ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদে নীল দলের প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়াউর রহমান। নীল দল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন। গত শনিবার ডিন পদের প্রার্থী বাছাইয়ে অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে সমান ভোট পান জিয়াউর রহমান ও সাদেকা হালিম।
এরপর মঙ্গলবার আবারও নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। আর এই নির্বাচনে ১৯ ভোটের ব্যবধানে সাদেকা হালিমকে হারিয়ে দেন জিয়াউর রহমান। এর ফলে ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ডিন নির্বাচনে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে জিয়াউর রহমানই হচ্ছেন নীল দলের চূড়ান্ত প্রার্থী। অপর দিকে দুটি অনুষদে নীল দলের সঙ্গে আঁতাত করে প্রার্থী না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের একাংশ।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে নীল দলের দ্বিতীয় দফা অভ্যন্তরীণ ভোটাভুটি হয়। নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে নীল দলের অভ্যন্তরীণ ভোটে অধ্যাপক জিয়াউর রহমান ৮৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। অপর দিকে অধ্যাপক সাদেকা হালিম পেয়েছেন ৭০ ভোট।
এর আগে গত শনিবার নীল দলের এক সভায় ডিন নির্বাচনে নীল দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ভোটাভুটি হয়। সেখানে সাদেকা হালিম ও জিয়াউর রহমান দুজনই ৭২টি করে ভোট পান।
পরোক্ষ শক্তির প্রভাবের অভিযোগ
অভ্যন্তরীণ ভোটে বিভিন্ন ‘পরোক্ষ শক্তির’ প্রভাব ছিল বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক সাদেকা হালিম৷ তবে হেরে যাওয়ায় নীল দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না বলে জানান তিনি৷
অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘জয়লাভ করায় অধ্যাপক জিয়াউর রহমানকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের অবস্থান সংকুচিত হয়ে আসছে৷ নীল দলে এখন অনেক বেশি অনুপ্রবেশকারী। জিয়াউর রহমানের পেছনে অনেক পরোক্ষ শক্তির সমর্থন ছিল, যে আশীর্বাদটি আমি পাইনি।’
তবে পরোক্ষ শক্তির বিষয়টি খোলাসা করেননি সাদেকা হালিম। কিন্তু তাঁর সমর্থক একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, সাদেকা হালিমকে হারানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তৎপরতা ছিল। অধ্যাপক জিয়াউর রহমানকে ভোট দেওয়ার জন্য কনিষ্ঠ অনেক শিক্ষককে হুমকিও দেওয়া হয়েছে৷ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনটি বিভাগের পদোন্নতি বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে৷ ওই তিনটি বোর্ডেই সাদেকা হালিমের থাকার কথা ছিল৷
এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক জিয়াউর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুজনের আগের ভোটে ফলাফল ছিল ৭২-৭২, এখন ৮৯-৭০৷ এটা একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে৷’
নীল দলের সঙ্গে সাদা দলের আঁতাতের অভিযোগ
ডিন নির্বাচনে আটটি অনুষদে প্রার্থী দিলেও দুটি অনুষদে প্রার্থী দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল৷ ওই দুটি অনুষদ হলো আইন ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস৷ কিন্তু এই দুটি অনুষদে সাদা দলের অবস্থান ভালো হলেও নীল দলের সঙ্গে আঁতাত করে প্রার্থী দেয়নি বলে অভিযোগ করেছে সাদা দলের একাংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুটি অনুষদের সাদা দল সমর্থক একাধিক শিক্ষক বলেন, আইন অনুষদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একজন প্রভাবশালী নেতা এবং আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে ‘আঁতাত’ করেছেন সাদা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব৷ নীল দলের ওই দুই প্রভাবশালী শিক্ষকের সঙ্গে সমঝোতা করেই তাঁরা সেখানে প্রার্থী দেননি৷
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাদা দলের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁর কানেও এসেছে৷ তবে এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি৷
তবে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান অন্য কথা বলছেন। তাঁর দাবি, ওই দুই অনুষদে সাদা দলের কোনো শিক্ষক প্রার্থী হতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আইন এবং আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদে আমাদের প্রার্থী ছিলেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা রাজি হননি৷ নতুন ভোটারদের দলীয়ভাবে চাপ দেওয়া হয়৷ এমন নানা কারণ রয়েছে।’