The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ছাত্রীর জেলায় নেই বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজ

মোঃ আয়নুল ইসলামঃ ১৮৮২ সালের ১লা এপ্রিল মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মনু নদী তীরবর্তী বাজারটি কেন্দ্র করে ২৬টি পরগনা নিয়ে দক্ষিণ শ্রীহট্ট মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ শ্রীহট্ট বা সাউথ সিলেট নামের বদলে এ মহকুমার নাম মৌলভীবাজার রাখা হয়। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার মহকুমাটি জেলায় উন্নীত হয়। এই জেলার আয়তন ২৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার। জেলায় প্রায় ২১,২২,৭০৩ জন মানুষের বসবাস। জেলার সাক্ষরতার হার ৭৫.৭৪ শতাংশ। জেলায় ৩ টি সরকারি কলেজ, ২০ টি বেসরকারি কলেজ,৫ টি জাতীয়করণকৃত কলেজ, ১৯০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৭১ টি মাদ্রাসা, ০৪ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে জেলার স্কুল ও কলেজের বেশ সুনাম রয়েছে। তবে বিপত্তি ঘটে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। কারণ এ জেলায় নেই কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজ। এজন্য শিক্ষার্থীদের দৌড়াতে হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য দূরবর্তী জেলায়। জেলায় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সম্প্রীতি দেখা যাচ্ছে এ জেলার শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা বিমুখ হচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলার বহু আলোকিত সন্তানের দেশের অগ্রগতিতে অবদান রয়েছে যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ছাত্রী লীলা নাগ রায়, সাবেক পাকিস্তান আমলের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী দেওয়ান আব্দুল বাছিত, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রাহমান, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আজিজুর রহমান, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলি, বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. খলিকুজ্জামান, বর্তমান কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ ও সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন।

মৌলভীবাজার জেলায় এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও একটি সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। জেলা সদরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল থাকলেও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় প্রায়ই রোগীকে রেফার করা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সিলেট অনেকটা দূরে হওয়ায় অনেক রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায়। তাই এ জেলার মানুষের প্রাণের দাবি মৌলভীবাজারে মেডিকেল কলেজ চাই। এ দাবি নিয়ে দীর্ঘ অনেক বছর থেকে মৌলভীবাজারবাসী বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সভা, সমাবেশ ও গনসাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে।

জেলার সর্বস্তরের মানুষের এই দাবি প্রধানমন্ত্রীসহ সকল দপ্তর পর্যন্ত গেলেও কি কারণে এখনো আলোর মুখ দেখেনি তা সবার অজানা ।

তাই জেলার সাধারণ মানুষ মনে করেন, “মৌলভীবাজারবাসীর এই দাবি মৌলভীবাজার জেলার জনপ্রতিনিধিদের প্রধানমন্ত্রীর কানে বারবার পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা উচিত।”

জেলায় ৯২ টি চা বাগান,১০ টি রাবার বাগান, ১২৫০ হেক্টর আয়তনের জীববৈচিত্রে ভরপুর বন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড ও গহীন অরণ্যে হামহাম জলপ্রপাতসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান থাকায় মৌলভীবাজার জেলা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন জেলা। এছাড়াও মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় তৈরি হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি আতর “আগর-আতর”। তাই মৌলভীবাজারকে আগর-আতরের জেলা বলা হয়। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি হাওরের অবস্থানও এ জেলায়। জেলায় মোট ৪৫৭৫টি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রয়েছে। তন্মধ্যে শীতলপাটি, বেত, কাঠ ও বাঁশশিল্প উল্লেখযোগ্য।

মৌলভীবাজার জেলার শিক্ষিত সমাজ মনে করেন, “আমাদের জেলায় প্রচুর গবেষণা ও কাজের সুযোগ রয়েছে। তাই একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করলে সেটি মৌলভীবাজার জেলা ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”

মৌলভীবাজার জেলা মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয় না পাওয়াসহ অনেকক্ষেত্রে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকে রাজনৈতিক অনৈক্য, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অভাব, রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা এবং সরকারের অসহযোগিতাকে দায়ী করেন।

উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার জেলার অনেক প্রবাসী রয়েছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশে। তারা রেমিটেন্স পাঠানোর মাধ্যামে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সাহায্য করেন। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ জেলার মানুষ দেশের অগ্রগতিতে প্রতিনিয়ত ভূমিকা রাখছেন। তাই জেলার সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের দাবি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা সরকারেও উচিত বলে মনে করেন এ জেলার মানুষ।

তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন

লেখকঃ শিক্ষার্থী, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.