ফিলিস্তিনি শিশুদের মানবিক সাহায্যে এগিয় আসুন
আফ্রিয়া অলিনঃ ফিলিস্তিন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়া স্বত্তেও বহুবছর ধরে অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীরণের স্বীকার হচ্ছে। ফিলিস্তিনের বুকে ঝরছে অসহস্র রক্ত। ইসরাইলী সেনারা নিরিহ ফিলিস্তিনদের ওপর চালাচ্ছে নির্মম হত্যাযগ্যে। ফিলিস্তিনদের কেউ হচ্ছে সন্তান হারা,কেউ হচ্ছে বিধবা,কেউবা হচ্ছে অনাথ,এতিম আর কেউ সপরিবারে লুটিয়ে পরছে ইসরাইলী তোপের মুখে।
ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যের দক্ষিণাংশের একটি ভূখণ্ড, যা ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর মাঝে অবস্থিত। ফিলিস্তিনের অপরাপর নামগুলো হলোঃ কনান, জায়ন, ইসরায়েলের ভূমি, দক্ষিণ সিরিয়া, জুন্দ ফিলিস্তিন এবং পবিত্র ভূমি।
ইসরাইল ফিলিস্তিনের ওপর যে নৃশংস হত্যাযগ্যে চালাচ্ছে, এর থেকে রেহায় পায়নি নবজাতক শিশু,বালক বালিকা,কিশোর,তরুণ সহ সকলেই। শিশুর আর্তনাদ আর আহাজারিতে অন্ধকারময় হয়ে গেছে। শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে গোটা পৃথিবী। ইসরায়েলি মৃত শিশু দেখে ইসরায়েলিরা শোকের ভারে যতটা নুয়ে পড়ে, আর কোনো মৃত শিশু দেখলে তারা অতটা দুঃখ পায় না। এটাই মানবচরিত্রের বড় দুর্বোধ্য।
গাজার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, দুটি সাদা প্লাস্টিকের ব্যাগে ক্ষতবিক্ষত আটটি শিশুর মরদেহ, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে। প্রতি ব্যাগে চারটি করে শিশু। ব্যাগগুলোর গন্তব্য গণকবর। ওরা গাজার শিশু। আর কত রক্ত ঝরালে ক্ষান্ত হবে ইহুদীরা?
টুইটারে একটি কার্টুন অনেকেরই নজর কেড়েছে। কার্টুনটিতে দেখা যাচ্ছে, একজন ফিলিস্তিনি নারীকে দুইভাবে আঁকা হয়েছে। এক পাশে দেখা যাচ্ছে, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। আরেক পাশে সেই মা বহন করছেন শিশুসন্তানের মরদেহ। শিশুটি রক্তাক্ত, তার দেহে জড়ানো ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যবাহী রুমাল ও লাল-সবুজ পতাকা। আর মায়ের চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
আলা আল লাগতা নামে এক কার্টুনিস্ট এ কার্টুনটি এঁকেছেন। তিনি আরবিতে একটি ক্যাপশন লিখেছেন। সেটির ইংরেজি করা হয়েছে এভাবে: ইন প্যালেস্টাইন, দ্য মাদার ক্যারিজ হার সন টুয়াইজ! এর মানে দাঁড়ায়, একজন ফিলিস্তিনি মা তার ছেলেকে দুইবার বহন করেন—একবার গর্ভধারণের সময়, আরেকবার মৃত্যুর সময়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে বের করা গাজার শিশুদের মরদেহ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন তিনি প্রথমে বলেন ইসরায়েলি শিশুর কথা যার বাবা নিহত হয়েছে—এবং তার হত্যাকারীরা ক্রন্দনরত অনাথদের সামনে ফ্রিজ খুলে খাবার বের করে খেয়েছে। এরপর তিনি আসেন গাজায় নিহত হওয়া শিশুদের প্রসঙ্গে: ‘ওদের চোখের দিকে যখন তাকাই, আমার নিজের সন্তানদের দেখি। ধাক্কা না খেয়ে কীভাবে থাকতে পারি?’
শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। আর ইসরাইল ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা করে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ কে অন্ধকূপে ঠেলে দিচ্ছে। যে শিশুদের আজ প্রাণ ভরে শৈশবকাল কাটানোর কথা, মনে খুলে হাসি,খেলাধুলা,পড়াশোনা ও পরিবার পরিজনের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর কথা সেখানে আজ তারা ভয়ংকর অতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কখন না জানি ইহুদী সৈন্যরা তাকে, তার পরিবার পরিজনকে হত্যা করে। শৈশবকাল সবার সুন্দর হয় না ফিলিস্তিনি শিশুরা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আজ তাদের দিন কাটে কান্না,ভয়,আতঙ্ক আর আহাজারিতে। তাদের এ করুণ পরিণতি মুসলিম বিশ্বে শোকের ছায়া নামিয়েছে। মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিন কে সর্বাত্মক সহযোগিতার ও সহমর্মিতা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফিলিস্তিন – ইসরাইল যুদ্ধের অবসান এখনো ঘটে নি। এ যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি ও নিহতের পরিমাণ অসংখ্য।
আফগানিস্তান, আলজেরীয়া, বাংলাদেশ, ব্রুনাই, বাহরাইন, কমরেডস, কিউবা,ইন্দোনেশীয়া, ইরান সহ আরো অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে সর্মথন করছে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সকল দেশ ফিলিস্তিনকে ত্রাণ, অর্থ, অস্ত্র সহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান করছে।
ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতি বাড়িয়ে দিতে হবে সর্বোত্তম সহযোগিতার হাত। এতিম, অসহায়, অনাথ,ঘৃহহীন শিশুদের খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে নিশ্চিত করতে হবে তাদের নিরাপত্তা। তাদের মানসিক অবনতি,ভয়,বিষণ্ণতা দূর করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।আর ভবিষ্যৎ এর জন্য তাদের মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।
জাতি সংঘ ও অন্যান্য সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ভিত্তিতে এ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে। ফিলিস্তিনি শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।
আফ্রিয়া অলিন, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।