The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

ম্যাম কথা দেন, কথা রাখেন

বাঙলা কলেজ প্রতিনিধি: ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, দুপুর ১২টা। হঠাৎ রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজের প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম ছাত্রাবাসে অভিযান চালায় পুলিশ। উদ্ধার করা হয় ২১টি চাপাতি, ৩টি পিস্তল, ৩টি ম্যাগজিন ও ১৪ রাউন্ড গুলি। এসময় আটক করা হয় ৪২ জনকে। এর আগের দিন কলেজে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে পরদিন পুলিশ এই অভিযান চালায়।

৯ বছর আগের সেই উত্তাল ক্যাম্পাস এখন ‘গল্প’। নেই সেই ভয়ার্ত সময়। সুসময়ের প্রাঙ্গণে সুভাস ছড়াচ্ছে ফুলের দল। ক্যাম্পাসজুড়ে সক্রিয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। ছাতিম তলায় বসে ‘বিতর্ক আসর’। এখনও শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরে, তবে অস্ত্রে আঘাতে নয়; বাঁধনের ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন বাঁচাতে। অতীতকে পেছনে ঠেলে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটেছে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি বাঙলা কলেজে।

এই প্রাঙ্গণে এখন রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা সময় দেয় বিজ্ঞান ক্লাবে, মনোযোগ দেয় গবেষণায়। ধর্মান্ধ আর দুষ্কৃতকারীদের অপপ্রচার রুখতে যুব থিয়েটারে বসে মঞ্চ নাটক।

ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই কলেজটির গেটের সামনে দাঁড়াতেই চোখে পড়বে ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান খচিত বিভিন্ন লেখা। যা শিক্ষার্থীদের মনে করিয়ে দেবে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি। গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে বিশাল ফুলের বাগান, এরপরই সবুজ ঘাসে জড়ানো বিশালাকৃতির মাঠ- যেখানে খেলা করছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগ ও বয়সের শিক্ষার্থীরা।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দীর্ঘ ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ এই কলেজে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শহিদের গণকবরের ওপরে নির্মিত হয়েছে বেদী, প্রশাসন ভবনের নিচে রয়েছে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যূরাল। আর এতসব পরিবর্তনের নেপথ্যে যিনি নিরলস কাজ করেছেন, তিনি অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান।

দায়িত্ব নেওয়ার পরই ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘এই প্রতিষ্ঠান পাল্টে দেবেন’। ফেরদৌসী খান যেমন কথা দিয়েছেন, তেমনি তিনি কথা রেখেছেন। যদিও বেগম রোকেয়ার মত পথে পথে তাকে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। হুমকি-ধমকি পেতে হয়েছে। তিনি দমে যাননি। লড়াই করেছেন বুক চিতিয়ে। যে লড়াইয়ে মায়ের মত তাকে আগলে রেখেছেন এই প্রাঙ্গণের শিক্ষার্থীরা। স্লোগানে স্লোগানে দুষ্কৃতিকারীদের বার বার জানিয়ে দিয়েছে, ‘মায়ের অপমানে সন্তানের হৃদয়ে যে আগুন জ্বলে; সে আগুনে সব যেন জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়’। কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগের সৈনিক।

কলেজ প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে যে সাহস কেউ দেখায়নি, ফেরদৌসী খান তা করে দেখিয়েছেন। ভূমি-দস্যুদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে তিনি কলেজটির ২৫ একর জায়গা চিহ্নিত করেছেন। মামলা-হামলা আর ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভূমি-দস্যুদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন করেছে বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতি (বাকসাস)।

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, চলাচলের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা। বিদায় বেলায় এসে হলেও ফেরদৌসী খান তার সন্তানদের দাবি পূরণ করেছেন। বাঙলা কলেজ বহরে যুক্ত হয়েছে ‘স্বাধীনতা’ নামের একটি বাস। আরও তিনটির ইঞ্জিন বসানোর কাজ চলছে। ফেরদৌসী খান হয়ত বিদায় নেবেন, তবে ঈদের পরই যুক্ত হবে সেসব পরিবহন।

ফেরদৌসী খান চার বছর এই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে তাঁর এক গভীর রসায়ন সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে আছে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর স্নেহ। যার প্রমাণ মেলে বিদায়বেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সেখানেও সবাই সমস্বরে বলেন, ‘ম্যাম কথা দেন, কথা রাখেন’।
মূল লেখা: জাফর ইকবাল

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.