বাকৃবি প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) মাৎস্য চাষে জলবায়ুর প্রভাব ও তা গবেষণার জন্য ফিশারীজ জেনেটিকস এন্ড বায়োলজি বিভাগে একটি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ১০টায় মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের অভ্যন্তরে এ ল্যাবটি উদ্ধোধন করেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।
“টেকসই কৃষি উৎপাদনের জন্য কৃষির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মডেল তৈরিকরণ” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ল্যাবরেটরিটি অনুমোদন ও স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পের আওতায় ‘ল্যাবরেটরি আব ক্লাইমেট রিসার্চ ফর ফিশ’ নামের ল্যাবটি তৈরি করা হয়। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্প ২০২৩ এর ডিসেম্বরে শেষ হবে।
উদ্ধোধন শেষে মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে ল্যাবরেটরির পরিচিতি ও বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে ল্যাবরেটরির গবেষণার বিষয়বস্তু, উপাদান, বিভিন্ন সেক্টর ও কার্যকারিতা নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন চলমান প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. শাকুর আহমেদ।
অধ্যাপক ড. এ কে. শাকুর আহমেদ বলেন, বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট উচ্চতাপমাত্রায় মাছের প্রজনন হার অনেকটাই কমে গেছে। তেলাপিয়া, পাঙাশ, শিং মাছের প্রজননের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় মাছগুলোর প্রজননের হার বেশি। ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর উপরে এবং ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে এই মাছগুলো প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মাছের প্রজনন হার সর্বোচ্চ রাখতে এবং পোনা উৎপাদন করতে অনুকূল পরিবেশ ও তাপমাত্রা বজায় রাখবে এই ল্যাবটি। এতে সারাবছর পোনা উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. লুৎফুল হাসান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ, প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. শাকুর আহম্মদ, উপ-প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ. মাহফুজুল হক উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে মাছের গবেষণায় সহায়ক ভুমিকা পালন করবে এই গবেষণাগার। এতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের খাদ্যে এসকল গবেষণার প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে। এইসব গবেষণায় সহায় হবে এমন উন্নত গবেষণাগার। এতে আমাদের ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় থাকবে। এসব গবেষণাগার সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, টেকসই সাইন্টিফিক কাজের জন্য মডেলিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন লজিক এবং গাণিতিক প্রক্রিয়ায় এই মডেলিং করা হয় এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর প্রভাব হিসাব করা হয়। আজ থেকে অর্ধশত বা শতবর্ষ পরে আজকের গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কোন পর্যায়ে যাবে সেটা হিসেব করা যাবে এই মডেলিং এর মাধ্যমে। এর সাহায্যে পরবর্তী গবেষণা বা উন্নয়নের সিদ্ধান্ত খুব সহজেই নেওয়া যায়। এতে গবেষকদের সময়, শ্রম ও দেশের অর্থ বাচবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।