The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ২রা জুলাই, ২০২৪

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুণর্বহালের বিরুদ্ধে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জাবি প্রতিনিধিঃ সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা নিয়ে হাইকোর্টের রায় প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুইশত শিক্ষার্থী।

সরকারি নিয়োগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহীদ মিনার হয়ে প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। এরপর ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক পাঁচ মিনিট প্রতিকী অবরোধ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। এসময় তাদের ‘একাত্তরের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারাবাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করায় আমরা আজ প্রতিকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি। কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।’

মাহফুজুল আলম মেঘ বলেন, ১৮ সনের কোটা আন্দোলনের পর পুনরায় কোটা বহাল করার যেই পায়তারা চলছে, তা আদতে নেক্কার জনক এবং দেশের মেধাবী, যোগ্য চাকুরিচ্ছুক মানুষের সাথে বেইনসাফি। এই অন্যায় সিদ্ধান্ত কখনোই মেনে নেয়া যায়না। একটি স্বাধীন দেশে এরকম বৈষম্য থাকবে, তা কখনোই আমাদের কাম্য নয়। এর জন্য যতো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার প্রয়োজন সে পর্যন্ত যাবে এদেশের আপামর জনতা।

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ মাহমুদ তন্ময় বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি সমান অধিকারের দাবিতে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক এমন কোনো সিদ্ধান্তের পক্ষ নেবে না।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পত্রে উল্লিখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিতের সাথে সাংঘর্ষিক। আমাদের এ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের আন্দোলন।’

স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী জাহেদ ভূইয়া বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়া।স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি ৪ টি। এগুলো হলো স্মার্ট সরকার,স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি,স্মার্ট সমাজ।

প্রশাসনিক কাজে মেধাবীরা অংশ না নিলে স্মার্ট সরকার গঠন সম্ভব নয়।তাই স্মার্ট সরকার গঠনের লক্ষ্যে কোটা বাতিল চাই।মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে।মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কেন্দ্র করে, অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিলে, তাদের প্রতি জনগনের শ্রদ্ধাবোধ কমে যাবে বলে আমি মনে করি।

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লাদিবা নীরা বলেন, আমার বাবা-দাদা আজীবন সৎ থেকেছে। টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কিনেনি। সন্তানকে শিখিয়েছেন, “সৎ পথে থেকে পরিশ্রম করো ফল অবশ্যই পাবে।” এসব কী আজকের দিন দেখার জন্য! ১৯৭১ সালে আমাদের যুদ্ধ কেন হয়েছিলো? যাতে পাকিস্তানিদের বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আজকে আমরা সেই চিত্র কী দেখছি না? এখন হয়তো প্রশ্ন হতে পারে, তারা দেশের জন্য করেছে, রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। তাদের জন্য কি আমাদের কৃতজ্ঞতা নেই? অবশ্যই আছে। তাদের ত্যাগ, বীরত্বকে সম্মান করি। তাদের জন্যই আমরা। তাদের জন্য করা আমাদের কর্তব্য।

তাই বলে, তিন প্রজন্ম ধরে দেশের বেশিরভাগ মানুষকে বঞ্চিত করে সুবিধা করে দেয়া কেমন যুক্তি? সাধারণত, দেখে থাকি কোটায় তারাই সুবিধা পায় যারা মেরিটে পিছিয়ে। তার নিজের যোগ্যতা নেই, কিন্তু একজন যোগ্য মানুষ, যে পরিশ্রম করছে, তার সুযোগ ছিনিয়ে নিচ্ছে বাপ-দাদার জোরে। কোনো মুক্তিযোদ্ধা কী এই দিন দেখার জন্য যুদ্ধ করেছিলো? যদি উত্তর হ্যা হয়, তাহলে তার দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ আছে। বঙ্গবন্ধু মনে হয়, এমন সোনার বাংলাদেশ চায়নি। যদি ভুলে না যাই তবে, তাঁর দেওয়া সংবিধানের মূলমন্ত্রগুলো দেখি, উত্তর পেয়ে যাবো। ছোটবেলা থেকে পরিশ্রম করছি। কিন্তু, কী দেখছি! টাকা, লবিং আর কোটার কারণে আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গাই নেই! দেশত্যাগ করতে বলছেন? তাও তো পারবোনা, সোনারবাংলার স্বপ্ন তো আমরাও দেখি। অগ্রযাত্রার সারথি আমরাও হতে চাই।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.