The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বুধবার, ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪

মাধ্যমিক শিক্ষা বিদ্যালয়ে ব্যবহারিক বিজ্ঞানশিক্ষার দুরবস্থা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি হাজী এলাহী বক্স উচ্চবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী রয়েছে। বিজ্ঞানশিক্ষার ব্যবহারিক চর্চার জন্য একটি বিজ্ঞানাগার কক্ষও আছে। কিন্তু সেখানে নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। যা দু-একটি যন্ত্রপাতি আছে, তা–ও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে না বলে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই কক্ষটিতে বেশির ভাগ সময় তালা দেওয়া থাকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এলাহী বক্স উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে বিজ্ঞানাগার কক্ষের এমন চিত্রই দেখা গেল। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী আছে ৭৪১ জন। এদের মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে ৪৭ জন। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়া কীভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস হয়—এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক শাহিমা খাতুন বলেন, ২০১৯ সালে বিজ্ঞানাগারের জন্য কিছু সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছিল। তখন ব্যবহারিক ক্লাস হয়েছে।

কিন্তু করোনাকালে পাঠদান বন্ধ ছিল। সর্বশেষ বন্যায় এসব যন্ত্রপাতি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। বিদ্যালয়ে এখন বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকও নেই। খণ্ডকালীন একজন শিক্ষক দিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠদান চলছে।

সুনামগঞ্জের এই বিদ্যালয়ে নামকাওয়াস্তে হলেও বিজ্ঞানাগার আছে। সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক একাডেমিক সুপারভিশন (শিক্ষাবিষয়ক পর্যালোচনা) প্রতিবেদনের তথ্যে উঠে এসেছে, দেশের প্রায় এক–চতুর্থাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগারই নেই। আবার বিজ্ঞানাগার থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে তা ব্যবহৃত হয় না।

মাউশির প্রতিবেদনে বিজ্ঞানাগারের সংকট ছাড়াও দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আরও নানা দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে। যেমন ১৭ শতাংশ বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার নেই। দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ৩১ শতাংশ বিদ্যালয়ে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। আশঙ্কার কথা হচ্ছে, ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সশরীর ক্লাসে উপস্থিত থাকছে না। এ ছাড়া ৩৮ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পুরোপুরিভাবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারেন না।

মাউশির এক্সেস অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ইউনিট চলতি বছরের মে মাসে দেশের ৬ হাজার ৭৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খোঁজখবর নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করে। সব জেলা শিক্ষা অফিস ও মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে এসব বিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। দেশে মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার।

বিজ্ঞানাগারের দুরবস্থা
মাউশির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, পর্যালোচনা করা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১ হাজার ৬৪০টি (২৪ শতাংশের বেশি) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার নেই। বাকি ৫ হাজার ১৪৪টি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার থাকলেও ৪৪৩টিতে ব্যবহৃত হয় না। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ৪ হাজার ৭০১টি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার ব্যবহৃত হয়।

গতকাল ঢাকা, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, মানিকগঞ্জ ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের আটটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুরে সেগুলোতে বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষার ঘাটতির চিত্র পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, এখন ব্যবহারিক ক্লাস ছাড়াই এই বিষয়ের নম্বর পাওয়া যায়। ফলে ব্যবহারিক বিজ্ঞানশিক্ষার চর্চা ঠিকমতো হয় না।

রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেল, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে ৩৮০ জন। আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩ জন বিজ্ঞান বিভাগের। বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগারের অবস্থা ভালো নয়। মূলত বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানোর শ্রেণিকক্ষে বিষয়ভিত্তিক কিছু যন্ত্রপাতি আছে।

সুনামগঞ্জের এই বিদ্যালয়ে নামকাওয়াস্তে হলেও বিজ্ঞানাগার আছে। সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক একাডেমিক সুপারভিশন (শিক্ষাবিষয়ক পর্যালোচনা) প্রতিবেদনের তথ্যে উঠে এসেছে, দেশের প্রায় এক–চতুর্থাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগারই নেই। আবার বিজ্ঞানাগার থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে তা ব্যবহৃত হয় না।

মাউশির প্রতিবেদনে বিজ্ঞানাগারের সংকট ছাড়াও দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আরও নানা দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে। যেমন ১৭ শতাংশ বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার নেই। দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ৩১ শতাংশ বিদ্যালয়ে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। আশঙ্কার কথা হচ্ছে, ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সশরীর ক্লাসে উপস্থিত থাকছে না। এ ছাড়া ৩৮ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পুরোপুরিভাবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারেন না।

মাউশির এক্সেস অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ইউনিট চলতি বছরের মে মাসে দেশের ৬ হাজার ৭৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খোঁজখবর নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করে। সব জেলা শিক্ষা অফিস ও মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে এসব বিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। দেশে মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার।

বিজ্ঞানাগারের দুরবস্থা
মাউশির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, পর্যালোচনা করা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১ হাজার ৬৪০টি (২৪ শতাংশের বেশি) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার নেই। বাকি ৫ হাজার ১৪৪টি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার থাকলেও ৪৪৩টিতে ব্যবহৃত হয় না। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ৪ হাজার ৭০১টি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার ব্যবহৃত হয়।

গতকাল ঢাকা, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, মানিকগঞ্জ ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের আটটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুরে সেগুলোতে বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষার ঘাটতির চিত্র পাওয়া গেছে।

তবে গত মে মাসের তথ্য বলছে, ২১ শতাংশের বেশি বিদ্যালয় দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করলেও তাদের মানোন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আর প্রায় ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ বিদ্যালয় (৬৬১ স্কুল) দুর্বল শিক্ষার্থী চিহ্নিতই করে না। এই দুই শ্রেণি মিলিয়ে প্রায় ৩১ শতাংশ বিদ্যালয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীর বিষয়ে পদক্ষেপই নেওয়া হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, এখন ব্যবহারিক ক্লাস ছাড়াই এই বিষয়ের নম্বর পাওয়া যায়। ফলে ব্যবহারিক বিজ্ঞানশিক্ষার চর্চা ঠিকমতো হয় না।

রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেল, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে ৩৮০ জন। আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩ জন বিজ্ঞান বিভাগের। বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগারের অবস্থা ভালো নয়। মূলত বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানোর শ্রেণিকক্ষে বিষয়ভিত্তিক কিছু যন্ত্রপাতি আছে।

এক শিক্ষকের সঙ্গে রসায়নের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি দেখা যায়। তবে দেখেই মনে হচ্ছে, এগুলো খুব একটা ব্যবহৃত হয় না। একজন শিক্ষক জানান, শিক্ষার্থীদের দু-একটি বিষয়ে হাতে-কলমে দেখানো হয়েছে। তবে করোনাকালে বিজ্ঞানাগার ব্যবহার করা যায়নি।

ইস্কাটন এলাকার আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভাতী উচ্চবিদ্যা নিকেতনে আলাদা একটি কক্ষে বিজ্ঞানাগার দেখা গেছে।

নোয়াখালীর অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে বিজ্ঞান ভবন কিংবা বিজ্ঞানাগার নেই। গতকাল জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মূল ভবনের একটি কক্ষকে বিজ্ঞানাগার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কক্ষের ভেতরে দুটি আলমারির ভেতর কিছু যন্ত্রপাতি আছে। আর কিছু কার্টনভর্তি অবস্থায় পড়ে আছে। বিদ্যালয়টিতে এবার বিজ্ঞান শাখা থেকে ৪৭ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

অবশ্য সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খাজা মহিন উদ্দিন বললেন, বিজ্ঞানাগারের সব যন্ত্রপাতি আছে। প্রয়োজন হলে শিক্ষার্থীদের ওই সব যন্ত্রপাতির মাধ্যমে হাতে–কলমে বিজ্ঞানশিক্ষা দেওয়া হয়। তবে করোনার কারণে গেল দুই বছর বিজ্ঞানাগার ব্যবহৃত হয়নি।

একই উপজেলার বাবুপুর জিরতলী ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম ছারওয়ার বললেন, চলতি বছর তাঁর বিদ্যালয়ের ১৩৫ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ৫০ জন বিজ্ঞানের। তবে তাঁর বিদ্যালয়েও আলাদা বিজ্ঞানাগার নেই। বিদ্যালয়ের একটি কক্ষকে তাঁরা বিজ্ঞানাগার হিসেবে ব্যবহার করেন।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ও শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব থাকলেও গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞানাগারের অবস্থা দুর্বল। গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞানাগারের কক্ষের দরজার তালায় মরিচা পড়েছে। বিজ্ঞানাগারের চারটি আলমারির বেশির ভাগ অংশই খালি।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞানাগারে যায় না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইসহাক প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি সপ্তাহে অন্তত আটটি ক্লাস ডিজিটাল ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষে হয়ে থাকে। তবে পরীক্ষার সময় ছাড়া বিজ্ঞানাগারে তেমন পাঠদান হয় না বলে স্বীকার করেন।

মানিকগঞ্জ শহরে মডেল হাইস্কুল এবং খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয় দুটিতে বিজ্ঞানাগার আছে। তবে যন্ত্রপাতি খুব বেশি নেই। এ ছাড়া বিজ্ঞানে পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহও কম।

মডেল হাইস্কুলের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক রমেশচন্দ্র সরকার জানালেন, বিজ্ঞানাগারে যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। বিশেষ করে রসায়নবিদ্যায় ব্যবহারিক কাজে বিভিন্ন অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। করোনার আগে সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাসিড সরবরাহ করা হয়েছিল। গত দুই বছরে এসব অ্যাসিড মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ কারণে ব্যবহারিক ক্লাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আজাদুর রহমান বললেন, পদার্থবিজ্ঞানের ব্যবহারিক ক্লাসে মাইক্রোস্কোপ জরুরি যন্ত্র। তবে বিদ্যালয়ে এই যন্ত্র নেই। বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাবও নেই। এসব সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তিনি লিখিত জানিয়েছেন।

মাউশির মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ বলেন, বিজ্ঞানাগার–সংকটের বিষয়ে তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ, এই সংকট দূর করতে তহবিল লাগবে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গেও কথা বলবেন, যাতে বিজ্ঞানাগারের অবকাঠামো তারা করে দেয়। বিজ্ঞানাগার থাকলে আলাদাভাবে যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা করা যাবে।

গ্রন্থাগার ও আইসিটি ল্যাবের অবস্থা
শিক্ষার অবস্থা পর্যালোচনা করা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১ হাজার ১৩৪টিতে গ্রন্থাগার নেই। বাকিগুলোতে গ্রন্থাগার থাকলেও ৪৫৮টি বিদ্যালয়ে তা ব্যবহৃত হয় না।

বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে প্রতিটি ক্লাসেই তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) নামে একটি বাধ্যতামূলক বিষয় আছে। কিন্তু পর্যালোচনা করা মোট বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩ হাজার ৮৩৯টিতে আইসিটি বা কম্পিউটার ল্যাব নেই। অর্থাৎ, ৫৬ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থা নেই। আবার ২ হাজার ৯৪৫ বিদ্যালয়ে আইসিটি বা কম্পিউটার ল্যাব থাকলেও ২৪৯টি ব্যবহৃত হয় না।

আইসিটি শিক্ষায় জোর দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার সব বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে দিচ্ছে। তবে মাউশির প্রতিবেদন বলছে, শিক্ষার অবস্থা পর্যালোচনা করা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৩ হাজার ৫২৮টিতে (৫২ শতাংশ) স্থায়ী মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ নেই।

দুর্বল শিক্ষার্থীর বিষয়ে পদক্ষেপে ঘাটতি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি ঠিকমতো করা হলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজে দেয়। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। যেসব শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে বা বিষয়গুলোতে শতকরা ৩০ শতাংশের কম নম্বর পায় এবং যারা ধারাবাহিক মূল্যায়নে ভালো করেনি, তাদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা।

তবে গত মে মাসের তথ্য বলছে, ২১ শতাংশের বেশি বিদ্যালয় দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করলেও তাদের মানোন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আর প্রায় ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ বিদ্যালয় (৬৬১ স্কুল) দুর্বল শিক্ষার্থী চিহ্নিতই করে না। এই দুই শ্রেণি মিলিয়ে প্রায় ৩১ শতাংশ বিদ্যালয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীর বিষয়ে পদক্ষেপই নেওয়া হয় না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে মাধ্যমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থী এক কোটির বেশি হলেও মে মাসে পর্যালোচনা করা বিদ্যালয়গুলোতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল ৩৫ লাখ ২৮ হাজার ৯১৩ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৪০৯ শিক্ষার্থী (১৫.৩১ %) ক্লাসে অনুপস্থিত ছিল। অনুপস্থিতির হারে এগিয়ে খুলনার বিদ্যালয়গুলো। অবশ্য সশরীর অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বাড়ছে।

সৃজনশীলে পিছিয়ে বরিশাল
দেশে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়। মাউশির তথ্য বলছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন, এমন বিদ্যালয় আছে প্রায় ৬২ শতাংশ। এখনো অন্য বিদ্যালয়ের সহায়তায় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন ২৩ দশমিক ৩০ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর প্রায় ১৫ শতাংশ বিদ্যালয় পুরোপুরি বাইরে থেকে সৃজনশীলের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে।

অর্থাৎ ৩৮ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পুরোপুরিভাবে এখনো সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে বরিশালের বিদ্যালয়গুলো বেশি পিছিয়ে। বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও এই অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো এগিয়ে। বাইরে বলতে মূলত গাইড বই বা শিক্ষক সমিতির কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে।

স্বাস্থ্যবিধি মানায় ঢিলেঢালা
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। টানা প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন সশরীর ক্লাস হলেও মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানায় কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। কিন্তু এই প্রতিবেদনে এ ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা ভাব ফুটে উঠেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সাবান–পানিসহ ব্যবহার উপযোগী হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই ১১৪টি বিদ্যালয়ে। প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নেই ১৯১টিতে। আর প্রবেশপথে তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা নেই ৬৭২ বিদ্যালয়ে।

১৪ দফা সুপারিশ
প্রতিবেদনে বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার ও আইসিটি ল্যাব নিয়মিত ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়াসহ ১৪ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশের মধ্যে আরও রয়েছে—সব বিদ্যালয়ে দুর্বল শিক্ষার্থী চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ, সশরীর ক্লাসে আরও বেশি হারে উপস্থিতির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি।

ইউজিসি প্রফেসর ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী হাসিনা খান বলেন, দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে বিজ্ঞানাগার বা গবেষণাগার একেবারেই অপ্রতুল। নতুন শিক্ষাক্রমে আশপাশের পরিবেশ থেকেও বিজ্ঞান শেখার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এগুলো আপাতত বিকল্প হলেও বিজ্ঞানাগার বা গবেষণাগার ছাড়া চলবে না।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.