The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪

যবিপ্রবি শিক্ষার্থীকে মারধর: অভিযুক্তদের স্থায়ী বরখাস্তের দাবি শিক্ষার্থীদের

যবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সিকিউরিটি সুপারভাইজার বদিউজ্জামান বাদল কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (এনএফটি) বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনকে মারধরের ঘটনায় বিচার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১০ মে) দুপুর ২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। এসময় বাদলের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে স্লোগান দিতে থাকে তারা। এসময় বক্তারা অভিযুক্তদের ক্যাম্পাস থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। আন্দোলনের এক পর্যায়ে যবিপ্রবি প্রক্টর হাসান মোহাম্মদ আল এমরান এসে বিষয়টি সুরাহা করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তা পত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যান এবং উপাচার্য না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন ঘটনা স্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস প্রদান করেন। এ সময় তিনি বলেন, ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। আগামী (১৩ মে) রিজেন্ট বোর্ডে এই বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে আশ্বস্ত করছি, নিয়মানুযায়ী সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জানা যায়, যবিপ্রবি কর্মচারী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিকিউরিটি সুপারভাইজার বদিউজ্জামান বাদল ও কর্মচারী শাহিনুর রহমান সাগরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এনএফটি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনকে গত ১৩ এপ্রিল রাত ৯.৩০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পেটানোর অভিযোগে সিকিউরিটি সুপারভাইজার বদিউজ্জামান বাদল ও শাহিনুর রহমান সাগরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মুজাহিদ হাসান গত ১৪ এপ্রিল বাদী হয়ে যশোর কোতয়ালী থানায় মামলা করেন। তারপর ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে বিচার দাবি করেন এবং তার স্থায়ী বরখাস্ত দাবি করেন। নির্যাতনের প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়নি বলে শিক্ষার্থীরা পুনরায় আজ মানববন্ধন করেন।

আরও পড়ুন: সাইবার নিরাপত্তা কি? নিজেকে নিরাপদ রাখতে করণীয়

উল্লেখ্য, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে চার শতক জমি ক্রয় করেন শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কর্মচারী মুজাহিদ হাসান। জমি ক্রয়ের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা সুপারভাইজার বাদল ও তার সহযোগীরা ভোগদখলে বাধা প্রদান ও মুঠোফোনে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি প্রদান করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ এপ্রিল রাত ০৯.৩০ ঘটিকায় আব্দুল্লাহ আল মামুনকে একা পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পূর্বপরিকল্পিত ভাবে কর্মচারী বাদল ও শাহিনুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন হাতে হাতুড়ী ও লোহার রড নিয়ে ক্রয়কৃত জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে। তখন শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রতিবাদ করায় বদিউজ্জামান বাদলের হাতে থাকা হাতুড়ী দিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ডান পায়ের হাটুর নিচে আঘাত করে গুরুতর জখম করে এতে তার পায়ের হাড় ভেঙে যায়। তখন কর্মচারী শাহিনুর রহমানের হাতে থাকা হাতুড়ী দিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় এলোপাতাড়ী আঘাত করে জখম করে। মারপিটের আঘাতে মামুন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অজ্ঞাতনামা আসামীরা তাদের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন এলোপাতাড়ী আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। তখন ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ আল মামুন জীবন বাঁচানোর জন্য চিৎকার দিলে কর্মচারী মুজাহিদসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে বিবাদীরা বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও খুন জখমের হুমকি দিয়ে চলে যায়। বিবাদীদের মারপিটের আঘাতে মামুনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ২১ জুন ‘নিরাপত্তা প্রহরীর’ স্থায়ী শূন্য পদে যোগদান করেন বদিউজ্জামান বাদল। যোগদানের মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ এ  তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটান। যার ফলে তাকে ‘তিরস্কার’ ও ২ বছর ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করার দণ্ড দেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পুকুর থেকে মাছ চুরির অভিযোগে ১০ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বরে যশোর কোতয়ালি থানায় মামলা হওয়ায় তিনি চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন। ঠিক ছয় মাস পর ১ জুন ২০১৬ তারিখে তাকে চাকরি হাতে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হয়।

তবে হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে স্থায়ীভাবে অপসারণ (Removal) অফিস আদেশ বাতিল করে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।এরপর ২২/০৭/২০২০ তারিখে শৃঙ্খলা ভঙ্গের(অফিস ভাংচুর) দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এই বাদলকে।দুই বছরের মাথায় (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২) যশোরের চূড়ামনকাটিতে হত্যা মামলায় আসামী হন এবং কিছুদিন জেলহাজত বাস করেন।এপ্রেক্ষিতে অভিযোগ পাওয়ায়, খবর প্রকাশিত হওয়ায় ও কর্তব্যস্থলে অনুপস্থিত থাকায় আবারো সাময়িক বরখাস্ত হন বদিউজ্জামান বাদল।সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনের ওপর হামলা চালিয়ে আবারো সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন তিনি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.