনার সঙ্গে আমরা যারা নয়মাস ধরে সংগ্রাম করছি প্রত্যেকটা মানুষ আন্তরিক ভাবে বিচার চাই। এই বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য রাষ্ট্র যন্ত্রের সাথে যারা জড়িত আছেন তাদের এবং পুলিশ প্রশাসন আদালত সবার কাছে আমাদের আর্জি থাকবে যে প্রাণ চলে গেছে তাকে আমরা পাবো না। কিন্তু অবিচারের দৃষ্টান্ত বা নজির যেনো স্থাপিত না হয়। শিক্ষাঙ্গন থেকে কোনো নিশাত ঊর্মি এভাবে হত্যার শিকার না হয়। এবং বিচার বঞ্চনায় যেনো তার পরিবার নিভৃতে না কাঁদে। শিক্ষার্থী, সহকর্মী, সহপাঠী যারা আছে তারা যেনো না কাঁদে এবং এ ধরনের অবিচারের নমুনা দৃষ্টান্ত যেনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে না হয়। নিশাত ঊর্মির হত্যার বিচারে আমরা আন্তরিক দাবি জানাই। দেশের সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য নিশাত ঊর্মির হত্যার বিচারের দাবিটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।আমাদের দাবি এতটুকুই, তার পরিবারের দাবি এতটুকুই, তার সন্তানের দাবি আজ আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে এতটুকুই। আমার মনে হয়না এত কম বয়সে কোনো সন্তান তার মায়ের বিচারের দাবিতে এতগুলো হাতের সাথে যুক্ত হয়ে আজকে মানববন্ধনে যুক্ত হয়েছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ দাবি খুনীর শাস্তি চাই, প্রিন্সের শাস্তি চাই। নিশাত ঊর্মির হত্যার দ্রুততর সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার চাই।

এ বিষয়ে নিশাত উর্মির মাতা বলেন, আমার মেয়েটা মানুষের মত মানুষ হবে অথচ অকালে মেয়েটা ঝরে গেছে। সে জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেছি। ছাত্রসমাজের কাছে আমার নিবেদন তারা আমার মেয়ে হারানোর যন্ত্রনাকে নিজেদের যন্ত্রনা মনে করুক। এবং আমার সাথে বিচারের দাবীতে তারা রাস্তায় নামুক। সবাই যেন একসঙ্গে একই সাথে আমার সন্তানের হত্যার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামতে পারে এই জন্য আমার এখানে আসা।

এ প্রসঙ্গে নিহত ঊর্মির পিতা গোলাম কিবরিয়া জানান, পুলিশ প্রতিবেদন মোতাবেক আমার মেয়েকে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে আনুমানিক রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। রাত ১০ টা থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্যে পরিবারের কোন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে না। সবাই সেখানে উপস্থিত ছিল থাকা অবস্থায় আমার মেয়েটা মারা গিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশি রিপোর্টে বলা আছে তার গলায় আঙ্গুলের কালো ছাপ বিদ্যমান, শ্বাসরুদ্ধ টিপে ধরা আঙ্গুলের কালো ছাপ বিদ্যামান রয়েছে। গালে কালোচিরা দাগ আছে এবং প্রিন্সের আংটির দাগও আছে। তারপর হাসপাতালে থেকে পুলিশ যখন তার রিপোর্ট করে তখন পরিস্কার করে হত্যার মামলা নিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময় ময়নাতদন্তের পরে সেখানে বলা হয়েছে আত্মহত্যা করেছে। আমরা এটাকে কোনভাবে মেনে নিতে পারিনি।

নিশাতের পিতা বলেন, আদালতে এর বিরুদ্ধে না রাজি প্রতিবেদন দাখিল করেছিলাম। পরবর্তীতে পিবিআই কুষ্টিয়া এর তদন্ত করছে। আমার চাই যে এর সুষ্ঠু বিচার হোক এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসুক কারা জড়িত।

এ প্রসঙ্গে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মামলাটির অধিকতর তদন্তের স্বার্থে পিবিআই এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তারাই এ বিষয়টি দেখভাল করবেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পিবিআই জোনের পুলিশ সুপার মো: শহীদ আবু সরোয়ার বলেন, মামলাটি আমরা সম্প্রতিই হাতে পেয়েছি। সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে আমরা মামলাটি তদন্ত করবো।

উল্লেখ্য, মেধাবী নিশাত তাসনিম উর্মী ও তার স্বামী প্রিন্স ভালোবেসে প্রায় চার বছর আগে বিয়ে করেন। আশিকুজ্জামান প্রিন্স ছিলেন মাদকাসক্ত। কারণে-অকারণে তিনি তার স্ত্রী উর্মীকে মারধর করতেন বলে জানা যায়।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.