নরসিংদীতে দাম্পত্য কলহের জেরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে আত্মহত্যা করেছে মো. সাইদুর রহমান রহিদ (৩৬) নামে এক যুবক। গতকাল নরসিংদী সদর উপজেলার পুরানপাড়া এলাকার রেললাইনে এ ঘটনা ঘটে।নরসিংদী রেলওয়ে ফাঁড়ি ইনচার্জ মো: শহীদুল্লাহ্ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিন ধরে কলহ চলে আসছিল। এরই জের ধরে তিনি আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যার আগে সাইদুর তার স্ত্রী ও সন্তানসহ তার একটি ছবি ফেসবুকে দিয়ে লেখেন— প্রতিটা ছেলের জীবনেই তার প্রথম প্রেম তার মা আর দ্বিতীয় জন হচ্ছে তার সহধর্মিণী তৃতীয় তো তার সন্তান আমার পারসেপশনটা ছোটবেলা থেকেই এমন। কিন্তু আমি আমার বিবাহিত জীবনে এসে দুটোকে ব্যালেন্স করতে পারলাম না। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল মাঝখানে তহুরা ও তার পরিবার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেল এমনটা কেন হয়? আজকে চার মাস তেইশ দিন আমরা সেপারেশনে আছি। এই প্রথমবারের মতো আমি আমার ভুলটা কোথায় হয়েছিল সেটা জানতে পারলাম গতকালকে রাত্রে। আমার পার্সেপশনে আমি সঠিক ছিলাম আছি। কিন্তু তহুরা তুমি যেই কারণটা গতকালকে বলছো এটা যদি তুমি আগেই বলতা আমাদের জীবনটা এমন হতো না। হয়তো ভিন্ন কোন মাত্রা যোগ হতে পারতো। অনেক চেষ্টা করছি তহুরা নিজের সাথে যুদ্ধও করেছি বেশ। সম্পদ সবসময় সম্মান বয়ে আনে না তহুরা মাঝে মাঝে সম্পদের জন্য সম্পর্কের পাশাপাশি অনেক জীবন ও চলে যায়। আমি অনেক আকুতি মিনতি করেছি যে ভুলে তুমি আমাকে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করিয়েছ আমি সেই ভুলটা সম্পর্কে অবগতই ছিলাম না। আমি ভাবতাম আমরা ভালো আছি সুখে আছি।
তোমার আমার সফর হয়তো এই পর্যন্তই ছিল। তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসবো কিনা জানি না তবে আমার প্রথম ভালোবাসা আমার মা আর বউ হিসেবে তুমি একজনই। আমি বাঁচার জন্য অনেক আকুতি মিনতি করেছি বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারলাম না। আজকেও তুমি নিজে আমাকে ডেকে এনে আমার সাথে তুমি আমাদের বাচ্চাকে দুচোখ ভরে দেখতে দিলেনা। আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবতেও পারি না সেই তুমি আমার সাথে প্রতারণা করলে। আমি তোমাকে একাধিকবার বলেছি আমি কাছের মানুষের কাছ থেকে আঘাত পেলে সহ্য করতে পারি না আমার সেই ক্ষমতা নাই। চলে গেলাম এই পৃথিবীতে আমার সফর এই পর্যন্তই ছিল। ভালো থেকো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আমার মৃত দেহটাকে বুঝে নিও। আমি তোমাদের সবাইকে অনেক ভালোবাসি আমার জীবনের থেকেও বেশি। আমার মেয়েটাকে অবশ্যই শিক্ষা দিও তোর বাবা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তোর বাবা লোভী ছিলেন না তোর বাবা সবকিছু তার কাছের মানুষকে দিয়ে দিতেই আনন্দ পেতেন। তোর বাবা আমাদের সবাইকে অনেক ভালোবাসতেন। তোর বাবা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। কত সুন্দর ছিল আমাদের জীবনটা ছবির মত সুন্দর। আমার শাশুড়ি আমার শ্যালক আর তাদের জমির দালাল মোশারফ সাথে আরেকজন আছে মামাতো শ্যালক আহমদ আলী তোরা কি কখনো জানতে চাইছিস আমার কাছ থেকে? কি তোরা কখনো শুনছিস আমার কথাগুলো? বোঝার চেষ্টা করছিস? আমি কি তোদের সাথে কখনও খারাপ ব্যবহার করেছি? তোরা আমাকে অনেক অপমান করছিস। ভালো থাকিস, তোরা সবাই ভালো থাকিস। এই পৃথিবীতে আমার সফর এই পর্যন্তই ছিল। পৃথিবী আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ বিদায় আলবিদা।
সাইদুর রহমান রহিদ রাজধানীর কাফরুল এলাকার মো. ইসলাম শেখের ছেলে। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে আইটি প্রোভাইডার হিসেবে চাকরি করতেন। ৭ বছর আগে তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার ঘোড়াদিয়া সোনাতলা এলাকার রহমান মুন্সীর মেয়ে তহুরা খাতুনকে বিয়ে করেন। তাদের কন্যা সন্তান রয়েছে।