উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে কেন যাবেন? জেনে নিন ৭টি সুবিধা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে গমন অনেকের কাছে ডাল-ভাত হলেও কারো কারো কাছে এটা স্বপ্নের মত। সবাই বিদেশের স্টুডেন্ট ভিসা পান না। আবার অনেকেই আছেন যারা একটু চেষ্টা করলেই পেতে পারেন বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ। এমনকি প্রতি বছর শত শত শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন বিদেশে। মূলত এটি নির্ভর করে শিক্ষার্থীর যোগ্যতার উপর।
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে কেন যাবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে হাজারটা কারণ অনায়েশেই বলা সম্ভব। দেশের সামগ্রীক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে গমন দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে কেন যাবেন?
শিক্ষা ব্যবস্থাটি এমন একটি ক্ষেত্র যা সবসময় প্রসারণশীল। যুগে যুগে শিক্ষার ক্ষেত্রে কখনই নির্দিষ্ট গন্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং দেশ, কাল, জাতি, সংস্কৃতি প্রভৃতির মাঝে বিস্তৃতিই শিক্ষার মৌলিক ক্ষেত্র ও সীমানা হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বিস্তৃত এই ক্ষেত্র ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণেই বর্তমানে শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখি হচ্ছেন। গবেষণা-মুখী শিক্ষা, পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা, রেসিডেন্সি পারমিট পাওয়ার সম্ভাবনা, নিজ ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর করার লক্ষ্যে আজকাল অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পাড়ি দিচ্ছেন বিদেশে।
বিদেশে অধ্যয়নের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী অপরিচিত একটি দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা, সংস্কৃতিকে ধারণ করার সুযোগ পান। তার সামনে উন্মোচন হয় হাজারো সম্ভাবনা। আজ বিদেশে পড়াশোনা করার শীর্ষ ১০টি কারণের একটি তালিকা আলোচনা করা হল।
১) নতুন দেশের স্বাদ আস্বাদনঃ
একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য বিদেশ গমন করে থাকলেও, বিশ্বকে দেখার যে সুযোগ তার সামনে আসে তা সে সর্বদা উপভোগ করে। দেশের বাহিরে অধ্যয়ন করে একজন শিক্ষার্থী নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, রীতিনীতির সাথে খাপ খাইয়ে একেবারে নতুন একটি দেশের অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকেন। অধ্যয়নের পাশাপাশি নতুন দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার লোভনিয় সুযোগও হাতছাড়া করেননা শিক্ষার্থীরা।
উপরন্তু, আপনি যখন বিদেশে থাকবেন, আপনি যে দেশে অধ্যয়ন করছেন শুধুমাত্র সেই দেশেই ভ্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না – আপনি প্রতিবেশী দেশগুলিকেও চষে বেড়াতে পারবেন, দেখতে পারবেন! উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ফ্রান্সে অধ্যয়ন করতে গমন করেন সেক্ষেত্রে আপনার কাছের লোভনীয়, সুন্দর শহর লন্ডন, বার্সেলোনা এবং রোম সহ ইউরোপের বিভিন্ন অংশে ভ্রমণ করার বিকল্প থাকবে।
২) উন্নত শিক্ষা গ্রহণঃ
বিদেশে অধ্যয়নকে আপনি কেন বিবেচনা করছেন বা আপনি কেন যেতে চান বিদেশে? অবশ্যই পড়াশোনার নতুন ক্ষেত্রে নিজের জ্ঞানকে পরিপক্কতা দিতেই আপনার এই প্রচেষ্টা। বিদেশে এসে শিক্ষা লাভেন শত সুযোগ, ক্ষেত্র আবিস্কার করবেন যা আপনি বাড়িতে বসে চিন্তাও করেননি। শিক্ষা হল বিদেশ ভ্রমণের কেন্দ্রবিন্দু তবে সঠিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুজে নেওয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৩) বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিঃ
উচ্ছশিক্ষার জন্য দেশের বাহিয়ে যাওয়ার অন্যতম একটি প্রধান সুবিধা হল একই সাথে নানা রকমের, নানা সংস্কৃতির মানুষের সংস্পর্শে যেতে পারবেন। আপনি যখন নতুন একটি দেশে পা দিবেন, তখন দেশটির স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে মুগ্ধ করবে।
সাধারণত বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্ররা পড়তে আসেন। সেক্ষেত্রে একই সাথে আপনার সামনে নানারকম সংস্কৃতির মানুষের সাথে পরিচয়, উঠাবসার সুযোগ পাওয়া যায়। যার ফলে আপনি সাংস্কৃতির বিনিময়ের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতিকে তাদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। একইসাথে ওইসব সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক এবং নিয়মনীতি সম্পর্কে জানা যায়। তাছাড়া তাদের চোখে নিজের দেশের সংস্কৃতি কেমন তা সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।
৪) নতুন ভাষায় দক্ষতা অর্জণঃ
একজন শিক্ষার্থী যখন বিদেশে অধ্যয়নের পরিকল্পনা করেন, তখন তার ভিতরে আরো একটি বাসনা কাজ করে। আর সেটা হলো সম্পূর্ন নতুন একটি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের আকাঙ্খা। আপনি সেখানে নতুন ভাষাটি অনুশীলনের যথেষ্ঠ সুযোগ পাবেন, সুযোগ পাবেন নতুন ভাষাকে দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করার। তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন ভার্সিটি তাদের বিদেশি ছাত্রদের জন্য ভাষা শিক্ষার আনুষ্ঠানিক কোর্সও অফার করে থাকে। শিক্ষার্থীরা নিজেকে সম্পূর্ন নতুন সংস্কৃতি ও ভাষার সাথে পরিচিত করার সুযোগ পান।
৫) ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগঃ
একজন শিক্ষার্থী যখন পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরেন, তখন তার অর্জিত নতুন সাংস্কৃতিক জ্ঞান, ভাষার দক্ষতা, অর্জিত শিক্ষা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি চাকরির বাজারে অন্য সাকলের থেকে আলাদা ভাবে নিজেকে প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। বলাই বাহুল্য এসকল গুনাবলী একজন নিয়োগকর্তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয়। যার ফলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে এসে চাকরির বাজারে অন্যের তুলনায় এগিয়ে থাকা যায়।
তাছাড়া বিদেশে থাকাকালীন একজন শিক্ষার্থী যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তার সঠিক ব্যবহার করে নিজের ক্যারিয়ারে খুর দ্রুতই উন্নতি করতে পারে। অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে সেখানেই থিতু হয়ে থাকেন।
৬) আত্মনির্ভরশীল হতে সহায়কঃ
পরিবার ছেড়ে বিদেশে পড়াশোন করতে গেলে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার এক চরম সুযোগ চলে আসে। কারন সেখানে পরিবারের শাসন থাকে না, থাকে না বাধা নিষেধ। যার ফলে প্রতি মুহুর্তে নিজেকে আবিস্কারের সুযোগ থাকে একজন শিক্ষার্থীর সামনে। নিজের কাজগুলো নিজেকেই করতে হয়। এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার প্রাবণতা সৃষ্টি হয়, যেটা পরিবারের সাথে থাকলে হয়ত হত না। প্রবাসজীবনের এমন প্রতিটি অভিজ্ঞতা একটা মানুষের মাঝে পরিবর্তন এনে তাকে পরবর্তী জীবনের জন্য পারফেক্ট হিসেবে তৈরি হতে সহায়তা করে।
৭) দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগঃ
বিদেশের নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় প্রবাসজীবনের পড়াশোনা। নানাকরম মানুষের সাথে কাজ করা, তাদের সাথে মানিয়ে চলা, তাদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এর ফলে চাকুরীর বাজার সহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিদেশে পড়ালেখা করা একজন ছাত্র অন্যদের তুলনায় এগিয়ে থাকে বহুলাংশে।
দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার স্বপ্ন থাকে অনেকেরই। কিন্তু এই স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে যখন বিদেশে গিয়ে মানুষ প্রত্যাশার সাথে বাস্তবতার মিল খুঁজে না পায়। এজন্য আমাদের সকলেরই উচিত আগের সব সুবিধা-অসুবিধা খুঁটিয়ে দেখা, অসুবিধাগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পারবো কি না তা দেখা। এই সবকিছু ভেবে বিদেশে পড়ালেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তাহলেই সুবিধাগুলোর সঠিক ব্যবহার আর অসুবিধাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
পরবর্তী পোস্টে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অসুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা থাকবে। লেখাটি পড়তে চোখ রাখুন রাইজিং ক্যাম্পাসের স্কলারশিপ ক্যাটাগরিতে।