The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী হারাচ্ছে কুবি

হেদায়েতুল ইসলাম নাবিদ, কুবি: আশা প্রত্যাশার পারদ নিয়ে ২১ সালে ১৭ অক্টো বর ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু হয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা। এবার এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছের যাঁতাকলে পড়ে শিক্ষার্থী হারাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, প্রতি বছর ১০২৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যথাসময়ে ক্লাস শুরু করলেও বছর শেষে সিট খালি রেখে পাঠদান চালিয়ে যেতে হয় বিভাগগুলোকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২-২৩ সেশনে ভর্তি হয় ১০২৮ জন শিক্ষার্থী। তবে বছর না পেরোতেই হারাতে হয়েছে প্রায় ১১৮ জন শিক্ষার্থীকে। ১১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেছে বলে জানা গেছে৷ এছাড়াও ৪১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসির মূল সার্টিফিকেট উত্তোলন করার পর নির্ধারিত সময়েও জমা দেয়নি বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার দপ্তর৷ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারাও হয়ত কোথাও না কোথাও ভর্তি হয়ে গিয়েছে।

রেজিস্ট্রার দপ্তরের সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত , রসায়ন ও কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ার বিভাগে ৮ জন; ফামের্সী বিভাগে ৭ জন; নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৬ জন; পরিসংখ্যান ও একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে ৪ জন; পদার্থ, ইংরেজি, অর্থনীতি, আইসিটি বিভাগে ৩ জন; মাকের্টিং বিভাগে২ জন; বাংলা, লোক প্রশাসন ও অর্থনীতি বিভাগে ১ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেছে।

সার্টিফিকেট জমা না দেয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সার্টিফিকেট উঠিয়ে জমা দেয়নি রসায়ন বিভাগের ৮ জন, গণিত ৬ জন, বাংলা, নৃবিজ্ঞান ৪ জন পদার্থ, পরিসংখ্যান ৩ জন, লোক প্রশাসন, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ও মাকের্টিং বিভাগে ২ জন , প্রত্নতত্ত্ব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ার, আইসিটি, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ ও ইংরেজি ১ জন শিক্ষার্থী।

ভর্তি বাতিল ও সার্টিফিকেট জমা না দেওয়ার কারণ হিসেবে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান , সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্বকীয়তা হারিয়েছে। সারা বছর ভর্তি প্রক্রিয়া চালু থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবে, সে বিষয়ে মন স্থির করতেই পারে না। ফলে শিক্ষার্থীরা এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। এতে সিট ফাঁকা অবস্থায় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয় কুবিকে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এটাতো বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারেনা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি পরিবেশ, যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে নরনারী এক জায়গায় এসে জড়ো হবেন, এক জায়গায় থাকবেন, তাদের মধ্যে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির ভাবের দেওয়া-নেওয়া হবে। এখানে মনের সঙ্গে মনের দ্বন্দ্ব, জ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞানের সংঘর্ষে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হবে। পুরোনো জ্ঞানের চুলচেরা বিশ্লেষণ, পরিমার্জন,পরিবর্ধন ও পরিবর্তন হবে। কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এসব হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ স্থাপন, কৃষ্টি-কালচার, ভাষা, পোশাক এবং সহনশীল মনোভাব তৈরি ব্যর্থ হচ্ছে।

জান্নাতুল নাইম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে । বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার মূল কাজ দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। কিন্তু জেলায় জেলায় যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো খোলার হয়েছে সেখানের শিক্ষার্থীদের পড়ানোর মতো দক্ষ শিক্ষক না থাকে তাহলে এসব বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা প্রত্যাশার সিকিটুকু ও পূরণ করতে পারে নাই বলে মনে করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড মোহাম্মদ জাকির সাঈদ উল্লাহ, তিনি বলেন যতটুকু আশা নিয়ে শুরু করছিল তার কিছুই হয়নি। বরং সবকিছু আরও জটিল হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সিট খালি থাকা নিয়ে আমরা কনসার্ন আছি। কিন্তু গুচ্ছের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এই বছর না প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট খালি থেকে যাচ্ছে। এবিষয়ে গুচ্ছের দায়িত্বরতদের কাজ করতে হবে।

অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো একাডেমির মিটিং পাশ হয়ে তারপর আসতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থী যদি চলে না যায় সেক্ষেত্রে ও একটা জটিলতা সৃষ্টি হবে।

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. তানজিম খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট খালি থাকা দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। গুচ্ছের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলতেছে। তদন্ত আগামী সপ্তাহে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই আমরা পদক্ষেপ নেবো। তবে এই ক্ষতি পূরণ করার কোন অপশন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের বিষয়ে তো বলতে পারতেছি না তবে সামনে যাতে এই ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে আমরা অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিবো। তিনি আরও বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর জন্য গুচ্ছ প্রপ্রার পদ্ধতি না। এখন গুচ্ছ থাকবে কি থাকবে না, নাকি বিকল্প কোন কিছু করা যায় কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.