The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

নিম্ন আয়ের মানুষটির ঘরেও ইদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক

মো: বাইজীদ আহম্মেদ রনিঃ “ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ” গানটির মতো আসলেই কী সকল শ্রেণির আয়ের লোকের জন্য ইদ খুশির হয়ে থাকে? দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ইদ উদযাপন করে বিশ্ববাসী। আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারগুলো ইদের আনন্দ উপভোগ করলেও এদেশে নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জন্য ইদ আনন্দ বয়ে আনতে পারে না। এই পরিবারগুলো যেন কোনো ভাবে ইদের দিনটি পার করলেই বেঁচে যায়।

ইদ মানে আনন্দ,ইদ মানে খুশি। প্রতি বছরের মতো এবছরও ইদকে সামনে রেখে নানা আয়োজন নিয়ে উঁকি দিচ্ছে ইদ-উল-ফিতর। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সব জায়গায় শুরু হয়ে গেছে ইদ-উল- ফিতর এর প্রস্তুতি। গ্রাম, শহর-বন্দরে বেড়েছে মানুষের উপচে পড়া ভীড়। কারও কেনাকাটা করার ব্যস্ততা, কেউ বা বাড়ী ফিরতে মরিয়া। সবকিছু ছাপিয়ে ঈদকে কিভাবে সকল শ্রেণির মানুষের জন্য আনন্দময় করা যায় সেটিও আমাদের ভাবতে হবে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট যৌথভাবে পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৩ সালে দারিদ্র্যের হার দেশের গ্রামীণ এলাকায় ২১.৬ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৮.৭ শতাংশ। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে ২৮ শতাংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে ইদ কী আনন্দের হতে পারে?

ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করা সচ্ছল মানুষদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে এই দায়িত্ব শুধু ৫ বা ১০ টাকা ইদের নামাজের আগে আর্থিক সাহায্যপ্রার্থীদের দান করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা আত্নসম্মানের কারনে আপনার কাছে সহযোগিতা চাইতে আসবে না। আমাদের উচিত ঈদের দিন পাশের বাড়ীর নিম্ন আয়ের মানুষটির খোঁজ নেয়া। তারা কী খাচ্ছে, বাসায় বাজার করেছে কিনা ইত্যাদি জানার চেষ্টা করা এবং সাধ্যমত সহযোগিতা করা। আপনি বা আমি ব্যাগ ভর্তি বাজার করে দেয়ার সক্ষমতা না রাখলে অন্তত এক বাটি রান্না করা খাবার কিন্তু ভাগাভাগি করাই যায়। আনন্দ ভাগাভাগিতে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায় এবং আত্নতৃপ্তিও পাওয়া যায়। আমরা হয়তো বিপুল পরিমাণ নিম্ন আয়ের মানুষদের রাতারাতি সচ্ছল করতে পারবো না কিন্তু আনন্দ ভাগাভাগি করে একটি দিন তাদেরকে অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারি।

নিম্ন আয়ের মানুষের মজুরি এবং মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীর বেতন যাতে ঈদের আগেই পরিশোধ করা হয় সে বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। অন্তত ঈদের আগে কয়েকদিন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে প্রশাসনের যথাযথ মনিটরিং নিশ্চিত করা গেলে কিছুটা হলেও নিম্ন আয়ের মানুষের উপর বাড়তি চাপ কমে যেতো।

যারা যাকাতের অর্থ পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের উচিত সে অর্থ দিয়ে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারনে অনেক পরিবারের পক্ষেই ঈদে একটু ভালো খাবার খাওয়া সম্ভব হবে না। আপনার যাকাতের টাকায় ক্রয়কৃত খাবার অনেক পরিবারের ঈদকে আনন্দময় করতে পারে।

সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা সহমর্মিতার শিক্ষা পাই, রোজা আমাদের উদার হতে সহায়তা করে। তাই ঈদে শুধু নিজের পরিবারকে ভালো রাখা মানে উদারতা নয়। তাই আসুন সামর্থ্য অনুযায়ী নিম্ন আয়ের প্রতিবেশীর খোঁজ নেই, তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে ঈদ উল ফিতরের দিনটিকে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত করি।

লেখকঃ প্রভাষক (মার্কেটিং), ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.