মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন ও সেমিস্টার ফি কমানোর দাবি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ চার মাসেরও বেশি সময় ধরে দাবিগুলোর বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চললেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ তাদের। সবশেষ বৃহৎ আকারে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, যেহেতু এটি দেশের একমাত্র স্পেশালাইজড মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ করতে হবে। পাশাপাশি সেমিস্টার ফি হ্রাস করে চলতি সেমিস্টার থেকেই শিক্ষার্থীদের কাঙ্খিত যৌক্তিক সেমিস্টার ফি চালু করতে হবে।
গত ১৫ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন উপাচার্য রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী এ বিষয়ে আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে আসে। তবে এরপর ১ মাস পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এর পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাও প্রায় চলে এসেছে ফলে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছে, আগামীকাল ১৩ জানুয়ারি (সোমবার) এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না এলে ১৪ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনে যাবে তারা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে ‘মার্চ টু ইউজিসি’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে তাদের দাবির বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হলেও দায়সারা চিঠি পাঠালেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা হতাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন ও ইউজিসির উদাসীনতা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, দেশের একমাত্র মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ করা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় অনেক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার ফি দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ। প্রত্যেক সেমিস্টারে যা ১২-১৫ হাজার টাকা। এ ফি কমানোর দাবি তাদের।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে আজ ১২ জানুয়ারি (রবিবার) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসে। তবে এই আলোচনায়ও শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে তাদের অপারগতার সুর প্রকাশ করে প্রশাসন।
বিশেষ করে বিগত ৯ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) নারী শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমে গোপনে ভিডিও ধারণকালে শিক্ষার্থী আশরাফুজ্জামান নূর রিজভী শিক্ষার্থীদের কাছে ধরা পড়লে প্রথমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পরবর্তীতে পল্লবী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আজকের আলোচনায় এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন তুললে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করে।
এমতাবস্থায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্ব সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন ও সেমিস্টার ফি কমানোর দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম এবং মার্চ টু ইউজিসি কর্মসূচির পাশাপাশি আগামীকাল ১৩ জানুয়ারি (সোমবার) থেকেই সকল ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যদিকে উক্ত শিক্ষার্থী আশরাফুজ্জামান নূর রিজভী’র ছাত্রত্ব বাতিল করে নোটিশ জারি ও তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের দাবি উঠেছে। এ ধরনের জঘন্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তুলেছে তারা।