The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

সম্প্রীতির ইফতার, ইবি ক্যাম্পাসের চোখ জুড়ানো দৃশ্য

ইবি প্রতিনিধি : বিকাল ৫ টা ৩০, কেউ হাতে মুড়ি, পেয়াজু, কারো হাতে বা শরবতের জগ, মুড়ি মাখানোর বড় বড় থালা নিয়ে ছুটে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কেন্দ্রীয় ক্রিকেট মাঠের দিকে। সূর্য প্রায় ডুবডুবু তখন এই সবুজ মাঠে কোনো দলে ১০ জন কোনো দলে ২০ জন বা তারও বেশী। কেউ বৃত্তাকার কেউ বা লম্বা হয়ে বসে সামনে খেজুর, পানি নিয়ে বসে অপেক্ষা করছেন মাগরিবের আজান শোনার। এমন কিছু সুন্দর দৃশ্যই রমজান এলে চোখে পরে ইবি ক্যাম্পাসে। ড্রোন ক্যামেরায় সেই দৃশ্য ধারণ করে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফুটিয়ে তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাছির উদ্দিন আবির। প্রায় দুই শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিদিন একসাথে ইফতার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে। গত তিন বছর ধরেই প্রথম রোজা থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে একসঙ্গে ইফতার গ্রহণকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব। নিজের পরিবার ছেড়ে সবার এমন ইফতার আয়োজনে মেতে উঠা যেনো এক পরিবারকে কাছে পাওয়া। সেই সাথে ইফতার শেষে মাঠেই জমায়েতের সহীত এক কাতারে নামাজ পড়ার দৃশ্য যে কারো মনে শীতল অনুভূতি সৃষ্টি করবে।

রমজান মাসের শুরু থেকেই শর্তসাপেক্ষে পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ রেখে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে অনেক শিক্ষার্থীই দুশ্চিন্তায় পরে যায় এবার আদৌ সবাই মিলে ইফতার গ্রহণের সুযোগ পাওয়া যাবে কিনা! কিন্তু বছরের শ্রেষ্ঠ এই মাসে কোনো ছুটিই বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। সম্প্রীতির এই বন্ধনে শুধু মুসলিম শিক্ষার্থীরাই নয় সবধর্মের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিলো। যার কারণেই ইসলাম ধর্মকে বলা হয় শ্রেষ্ঠ ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ধর্ম। অন্যদিকে একাধিক ক্যাম্পাসে যখন ইফতারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এরুপ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে আঙ্গুল দিয়ে জবাব দেয় তাদের যারা এর বিরোধী।

ইফতার গ্রহণের আগ মুহুর্তে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের হাবিবুল্লাহর সাথে। রমজানে পরীক্ষা থাকায় সে বাসায় যায়নি। তিনি বলেন, আগে প্লানিং ছিল রোজা এলেই বাসায় চলে যাবো। পরীক্ষা গুলো রোজার মধ্যে হওয়ায় চাইলেও তা সম্ভব নয়। পরিবারের সাথে ইফতার করতে পারবোনা ভেবে মন খারাপ ছিলো। তবে গত দুইদিন শতাধিক বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র মিলে একসাথে ইফতার করেছি। আমি সত্যি আমার পরিবারকে মিস করিনি। মনে হচ্ছিলো যেনো বাসায়ই নিজের পরিবারের সাথেই আছি।

অমুসলিম শিক্ষার্থী প্রসেন বলেন, এরকম আয়োজন সত্যিই মুগ্ধ করে। বন্ধুদের সাথে এসময় টা আমার সারাজীবনই মনে থাকবে। ইফতারকে ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়ার কারণ নিজ চোখেও দেখলাম। আমি মনে করি ক্যাম্পাসে বছরে একমাসই এমন সুযোগ থাকে। তাই যারা এর উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় তাদের বিষয়গুলো ভালোভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পাপ্পু রাইজিং ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে আর মাত্র দুই মাসের মতো আছে। এটাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ রমজান মাস হয়তো। আমরা যখন ক্যাম্পাসে এসেছিলাম তখন এমন ভাবে ইফতার হতোনা। করোনার পর থেকে এই বিষয়টি চালু হয়েছে। এতো সুন্দর পরিবেশ বাংলাদেশের যেকোনো ক্যাম্পাসে দেখা যায়না। আমি চাই প্রতিবছরই যেনো আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন সম্প্রীতির বন্ধন বজায় থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলেই মনে করেন এমন সম্প্রীতি সৌহার্দ্যপূর্ন ইফতারের আয়োজন ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্য্যের বার্তা সবার কাছে পৌছে দেয়। তবে সবাইকে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্যে যেনো হানি না ঘটে সেই দিকটাও বিবেচনায় রাখার অনুরোধ করেছেন কেউ কেউ। ইফতার শেষে বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে ইসলামের আরও একটি গুণ ফুটিয়ে তোলার অনুরোধ সবার।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.