জাবি প্রতিনিধি : ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান।
রবিবার (২০ অক্টোবর) বিকালে অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান নিজেই গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব উজ্জল হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি আইন, ২০১০ এর ধারা-১০(২) অনুযায়ী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদুর রহমানকে অন্য যে কোন পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সাথে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে দুই বছর মেয়াদে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) মহাপরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো।
জানা যায়, অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়া পরবর্তীতে জাপানের টোকিও ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডিসহ পোস্ট ডক করেন। জাপানের ‘জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব সাইন্স’ ও যুক্তরাজ্যের ইনস্পায়ারসহ বিশ্বের নানা প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষণা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি কর্মজীবনে মাইক্রোবায়াল বায়োটেকনোলজি, বায়োইনফরমেটিক্স ও ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এছাড়া অধ্যাপক শাহেদ একাডেমিয়া ও শিল্পের মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি করেছেন এবং উভয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান ২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বায়ো-রিসোর্সেস টেকনোলজি এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি ল্যাবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের উপ-পরিচালক হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন।
এছাড়া অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদুর রহমানের আন্তর্জাতিক জার্নালে বহুল সংখ্যাক গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের বায়োটেকনোলজি গ্রাজুয়েটদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েটসের প্রতিষ্ঠাতা ও দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি সমগ্র বাংলাদেশের বায়োটেক গ্রাজুয়েটদের অন্যতম একজন অভিভাবক হিসেবে সুপরিচিত, যিনি বায়োটেক গ্রাজুয়েটদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া, অধিকার বাস্তবায়নে অভিভাবক হিসেবে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন। অধ্যাপক শাহেদ বাংলাদেশে বায়োটেক গবেষণা সুযোগ সৃষ্টি ও বায়োটেক পেশাকে বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বায়োটেকনোলজি বিষয়ক পলিসি সংস্কারের নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য হলেও অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছিলেন। অধ্যাপক শাহেদের স্ত্রী বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক উম্মে সালমা যোহরা ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সাদমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় আশ্রয় দেন অধ্যাপক শাহেদ ও উম্মে সালমা দম্পত্তি। এমনকি তারা আন্দোলনে অংশ নিতে এসে পুলিশের আক্রমণের শিকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে জাহাঙ্গীরনগর কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির (অরুনাপল্লী) গেট খুলে দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়া অধ্যাপক উম্মে সালমা যোহরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থাও করেন।
নিয়োগের বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে বায়োটেকনোলজির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম। এই সেক্টরে আমার যেটুকু অবদান আছে, যে অভিজ্ঞতা রয়েছে সেটার ভিত্তিতেই আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়োগের মাধ্যমে আমার কাজের সুযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে।’