The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

শিক্ষা আইন নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ানো যাবে না

বহুল আলোচিত শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের বাইরে শিক্ষকদের কোচিং–প্রাইভেটের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না।

তবে শিক্ষাবিদেরা মনে করছেন, এটি বাস্তবায়ন করা দুরূহ হবে। কারণ, সারা দেশে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; সেখানে কে কাকে পড়াচ্ছেন সেটি দেখবেন কে?

২০১১ সাল থেকে শিক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে আলোচনা চলছে। অভিযোগ আছে, নোট-গাইড বা সহায়ক বই এবং কোচিং-প্রাইভেটের মতো কিছু বিষয় রাখা না-রাখা নিয়েই আইনের খসড়াটি এত দীর্ঘ বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। অবশেষে শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়ন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা খসড়া অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশনের মাধ্যমে পাঠদানের জন্য কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা বা কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করা নিষিদ্ধ বলে গণ্য হবে না। তবে কোচিং সেন্টারে কোনো শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে পারবেন না। এমনকি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেটও পড়াতে পারবেন না। কোচিং চালাতে গেলে নিবন্ধন নিতে হবে।

তবে সরকার নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে ও অভিভাবকদের সম্মতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রমের বাইরের সময় অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা যাবে। অবশ্য এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশ রয়েছে। কিন্তু সেটি যথাযথভাবে মানা হয় না; বরং শিক্ষকদের প্রাইভেটের প্রতি ঝোঁক বেশি।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রথম আলোকে বলেন, কোচিং–প্রাইভেট একেবারে বন্ধ করা যাবে না। কারণ, কিছু শিক্ষার্থী থাকে অন্যান্য শিক্ষার্থীর চেয়ে তুলনামূলক দুর্বল। আবার সব শিক্ষার্থীর মা–বাবার পক্ষেও পড়াশোনার বিষয়ে সন্তানকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে তারা কোচিং–প্রাইভেট পড়তেই পারে। কিন্তু সমস্যা হলো, অনেক শিক্ষক ক্লাসে ঠিকমতো না পড়িয়ে তাঁদের কাছে শিক্ষার্থীদের কোচিং–প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন, যা অনৈতিক। এটিকেই তাঁরা বন্ধ করতে চান।

প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় নোট–গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। কেউ এই বিধান লঙ্ঘন করলে জেল–জরিমানা ভোগ করতে হবে। ১৯৮০ সালে করা একটি আইনেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নোট-গাইড নিষিদ্ধই আছে। এ জন্য এখন নোট-গাইডের পরিবর্তে অনুশীলন বই বা সহায়ক পাঠ্যবই চলছে। প্রস্তাবিত আইনেও সরকারের অনুমোদন নিয়ে সহায়ক বই বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সহায়ক বই কেনা বা পাঠে বাধ্য করতে পারবেন না। এসব বই কিনতে বা পাঠে বাধ্য বা উৎসাহ দিলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রথম আলোকে বলেন, সহায়ক বই থাকতেই পারে। তবে এখন দেখা যায়, যারা এসব সহায়ক বই ছাপে, তারা অনৈতিকভাবে কিছু শিক্ষককে কমিশন দিয়ে ওই প্রকাশনীর বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে। এ জন্য আইনের খসড়ায় সহায়ক বই থাকলেও এসব অনৈতিক কাজ যাতে না হয়, সেটি বন্ধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হলে কোচিং–প্রাইভেটের প্রয়োজন হবে না বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।

তদারক করবেন কে
যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, এখন সারা দেশে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় কে কাকে প্রাইভেট পড়াবেন, সেটি কে তদারক করবেন? তাই যেটি করতে হবে সেটি হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পড়া শেষ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক লাগবে। আর এটি করতে হলে শিক্ষকের পর্যাপ্ত সম্মান, মর্যাদা ও আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আর নোট–গাইড বন্ধ করে সহায়ক বইয়ের সুযোগ থাকলে কার্যত একই হবে।

এ ক্ষেত্রে নোট–গাইডের জায়গায় কেবল সহায়ক বই লিখবেন।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.