The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২৪শে অক্টোবর, ২০২৪

৩৫ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন আছিয়া

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার চানপাড়া আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে চলছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সেখানে কিশোর বয়সী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছেন আছিয়া বিবি। ২০ বছর আগে বিয়ে হয় আছিয়া বিবির। বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে থেমে যায় তার লেখাপড়া। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ও ইচ্ছার জোরেই আবার পরীক্ষাকেন্দ্রে তিনি। এবার ৩৫ বছর বয়সে তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কক্ষ পরিদর্শক দায়েম উদ্দিন বলেন, আছিয়া বিবি তাঁর কক্ষের পরীক্ষার্থী হলেও তাকে তিনি ‘আপনি’ সম্বোধন করেছেন। আছিয়া বিবি ভালোভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছেন বলে তাদের জানিয়েছেন।

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আছিয়ার বিবির বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কোয়ালীপাড়া গ্রামে। তিনি যোগীপাড়া ইউপির সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। বিয়ের আগে ভটখালী বালিকা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে।

আছিয়া বিবি বলেন, তার বিয়ে হয় প্রায় ২০ বছর আগে। বাল্য বিবাহের শিকার বন্ধ হয়ে যায় তার লেখাপড়া। তবে তার ইচ্ছে বন্ধ হয়নি। বিয়ের ২০ বছর পর অষ্টম শ্রেণি পাস না করেই ভর্তি হয় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ভবানীগঞ্জ কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজে। গত বছর দিয়েছেন নবম শ্রেণির ফাইনাল। এবার দিচ্ছেন দশম শ্রেণির ফাইনাল। নিজের ইচ্ছা পূরণে ৩৫ বছর বয়সে বসেছেন এসএসসি পরীক্ষায়।

তিনি আরও বলেন, সংসারে তার এক মেয়ে। এরই মধ্যে মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। নির্বাচন করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আগে থেকেই লেখাপড়ার আগ্রহ থাকলেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর এটা বেড়ে গেছে। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সংসারের ঝামেলা কিছুটা কমিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে শুরু করেন তিনি। এলাকার লোকজনের সঙ্গে মিশতে গিয়ে অনেক সময় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসে। সমাজে শিক্ষিতদের মূল্যায়নও করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কাজে শিক্ষিত জনপ্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এসব থেকে শুধু তিনি নিজে নন, তার ইউনিয়নের লোকজনও বঞ্চিত হন। তাই লেখাপড়া শেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। এসব কারণে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। যত দূর পারেন, লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন আছিয়া।

যোগিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান বলেন, শুধু লেখাপড়া নয়, প্রতিটি কাজে আছিয়া বিবির আগ্রহ দেখে অবাক হতে হয়। তিনি কোনো কাজে হার মানতে নারাজ। সবকিছুতে চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন, সফলও হন। পরীক্ষা শেষে তিনি ইউপিতে এসে বিভিন্ন কাজে অংশ নেন।

রাজশাহীর বাগমারা ভবানীগঞ্জ কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান বলেন, ভালোভাবেই পরীক্ষা হচ্ছে। ইউপি সদস্য হওয়ায় আছিয়া বিবি নিয়মিত ক্লাসে থাকতে পারেননি। তবে পরীক্ষা ভালো করছেন বলে শিক্ষকদের জানিয়েছেন। তার এই গল্প অনেক স্বল্পশিক্ষিতকে নারীকে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলেও উল্লেখ করেন কলেজ অধ্যক্ষ।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.