করোনাকালীন সময়ে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করা কলেজছাত্র, এটুআই পুরস্কারপ্রাপ্ত তরুণ বিজ্ঞানী তাহের মাহমুদ তারিফ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ছোট্ট একটি যন্ত্র যার সাহায্যে বাড়তি অক্সিজেন ভরা বাতাস জোগান দেওয়া সম্ভব।
মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর আগে দুপুরের দিকে ঈশ্বরদীর কালিকাপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
তাহের মাহমুদ তারিফ ঈশ্বরদী শহরের নারিচা এলাকার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
পাকশী হাইওয়ে ফাঁড়ির পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) এসআই ফরিদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঈশ্বরদী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে পাবনা যাচ্ছিলেন তাহের মাহমুদ তারিফ। পথে দাশুড়িয়ার কালিকাপুরে অজ্ঞাত একটি ট্রাকের সঙ্গে তার সিএনজির ধাক্কা লাগে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানে চিকিৎসা শেষে ঢাকায় নেওয়ার পথে টাঙ্গাইলের কাছে বিকেল ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ঈশ্বরদী উপজেলা শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম জানান, বিজ্ঞানের সামগ্রী কেনার জন্য তারিফ পাবনা যাচ্ছিল। মাঝে সড়ক দুর্ঘটনায় সে মারা যায়। বিজ্ঞানে প্রতিভাধর ‘শিশুবিজ্ঞানী’র মৃত্যুর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
তিনি আরও জানান, করোনার সময় অল্প খরচে বাতাস থেকে অক্সিজেন উৎপাদন প্ল্যান্ট তৈরি করে দেশব্যাপী তাক লাগিয়েছিল তাহের মাহমুদ তারিফ। তখন সে ঈশ্বরদী সরকারি সাঁড়া মাড়োয়ারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। করোনার আগে তার বাবা শ্বাসকষ্টে মারা যান। বাবার মৃত্যুর ঘটনায় তাহের মাহমুদ অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা শুরু করে।
২০২১ সালে ৮ জুন ঈশ্বরদীর ইউএনও কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অক্সিজেন জেনারেটরটির উদ্ভাবন সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন তাহের মাহমুদ তারিফ।
ক্ষুদে এই বিজ্ঞানীর সাফল্যে ২০২২ সালে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণে তাকে ‘শেখ রাসেল’ পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়।
ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা একজন ক্ষুদে বিজ্ঞানী ও মেধাবী শিক্ষার্থী হারালাম।