The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

রমজান যেমন কাটছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের

বোরহান উদ্দীন, জাবিঃ মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও পুণ্যময় মাস পবিত্র রমজান। এ মাস একজন মুমিনের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের কারণ হয়ে আগমন করে। আর রমজানকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ। যদিও মা-বাবা পরিবার পরিজন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম রমজান অনেকের। অনেকে আবার চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ক্যাম্পাসে রমজান কাটাচ্ছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেহাত কম নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিভাগের কিংবা ইনস্টিটিউটের ক্লাস বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন ছোঁয়ার তাগিদে রমজানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে গেলে দেখা যায় ভিন্ন ধরনের চিত্র। সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই বিশাল লাইন লেগে যায় লাইব্রেরির একটি সিট দখলের জন্যে। দেখলে মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়টা অনেকের কাছে একটা পরিবার। মাথা গোঁজার ঠাঁই।

এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারেও পবিত্র রমজান মাস আসার সাথে সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলো থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা , ক্যাফেটরিয়া, সেন্ট্রাল ফিল্ড কিংবা ক্লাসরুম গুলোতে সম্প্রীতি ও ভালোবাসায় ইফতারের এক উৎসব বিরাজ করছে।

যদিও আবাসিক হল গুলোতে সেহেরির খাবার সংগ্রহ করা একধরনের প্রতিযোগিতার মতো। একরকম দৌঁড়-ঝাপ করে খাবার সংগ্রহ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এক হল থেকে অন্য হলে স্বল্প মূল্যে পছন্দের খাবার সংগ্রহ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য।এসময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর একবারের জন্য হলেও পরিবারের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে এসময় বাড়িতে থাকলে কত‌ই না আয়োজন থাকতো তার জন্য, থাকতো মায়ের হাতের নানা পদের রান্না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে রাত দিনের তফাৎ খুব বেশি চোখে পড়ে না। রাতে অন্ধকার হলেও পুরো ক্যাম্পাস থাকে আলোকিত। রাতের এই আলো গুলো জানে প্রতিটা রাত, প্রতিটা দিন এখানে ‘স্বপ্ন পূরণের গল্প’ লিখা হয়। রাত-দিনের হিসেব, এখানে কেউ করে না। হিসেবে করে স্বপ্ন পূরণের দিন-ক্ষণ, হিসেবে করে কত দিন, কত রাত বাকি স্বপ্নের কাছে যেতে। রমজান এসে ‘স্বপ্ন’ আর সেই স্বপ্ন পূরণে মহান আল্লাহ তা’লার সন্তুষ্টি লাভের আশায় মশগুল থাকে শিক্ষার্থীরা।

তারাবির সালাত দিয়ে একটি রোযার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। হলের মসজিদগুলোতে ভরে উঠে শিক্ষার্থী দিয়ে। জায়গা না মেলায়, কার্পেট বিছিয়ে হল মাঠে সালাত আদায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তারাবির নামায মাত্র শেষ হয়েছে। নামায শেষে কেউবা ক্লান্ত শরীরে হিম-শীতল বাতাস লাগাতে লাগাতে আপন মনে কার্পেটে শুয়ে রাতের আকাশ দেখেন আর বুকে স্বপ্ন লালন করেন। কেউ আবার নামাজ শেষে পড়তে বসেন, সফলতা যে লাভ করতেই হবে তাকে।

ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ রমজান আসলে খাবারের দাম বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। রমজানে সেহরি-ইফতার সব মিলিয়ে খেতে গেলে দৈনিক ২০০ টাকার মত পড়ে যায়। যেখানে রমজান ব্যতীত অন্য সময়ে তাঁর লাগে ৭০-৯০ টাকা। যা অনেকের জন্য কষ্টদায়ক। শিক্ষার্থীরা মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সজাগ দৃষ্টি দিলে বাড়তি দাম নিতে পারবে না খাবার দোকানের ব্যাবসায়ীরা।

ইফতারিতে জাহাঙ্গীরনগর এক টুকরো উৎসবের কেন্দ্রে পরিণত হয়। ক্যাম্পাসে ইফতারের আমেজ লাগে সেই দুপুর ৩ টা থেকে। ক্যাম্পাসের সাবেক, বর্তমান কিংবা বহিরাগতরা মেতে ওঠে ইফতারির আমেজে। সিডনি ফিল্ড , টিএসসি,বটতলা, সেন্ট্রাল ফিল্ড, ক্যাফেটেরিয়া, হলগুলোর সম্মুখে ইফতার নিয়ে ব্যস্ত থাকে সবাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন ও সেমিনার কক্ষে প্রত্যেক দিন কোন না কোন সামাজিক,স্বেচ্ছাসেবী অথবা রাজনৈতিক সংগঠনের ইফতার মাহফিল দেখা যায়।

এদিকে রমজানকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা শরবত, ফল, ছোলা-বুট, বুন্দিয়া, বেগুনি, পিঁয়াজু, বিভিন্ন ধরনের চপসহ হাজারো রকমের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র – জুনিয়র কিংবা প্রিয় মানুষটির সঙ্গে বসে ইফতারি খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়া রমজান মাসে যেন এখানকার নিত্য-নৈমত্তিক ব্যাপার। টিএসসি, বটতলা, সেন্ট্রাল ফিল্ড, ক্যাফেটেরিয়া, পুরাতন কলা, মহুয়া মঞ্চে ইফতারির আয়োজনে মেতে ওঠার দৃশ্য যেন চোখে পড়ার মত। সবচেয়ে বেশি দেখার মতো জায়গা তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ । সেখানে গোলাকার হয়ে বসে থাকতে দেখা যায় শত শত রোজাদার শিক্ষার্থীদেরকে। পাশে কয়েকজন মিলে তৈরি করছে বাহারি আইটেমের ইফতারি। দৃশ্যটি একেবারে ছবির মতো। যেন পরিবারের সদস্যরা একসাথে বসে আছে ইফতারের অপেক্ষায়। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরাও মিশে গেছেন রোজাদারদের সাথে। তারাও ইফতারের অপেক্ষায় বসে থাকে বন্ধুদের সাথে কিংবা সিনিয়র জুনিয়রদের সাথে।

গোল হয়ে পত্রিকা কিংবা বড় গামলা বিছিয়ে ইফতারির আয়োজনে মেতে ওঠেন সিনিয়র জুনিয়র বর্তমান, সাবেক, বহিরাগতদের কোন গ্রুপ কিংবা বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। পারস্পরিক ফেলে আসা হৃদ্যতার সম্পর্কের স্মৃতিচারণ একজন আরেকজনের খোজ খবর নেওয়া, কিংবা বড় ভাইদের উপদেশ ইফতারির এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলে। হলগুলোর মাঠেও চলে নানান আয়োজনে ইফতার। মসজিদে যখন মুয়াজ্জিন মধুর সুরে ডাক দেন হে মুমিন রোজাদারগণ ইফতারের সময় হয়েছে। তখন সবাই একসাথে খাওয়া শুরু করে।এতো সুন্দর, এতো বৈচিত্র্য ও ভালোবাসা বন্ধন যেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই সম্ভব।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.