এমন একটা সময় ছিল তখন কোনো দম্পতির ঘরে সন্তান না এলে সব দোষ স্ত্রীর ঘাড়ে চাপানো হতো। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করে দেয় যে স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কেউ হতে পারে বন্ধ্যত্বের শিকার। উভয়ই হতে পারে সন্তান না হওয়ার কারন।
সম্প্রতি ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান এনএইচএসের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, যে দম্পতিদের সন্তান হচ্ছে না, তাদের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এর কারণ হচ্ছে – স্বামীর শুক্রাণুর মান নিম্ন ও সংখ্যা কম হওয়া।
পুরুষদের বন্ধ্যত্বের মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন শুক্রাণু তৈরি না হওয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুক্রাশয়ের গুণগত ত্রুটি, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুক্রাণু বেরোনোর পথে প্রতিবন্ধকতার কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া হরমোনজনিত নানা সমস্যার কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সহজে বলা চলে, পুরুষদের বন্ধ্যত্বের মূল কারণ: বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কম হওয়া।
শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বিষয় চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে নিম্নের কারণগুলোঃ-
• পুরুষের দেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা কম হরমোন উৎপাদন।
• যৌনাঙ্গের কোনো সংক্রমণ যেমন ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া, বা প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের প্রদাহ।
• অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, গাঁজা এবং কোকেনের মতো মাদক সেবন।
• অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া বা স্থূলতা।
• ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম নামে এক ধরনের জেনেটিক সমস্যা।
• কোনো কোনো শিশুর জন্মের সময় অণ্ডকোষ দেহের ভেতরেই রয়ে যায়। এটিও শুক্রাণুর সমস্যা ঘটাতে পারে।
• কিছু কিছু ওষুধ, যেমন টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, দীর্ঘকাল ধরে এ্যানাবোলিক স্টেরয়েড ব্যবহার, কেমোথেরাপির মতো ক্যান্সারের ওষুধ, কিছু কিছু এ্যান্টিবায়োটিক বা বিষণ্ণতা কাটানোর ওষুধও শুক্রাণুর মান ও সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
• ক্রোমোজোমঘটিত রোগ যেমন ক্লাইন, ফিলটার সিনড্রোম প্রভৃতির জন্য শুক্রাণু কমে যাওয়া
• ড্যারিকোসিন নামক অণ্ডকোষের রোগ, সিলিয়াক ডিজিজের কারণেও শুক্রাশয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বহু ক্ষণ ধরে সাইকেল চালানো, অতিরিক্ত তাপের সামনে বসে কাজ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও শুক্রাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শুক্রাণুর সংক্রমণ হলে তার নড়াচড়ার ক্ষমতা লোপ পায়। ফলে বন্ধ্যত্ব অবধারিত। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ওষুধের সাহায্যে শুক্রাণুর সংক্রমণ সারানো যায়। কিছু ক্ষেত্রে শুক্রাণুর কাউন্টও বাড়ানো সম্ভব হয়।